কুদস দিবস ইহুদিবাদী অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের স্বাধীনতাকামীদের ঐক্যের সুযোগ
(last modified Fri, 28 Mar 2025 10:54:56 GMT )
মার্চ ২৮, ২০২৫ ১৬:৫৪ Asia/Dhaka
  • কুদস দিবস মানবতার জন্য ইমাম খোমেনি\\\'র (রহ.) পদক্ষেপ
    কুদস দিবস মানবতার জন্য ইমাম খোমেনি\\\'র (রহ.) পদক্ষেপ

পার্সটুডে-তেহরানে, ফিলিস্তিন ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের প্রতিনিধি নাসের আবু শরীফ বলেছেন: কুদস দিবস ঐক্য তৈরির একটি সুযোগ। এই দিন মুসলিম জাতি ফিলিস্তিন ইস্যুতে আল্লাহর সাথে তাদের অঙ্গীকার নবায়ন করে।

কুদস দিবস এ অঞ্চলে ইসলামী প্রতিরোধকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করেছে। মেহের নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, সুন্নি বা শিয়া যাই হোক না কেন, প্রতিরোধের সকল শাখা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে পবিত্র কুদসকে রক্ষা করা এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হল কুদস দিবসের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সমর্থন করা এবং দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলিদের প্রতিরোধ করা।

আন্তর্জাতিক কুদস দিবস হলো এমন একটি দিন যেদিন আমেরিকা এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের সকল অপকর্ম উন্মোচিত হয় এবং এই দিনে ধর্মীয় মূল্যবোধের পতাকা উত্তোলন করার পাশাপাশি জুলুম নিপীড়নকারীদের পতাকা গুটানো হয়।

আপাতদৃষ্টিতে কোনো কোনো মুসলিম দেশের নেতা ফিলিস্তিন এবং ফিলিস্তিনি স্বার্থের ব্যাপারে উদাসীন। তাদের নীরবতার সুযোগে নিপীড়নকারী, দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল নেপথ্যে সমর্থন ও সাহস পায়। যদিও ইমাম খোমেনী (রহঃ) বলেছিলেন: যদি মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং প্রতিটি মুসলমান এক বালতি পানি ঢেলে দেয়, তাহলে পুরো ইহুদিবাদী ইসরাইল পানির নীচে তলিয়ে যাবে এবং এই শাসনব্যবস্থা ডুবে যাবে। আন্তর্জাতিক কুদস দিবস হলো মুসলিম ঐক্য প্রদর্শনের একটি সুযোগ, যাতে বিশ্বকে দেখানো যায় যে তারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকী উদযাপনের এই বছরের কুদস দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ আল-আকসা তুফান, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা এবং গাজায় গণহত্যা সমর্থনকারী সরকারগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসিহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের বিদ্রোহ ইত্যাদিদ ঘটনা প্রবাহ বিশেষ গুরুত্ববহ।

এ প্রসঙ্গে, তেহরানে ফিলিস্তিন ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের প্রতিনিধি নাসের আবু শরীফ ইরানি মেহের সংবাদ সংস্থার সাথে এক সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। বিস্তারিত নীচে দেওয়া হল:

সাক্ষাৎকারের শুরুতে নাসের আবু শরীফ বলেন: নিঃসন্দেহে, এই বছরের আন্তর্জাতিক কুদস দিবস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ এই অঞ্চল ও বিশ্বের জটিল পরিস্থিতি, ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন এবং ট্রাম্পের ক্ষমতায় উত্থানের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে।

তিনি আরও বলেন: ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে আমরা কোনও বৈশ্বিক ব্যবস্থা লক্ষ্য করি নি বরং এক ধরণের বৈশ্বিক লটারি এবং বিতর্কের সাক্ষী হচ্ছি। আমরা এমন এক ভয়ংকর স্তব্ধ পরিস্থিতি দেখছি যা সকল আন্তর্জাতিক আইন এবং চুক্তিকে উল্টে দিয়েছে। আমরা আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ইহুদিবাদী প্রকল্পগুলোও প্রত্যক্ষ করছি।

তিনি বলেন, এ বছরের কুদস দিবস ফিলিস্তিনিদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টাকে একত্রিত করার একটি সুযোগ। কুদসের দিকে সকলের দৃষ্টিভঙ্গি ঘুরিয়ে নিতে হবে। ট্রাম্পের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি করা উচিত। ট্রাম্প মনে করেন তিনি বিশ্বের দেবতা হয়ে গেছেন এবং নিজেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তি বলে ভাবেন। এছাড়াও, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই, একটি ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছে। একইসঙ্গে আমরা কোনো কোনো আরব শাসনব্যবস্থাকেও দেখছি তারা ফিলিস্তিনি স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতেও কুণ্ঠা বোধ করছে না। এটা কেবল ঘৃণ্য কিংবা নিন্দনীয়ই নয় বরং অপমানজনক ঘটনাও বটে।

ফিলিস্তিন ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের এই প্রতিনিধি সাক্ষাৎকারে আরও বলেন: বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই জনগণের ওপর নির্ভর করতে হবে। বিশ্বে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংখ্যালঘু নই। সুতরাং আসুন আমরা আমাদের নিজস্ব শক্তির উপাদানগুলোকে পুনর্গঠন করি। আমরা আমেরিকা ও ইহুদিবাদী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু এ পথে অভ্যন্তরীণ কিছু বিরোধ আমাদের ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কুদস দিবস সেই বাধা-বিপত্তি দূর করে ঐক্য তৈরির দিন। কুদস দিবসে, সমগ্র মুসলিম জাতি ফিলিস্তিন ইস্যুতে আল্লাহর সাথে তাদের অঙ্গিকার পুনরায় নবায়ন করে।

নাসের আবু শরীফ আরও বলেন: ইমাম খোমেনী (রহ.) আন্তর্জাতিক কুদস দিবসের নামকরণ করে বিশ্বমানবতার কাছে একটি ইসলামী প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলেন। কুদস দিবস হলো ইসলামী চিন্তাদর্শ ভিত্তিক একটি দাওয়াত যা মুসলিম জীবনকে পরিচালিত করে। আন্তর্জাতিক কুদস দিবস পালনের জন্য ইমাম খোমেনির এই উদ্যোগের ফলে প্রতিরোধ অক্ষ তৈরি হয়েছে। ১৯২৪ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে আমাদের কোনো ইসলামী পরিকল্পনা নেই। মরহুম ইমাম ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন।

তিনি বলেন: কুদস ইস্যুটি রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। কুদস কোনও সাধারণ ভূখণ্ড নয়। কুদস বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের প্রথম কিবলা এবং এর একটি ধর্মীয় মর্যাদা রয়েছে। কুদস ছিল নবী (সাঃ) এর মিরাজে যাওয়ার পবিত্র স্থান। কুদস হলো মুসলিম জাতি এবং ইহুদিবাদীদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু। কুদস মুসলিম জাতিকে পথ দেখায়। আমেরিকা ও ইহুদিবাদী নীতির বিরুদ্ধে কুদস মুসলিম বিশ্বের শক্তির উপাদানগুলোকে নিজের চারপাশে একত্রিত করতে পারে।#

পার্সটুডে/এনএম/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।