ট্রাম্প এবং মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় আমেরিকার প্রত্যাবর্তন
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152468-ট্রাম্প_এবং_মধ্যযুগীয়_ব্যবস্থায়_আমেরিকার_প্রত্যাবর্তন
পার্সটুডে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এক মৌলিক পরিবর্তনের দিকে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কটাও এখন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ঘুরপাক পাচ্ছে।
(last modified 2025-09-30T08:53:58+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫ ১৬:৫৪ Asia/Dhaka
  • রাজকীয় গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
    রাজকীয় গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

পার্সটুডে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এক মৌলিক পরিবর্তনের দিকে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কটাও এখন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ঘুরপাক পাচ্ছে।

মার্কিন পত্রিকা ফরেন পলিসি সম্প্রতি লিখেছে- ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ঐতিহ্যগত ও আইনভিত্তিক ধারা থেকে সরে গেছে আমেরিকা।  সংবিধান অনুযায়ী যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, সেগুলো প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সমঝোতায় বিদেশি নেতাদের সঙ্গে সম্পাদিত হচ্ছে।

পার্সটুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সমঝোতা ও চুক্তিগুলো বাহ্যত কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো অনেকটা ব্যক্তিগত লেনদেনের মতো এবং এর কোনো দৃঢ় আইনগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই। এই পরিবর্তন মধ্যযুগীয় সেই প্রথার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে চুক্তিগুলো রাজাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

মার্কিন রাজনৈতিক ঐতিহ্য হলো- গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সেনেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট বা কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে, যাতে কোনো প্রেসিডেন্ট এককভাবে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে না পারেন। কিন্তু বর্তমানে বহু চুক্তি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সম্পাদন করা হচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট একাই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন—যে পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্যই মার্কিন প্রতিষ্ঠাতারা চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস ব্যবস্থা করেছিলেন।

এসব চুক্তি প্রায়ই আর্থিক বোঝা বা সামরিক প্রতিশ্রুতি তৈরি করে অথচ বাজেট ও যুদ্ধের ক্ষমতার প্রধান অংশ কংগ্রেসের হাতে। জনগণের প্রতিনিধিদের ভোট ছাড়া এই সমঝোতাগুলো অভ্যন্তরীণভাবে বৈধ নয় এবং আন্তর্জাতিক আইনেও এর স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে অনেক প্রতিশ্রুতি কার্যত ভঙ্গুর ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।

আরেকটি দিক হলো- বিস্তৃত গোপনীয়তা। অনেক সমঝোতা প্রকাশিত হয় না, এমনকি কংগ্রেস সদস্যরাও এদের বিস্তারিত জানেন না। এই পরিস্থিতি গোপন চুক্তিগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যা বিংশ শতাব্দীতে বহু আন্তর্জাতিক সংকট ডেকে এনেছিল।

সুস্পষ্ট উদাহরণ রয়েছে। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি এবং এল সালভাদর ও ঘানায় অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের সমঝোতাগুলো দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয়েছিল। এসব ইস্যুতে আদালতের মামলায় এমনকি সুপ্রিম কোর্টও নথির ঘাটতিতে ভুগেছে এবং শেষ পর্যন্ত সরকারের কার্যক্রম চালাতে অস্থায়ী রায় দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, আইনি স্বচ্ছতার অভাব গুরুতর বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।

এই ধারা অব্যাহত থাকা বিপজ্জনক, কারণ প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সমঝোতাগুলো আনুষ্ঠানিক চুক্তির বিকল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মানে হলো- হোয়াইট হাউসে প্রশাসন বদলালেই আমেরিকার বৈদেশিক প্রতিশ্রুতিগুলো ওলট-পালট হয়ে যাবে। মিত্রদের কাছে এটি অস্থিরতার সংকেত, আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে সুযোগ।

ইতিহাস বলছে- চুক্তি তখনই স্থায়ী হয় যখন এর পেছনে আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থন থাকে। অন্যথায় এগুলো অনেকটা অস্থায়ী সমঝোতার মতো, যা একজন ব্যক্তির ইচ্ছার পরিবর্তনে ভেঙে পড়ে। মার্কিন প্রতিষ্ঠাতারা সতর্ক করেছিলেন, চুক্তির ক্ষমতা যদি একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তবে দেশ ধীরে ধীরে এক নির্বাচিত রাজতন্ত্রে রূপ নেবে।#

পার্সটুডে/এসএ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।