আমেরিকার সাংবাদিক: ইসরায়েলি-মার্কিন হামলা ইরানিদের মধ্যে ঐক্যকে শক্তিশালী করেছে
-
যুদ্ধ বিষয়ক আমেরিকার প্রবীণ লেখক এবং সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন
পার্সটুডে- এক মার্কিন লেখক এবং সাংবাদিক স্বীকার করেছেন যে ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আক্রমণ দেশটির সার্বভৌমত্বকে তো দুর্বল করতে পারেই নি বরং অভ্যন্তরীণ সংহতি, জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং এই অঞ্চলে ইরানের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছে।
যুদ্ধ বিষয়ক আমেরিকার প্রবীণ লেখক এবং সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আক্রমণের প্রভাব, ইসলামী বিপ্লব গঠন এবং ইরানী জাতির প্রতি আমেরিকার শত্রুতার কারণগুলো উল্লেখ করে বলেছেন যে এই আক্রমণগুলো কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর "ইরানের সার্বভৌমত্ব উৎখাত" করার লক্ষ্য অর্জনে কেবল ব্যর্থ হয়নি বরং জাতীয়তাবাদ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতির এক মিল বন্ধন তৈরি করেছে।
সিএনএন নিউজ নেটওয়ার্কের উপস্থাপক এবং বিশেষজ্ঞ ফরিদ জাকারিয়ার সাথে এক সাক্ষাৎকারে অ্যান্ডারসন বলেছেন, ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব ছিল একটি ধর্মীয় আন্দোলন এবং একটি উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন। সেই সময়ে শাহ আমেরিকার একজন দাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং এই ধারণা বিপ্লব গঠনে এবং এর ধারাবাহিক সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
ইরানের ওপর সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক হামলার পরিণতির কথা উল্লেখ করে আমেরিকান সাংবাদিক আরো বলেন,"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলার পর ইরানের অভ্যন্তরে জাতীয় ঐক্যের এক ঢেউ তৈরি হয়েছিল। এই হামলার ফলে ইরানি জনগণ তাদের দেশের পতাকার চারপাশে জড়ো হয়েছিল।"
ইরানি স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি বা ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে যে প্রবীণ মার্কিন লেখক এবং যুদ্ধ বিষয়ে বিশ্লেষক অ্যান্ডারসন ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মাঝে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবস্থানের সমালোচনা করে বলেন, যখন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন তখন এটি ছিল ইরানি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার; এই ধরনের বক্তব্য তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত তো করেই নি বরং জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করেছে এবং ইসরায়েলের কৌশলের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি এটি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিপরীত প্রভাব পড়েছিল। ইরানের সার্বভৌমত্বকে উৎখাত করার ইসরায়েলের লক্ষ্য সত্ত্বেও এই দেশে জাতীয়তাবাদ এখন নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে।
তার বক্তব্যের অন্য একটি অংশে তিনি ইরান-মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যোগ করেন, ১৯৫৩ সাল থেকে যখন সিআইএ শাহকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল তখন শাহ সর্বদা "আমেরিকার রাজা" হিসাবে পরিচিত ছিলেন; এই স্পষ্ট নির্ভরতা ইরানে ক্রোধ এবং উপনিবেশবিরোধী মনোভাবকে আরো জোরদার করেছিল। শাহের ভুল ছিল যে তিনি বারবার "জিমি কার্টার" কে প্রকাশ্যে তার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করতে বলেছিলেন যদিও এই ধরনের সমর্থন বিক্ষোভকারীদের কাছে সবচেয়ে খারাপ বার্তা বহন করেছিল। অ্যান্ডারসন ইরানে ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের মধ্যে সংযোগের ঘটনাটির কথা উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেন যে ইরানি বিপ্লব ছিল এক ধরণের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের সূচনা যা আজ অনেক দেশে দেখা যায়। ইরান সরকার যদি সাম্প্রতিক আক্রমণগুলোকে ইসলামের উপর আক্রমণ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে তবে তারা এই সুযোগটি এই অঞ্চলে তার বৈধতা এবং প্রভাব সুসংহত করার জন্য ব্যবহার করতে পারে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।