জুলাই ২৫, ২০২৩ ১৩:২৪ Asia/Dhaka

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার মোকাবেলায় কিয়েভকে যখন পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর অন্যতম সদস্য পোল্যান্ড এবং আমেরিকা সামরিক সহযোগিতার মাত্রা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে তখন রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি নতুন হুমকির বার্তা দিয়েছে। এর বাস্তবায়নের অর্থ হল রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে একটি সরাসরি সংঘাত।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো গত রোববার বলেছেন যে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী ওয়াগনার পোল্যান্ডে প্রবেশের জন্য তার দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। গত রোববার সেন্ট পিটার্সবার্গে তার রুশ সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে লুকাশেঙ্কো বলেন, "ওয়াগনারের বাহিনী আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা বলে আমরা পশ্চিমে যেতে চাই। আমাদের এই কাজ করার অনুমতি দিন। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কেন পশ্চিমে যেতে চান এবং তারা বলছে যে তারা  ওয়ারশ, রেজেসোতে যেতে চাই।" 

লুকাশেঙ্কোর এসব কথাবার্তার মাধ্যমে আসলে পোল্যান্ডের প্রতি এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ সম্প্রতি পোল্যান্ড তার সীমান্তে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে বেলারুশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এবং একই সময়ে কিয়েভের পশ্চিমামুখী সরকারকে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে ইউক্রেনকে বড় আকারের সামরিক ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক শত্রুতার ইতিহাস থাকা পোল্যান্ড এখন ইউক্রেনের মাধ্যমে প্রক্সি  যুুদ্ধ চালিয়ে রাশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে।

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সমর্থন বিশেষ করে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সামরিক সংস্থার প্রচেষ্টা নতুন মাত্রা পেয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শুইগুর মতে গত ৪ জুন থেকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা আক্রমণের সময় ২৬ হাজারের বেশি সৈন্য এবং ৩ হাজারের বেশি সামরিক সরঞ্জাম হারিয়েছে। এমনকি পশ্চিমা উৎসগুলো স্বীকার করেছে যে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ প্রত্যাশার চেয়ে আরও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে না পারলে রুশ দখলে থাকা অঞ্চলগুলো শিগগিরি অদৃশ্য হয়ে যাবে। 

রাশিয়ার ‘ব্যাটল গ্রুপ সেন্টার’-এর কমান্ডার অ্যান্ড্রি মোরদেভিচ রোববার বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বড়জোর আগামী মাসের শেষ পর্যন্ত পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যেতে পারে। তবে শীতকালে তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না।

একই সময়ে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা যারা ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।  ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে তাদের আশাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন রোববার দাবি করেছেন যে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার পাল্টা আক্রমণে অগ্রগতি করছে। তবে মার্কিন উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী কলিন কল সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ প্রত্যাশার চেয়ে আরও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে।

আমেরিকা যেকোনো মূল্যে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় চায়। যদিও ইউক্রেনের জনগণকে এর খেসারত দিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় তা এমনকি ন্যাটোর আশপাশে হোক না কেন তা এই ন্যাটোর মতো এই বড় সামরিক সংস্থার জন্য লজ্জার বিষয়। এর ফলে রাশিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব ও ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটবে এবং যার  পরিণতিতে পশ্চিমা এবং ইউরোপীয়দের নিরাপত্তা ও  সামরিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। আর এই কারণেই মার্কিন নেৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি যে কোনো মূল্যে রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধে জয়ী হওয়া থেকে ঠেকাতে বদ্ধপরিকর। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের অফিসের পরিচালক কর্নেল লরেন্স উইলকারসন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ না হলে, আগামী বছরের মধ্যে ন্যাটো ভেঙে পড়বে।#

 

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ