প্রেসটিভির বিরুদ্ধে ইউরোপ ও আমেরিকার এত ক্ষোভ কেন?
(last modified Thu, 08 Dec 2022 06:36:20 GMT )
ডিসেম্বর ০৮, ২০২২ ১২:৩৬ Asia/Dhaka

ফ্রান্সের স্যাটেলাইট কোম্পানি 'ইউটেলস্যাট' ইরানের ইংরেজি ভাষার নিউজ চ্যানেল 'প্রেসটিভি'র সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। টিভি চ্যানেলটির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যায় নিষেধাজ্ঞা মেনে 'ইউটেলস্যাট' এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

মিডিয়া জগতে পাশ্চাত্যের একাধিপত্য

মিডিয়া জগতে ইউরোপ ও আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যের শেকল ভেঙে একপেশে ও একমুখী সংবাদ প্রবাহের গতি মন্থর করতে যে গুটি কয়েক টিভি চ্যানেল সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে 'প্রেসটিভি' তাদের অন্যতম। ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যানেল হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই এ গণমাধ্যম সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জন্য চক্ষুশূল হিসেবে গণ্য হচ্ছিল। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশে তাদের নিজস্ব ভাষায় সত্য ও ন্যায়ের বাণী পৌঁছে যাবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য। এ কারণে এ পর্যন্ত নানা অজুহাতে প্রেসটিভির তৎপরতা সীমিত করার চেষ্টা হয়েছে। প্রেসটিভির মূল ওয়েব সাইট 'প্রেসটিভি ডট কম' বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে চ্যানেলটি এখন বিকল্প ঠিকানা ব্যবহার করে দর্শক ও পাঠক ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তৎপরতা চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রেসটিভির নামে কোনো চ্যানেল ও পেজ খুললেই তা ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। 

স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে প্রেসটিভির যাত্রা

বহু দশক ধরেই তথ্য সরবরাহে একাধিপত্য করছে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যম। আন্তর্জাতিক সংবাদের ক্ষেত্রে পশ্চিমা মিডিয়ার সরবরাহকৃত তথ্য ও বিশ্লেষণই সব সময় গুরুত্ব পেয়ে এসেছে বিশ্বের সর্বত্র। ২০০৭ সালে প্রেসটিভির সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর এই প্রবণতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। আমেরিকা ও ইউরোপের ভেতরের খবর নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে সম্প্রচার করতে শুরু করে প্রেসটিভি। আমেরিকায় বন্দুক সহিংসতার মতো নানা সংকটের খবর প্রাচ্যের মানুষের কাছে আগে খুব একটা পৌঁছাত না। এ কারণে এখন প্রাচ্যের দেশগুলোর পাঠক ও দর্শকেরা যখন জানতে পারেন গত ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেবল বন্দুক সহিংসতায় ৪৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তখন তাদের তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অনেকে প্রশ্ন করেন, আমেরিকাতে কি এমন সহিংসতা সম্ভব?

প্রেসটিভির মতো গুটি কয়েক স্বাধীনচেতা গণমাধ্যমের আবির্ভাব না হলে হয়তো গোটা বিশ্বের মানুষ জানতেই পারত না, ইরাক ও সিরিয়াসহ বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে আইএস বা দায়েশ লেলিয়ে দেওয়ার পেছনের মূল কারিগর ছিল আমেরিকা ও ইউরোপ। মানুষ জানতেই পারত না, ইসলাম ধর্মের লেবাসে আইএস নামের যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের সৃষ্টি করেছে খোদ আমেরিকা। অতি কৌশলে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। অর্থাৎ মুসলমানদের মাধ্যমেই মুসলমানদের ধ্বংস করা।

সত্য ফাঁসের বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের আতঙ্ক

পাশ্চাত্যের নানা অপকর্ম নিয়ে প্রেসটিভি সত্য অনুসন্ধানী তৎপরতা চালিয়েছে এবং এ সংক্রান্ত আসল রহস্য ইউরোপ ও আমেরিকার জনগণের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের সামনে ফাঁস করে দিয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দখলদার শক্তি ও যুদ্ধবাজদের জন্য এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে প্রেসটিভি।

প্রেসটিভি নামের এই কণ্ঠস্বর যাতে মানুষের কাছে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রেসটিভির প্রধান আহমাদ নওরোজি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীদের নিষেধাজ্ঞাসহ নানা তৎপরতা সত্ত্বেও টিভি চ্যানেলটি নানা উপায়ে কন্ঠহীনদের কণ্ঠস্বর প্রচারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে ঘিরে এখন নানামুখী লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপ। এটাকে হাইব্রিড যুদ্ধ বলা হচ্ছে। প্রেসটিভির কণ্ঠ স্তব্ধ করাও এই যুদ্ধেরই অংশ।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার মিথ্যা বুলি

ইরানের অভ্যন্তরে নানা অজুহাতে মানুষকে খেপিয়ে তোলার যে অপচেষ্টা চলছে তাতে ইউরোপ, আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের হস্তক্ষেপের নানা তথ্য-প্রমাণও পাশ্চাত্যের মানুষের সামনে স্পষ্ট করছিল এই মিডিয়া। প্রেসটিভির কণ্ঠ স্তব্ধ করার মাধ্যমে ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত সত্য এবং বাস্তবতাও আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। এ কারণে প্রেসটিভি ইউটেলস্যাট তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে 'মিডিয়া সন্ত্রাস' হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রেসটিভির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয়রা একদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছে, আর অন্যদিকে তাদের মতের সঙ্গে অমিল হলেই কোনো কথা ও চিন্তাধারার প্রকাশ বা প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছে।#

পার্সটুডে/এসএ/৮    

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ