সৌদি কারাগারে ভয়াবহ অবস্থা: নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ: নায়েফ কী বেঁচে আছেন?

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সৌদি আরবের বিভিন্ন জেলখানায় আটক বন্দীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যারা অনেক বেশি নির্যাতিত তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দেশটির সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ।

এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব রয়েছে এবং কারাবন্দীদের সঙ্গে সৌদি সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্ব্যবহার রোধে তারা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। এমনকি কোনো মৌখিক প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছে না। এ থেকে সৌদি অপরাধযজ্ঞের প্রতি বৃহৎ শক্তিগুলোর সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কয়েকটি গণমাধ্যম পদচ্যুত সাবেক সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয় বলে খবর দিয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে নায়েফ মারাত্মক ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে এবং তাকে কোনো ওষুধই দেয়া হচ্ছে না। ফলে তার শরীরের ওজন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। অন্যদিকে মানসিক নির্যাতনের কারণে তিনি বিপর্যস্ত বলে জানা গেছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক ফরমান জারি করে অবৈধভাবে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার পরিবর্তে নিজের অদক্ষ, অযোগ্য ও অনুপযুক্ত পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন যুবরাজের পদে বসান। কেননা এই পদের ব্যক্তির জন্য পরবর্তী রাজার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সৌদি রাজা গত বছর মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং তার চাচা আহমাদ বিন আব্দুল আজিজকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে গ্রেফতার কোরে তাদেরকে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। মার্কিন টিভি চ্যানেল এনবিসি এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কারাগারে পাঠানোর পর তাদের ওপর এমনভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় যে তারা হাটার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিল। এও জানা গেছে বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সরাসরি নির্দেশে তাদের ওপর ওই নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

সৌদি আরবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কোনো কোনো  সংবাদ সূত্র এ কথা ফাঁস করে দিয়েছে যে সাবেক ক্রাউন প্রিন্স বিন নায়েফ গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এমনকি তার মৃত্যুর সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তার আইনজীবী এ ব্যাপারে গত বছর বলেছিলেন, নায়েফ অজ্ঞাত জেলখানায় আটক রয়েছেন এবং কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ও কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ছাড়াই তিনি কারাবাস করছেন।

'সৌদি লিক্স' নামে একটি সাইট একথা ফাঁস করে দিয়েছে যে বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নায়েফকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য এমন কৌশল নিয়েছেন যাতে ধীরে ধীর তার মৃত্যু হয় এবং এভাবে সবাইকে তিনি এটা বোঝাতে চান যে নায়েফের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অকথ্য নির্যাতনে যদি নায়েফের মৃত্যু নাও হয় তবুও তিনি আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন কিনা তাতে অনেক সন্দেহ রয়েছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি আরবের সমসাময়িক ইতিহাস বর্বরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পরিপূর্ণ। তাদের অনাচারের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে, ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান পিতার সহযোগিতায় শুধু যে ক্রাউন প্রিন্সের পদ দখল করেছেন তাই নয় একই সঙ্গে দেশটির রাজার ক্ষমতাও তিনিই দেখা শোনা করেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সৌদি সরকারের এতো অনাচারের পরও আন্তর্জাতিক সমাজ সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। আর এ সুযোগে সৌদি আরব ইয়েমেনে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/১৪  

• বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।