ফের সৌদি-ইরান উত্তেজনা: তেহরানের বিরুদ্ধে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষোদগার
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান সেদেশের একটি বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ইরানের বিরুদ্ধে ফের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পশ্চিম এশিয়ায় হস্তক্ষেপ ও অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন।
সম্প্রতি কুয়েতের যুবরাজ মাশআল আহমাদ জাবের আল সাবাহর সৌদি আরব সফরকে কেন্দ্র করে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগকে কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি বিষেদাগার করে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে ইরানের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য কুয়েত ও সৌদি আরব চেষ্টা চালাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তার এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা সম্প্রতি ইরানসহ প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় যে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তা থেকে তারা সরে এসেছেন এবং ফের ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে মেতে উঠেছেন।
দ্বিতীয়ত, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান বিরোধী বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এ অঞ্চলের অন্য আরব দেশগুলো সৌদি আরবের কাছে নিজেদের স্বাধীনতা বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত নয়। কুয়েতও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ইরান ইস্যুতে তারা সৌদি চাপের কাছে মাতা নত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান বিরোধী বক্তব্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক উল্টো। এ থেকে বোঝা যায় অন্য দেশের ব্যাপারে সৌদি কর্মকর্তাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত মত পার্থক্য রয়েছে।
চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, তিনি এমন সময় ইরানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেন যখন সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা কুদস শহর ও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে এবং ইরান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননের প্রতিরোধ শক্তিগুলো বিজয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া, সিরিয়ায় সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাশার আল আসাদের নিরঙ্কুশ বিজয় ওই দেশটিতে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য আরেকটি বড় আঘাত। এ অবস্থায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান বিরোধী বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকে মনে করছেন।
পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে, সম্প্রতি ইয়েমেনের যোদ্ধারা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান চালানোর পর এটাই প্রথম রিয়াদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইরানের বিষয়ে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হলেও ইয়েমেনিদের হামলায় সৌদি সেনারা লজ্জাজনকভাবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায় করায় এবং অনেকে মারা পড়ায় সৌদি কর্মকর্তারা খুবই ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় অযথা ইরানের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে সৌদি কর্মকর্তাদের উচিত ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত ন্যাশনাল সালভেশন সরকার ও তাদের নিয়ন্ত্রিত সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর শক্তির বিষয়টি উপলব্ধি করা এবং ইয়েমেনে গণহত্যা বন্ধ করা।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২