কেন কলম্বিয়া তার অস্ত্র সরবরাহ নীতি পরিবর্তন করেছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152524-কেন_কলম্বিয়া_তার_অস্ত্র_সরবরাহ_নীতি_পরিবর্তন_করেছে
পার্সটুডে : ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর কলম্বিয়া সরকার প্রথম স্থানীয়ভাবে নকশা ও নির্মিত অ্যাসল্ট রাইফেল উন্মোচন করেছে।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫ ১৮:৩২ Asia/Dhaka
  • অ্যাসল্ট রাইফেল উন্মোচন করেছে কলম্বিয়া সরকার
    অ্যাসল্ট রাইফেল উন্মোচন করেছে কলম্বিয়া সরকার

পার্সটুডে : ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর কলম্বিয়া সরকার প্রথম স্থানীয়ভাবে নকশা ও নির্মিত অ্যাসল্ট রাইফেল উন্মোচন করেছে।

পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, কলম্বিয়া তার প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় নকশা ও নির্মিত অ্যাসল্ট রাইফেল উপস্থাপন করেছেঅ এই অস্ত্রটি ইসরায়েলি নির্মিত 'গালিল' রাইফেলের স্থলাভিষিক্ত হবে, যা ১৯৯০-এর দশক থেকে কলম্বিয়ায় সংযোজন করা হতো।

এর আগে পর্যন্ত, কলম্বিয়া লাতিন আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ছিল এবং তাদের সামরিক চাহিদার একটি বড় অংশ ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পূরণ করত। বিশেষ করে 'গালিল' রাইফেল, যা ১৯৯০-এর দশক থেকে কলম্বিয়ায় সংযোজন করা হতো যা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট 'গুস্তাভো পেত্রো', গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিষয়ে ইসরায়েলি নীতির তীব্র সমালোচনা করার পর, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ক্রয় বন্ধ হয়ে যায় এবং কলম্বিয়া সরকার অস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেনাবাহিনী যাতে জাতীয় সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করতে পারে তার জন্য অস্ত্রের উৎস নিশ্চিত করতে হবে বলে ঘোষণা করে পেত্রো কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি নতুন পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

এখন কলম্বিয়া যে নতুন রাইফেল উপস্থাপন করেছে, তা 'গালিল' রাইফেলের তুলনায় ১৫% হালকা এবং ২৫% সস্তা। এই সুবিধাগুলো না শুধুমাত্র খরচ কমানোতে সাহায্য করবে, বরং দেশের ভিতরেই অস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব করবে। যেহেতু এই অস্ত্রগুলো বিশেষভাবে কলম্বিয়ার ভৌগোলিক চাহিদার জন্য নকশা করা হয়েছে, তাই কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য এগুলো ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক সহজ হবে।

এছাড়াও, দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন কলম্বিয়ার অর্থনীতির জন্য অনেক সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন লাইন তৈরি করার জন্য শিল্প অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন, যা নিজেই জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই পদক্ষেপ দেশের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরেরও একটি সুযোগ তৈরি করে, যা আধুনিক প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ও অগ্রগতিতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, এমন অবস্থায় যখন অনেক দেশ আন্তর্জাতিক নীতি কারণে অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন কলম্বিয়াকে বাহ্যিক চাপ কমাতে এবং আমদানির উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক প্রেরণা ছাড়াও কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। বাস্তবে, এমন সাফল্য এই নীতিকে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও ছড়িয়ে দিতে পারে এবং দেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর থেকে আমদানির উপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। পাশাপাশি, সামরিক খাতে করা বিনিয়োগ নিজেই উৎপাদন, প্রযুক্তি এবং এই ক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের অবকাঠামো সম্প্রসারণে সাহায্য করে। যেমন বর্তমানে, কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো প্রযুক্তিগত ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা করে নতুন অস্ত্র নকশা করেছে এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তারা এই অস্ত্রের ৪০০,০০০ ইউনিট উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে।

এই পরিবর্তনগুলো কলম্বিয়ার অবস্থান লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে এবং এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও শক্তিশালী করবে, বিশেষত যখন কলম্বিয়া দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনে তার সফল অভিজ্ঞতা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তর করতে পারে।

তবে, যদিও কলম্বিয়ার এই পদক্ষেপ এই দেশের প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক নীতিতে একটি মাইলফলক হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে, তবে এটি অর্থায়ন ও প্রযুক্তির উৎস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা আঞ্চলিক মিথস্ক্রিয়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিক্রম করা সম্ভব।

কলম্বিয়ার অস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হওয়া লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মডেল হতে পারে বলে মনে হয়। এই প্রবণতা আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সম্প্রসারণের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং বাহ্যিক হুমকি ও বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে এই দেশগুলোর অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে। শেষ পর্যন্ত, এই পরিবর্তনের ভবিষ্যত সম্ভাবনা, রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও, কলম্বিয়া এবং পরবর্তীতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩০