প্যারিসে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও কঠোরতা বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ইউরোপে বিশেষত ফ্রান্সে ইসলাম বিদ্বেষের ঘটনা আগের মতোই অব্যাহত আছে। ফরাসি মুসলিমরা এখন তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছেন। তাদের ওপর চাপ ও সীমাবদ্ধতা আরও কঠোর করার সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।

ফরাসি সরকার একটি বিল পাস করতে যাচ্ছে। ওই বিলটি পাস হলে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা আরোপিত হবে এবং মুসলমানদের অনেকেই সম্ভাব্য সন্দেহভাজন হিসেবে পরিগণিত হবে।

ফ্রান্সে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলাম বিরোধিতা আরও তীব্র হয়েছে। সে দেশের অনেক মুসলমান নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের পবিত্র স্থানগুলোর অবমাননা করা হয়েছে। যারা এসব করেছে তাদেরকে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন তিরস্কার তো করেনই নি, বরং স্বাধীনতার নামে তাদের সমর্থনও করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ফরাসী সরকার "প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধি আইন" নামে একটি বিতর্কিত বিল প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। সরকার দাবি করছে যে এই বিলে অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে বিরোধের কোনো প্রসঙ্গ নেই বরং এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো স্বাধীনতা সুরক্ষা করা। বিলের পক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন দাবি করেছেন: লৈঙ্গিক সমতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মতো ফরাসী মূল্যবোধগুলোকে সহায়তা করার পাশাপাশি চরমপন্থাকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে এই বিল গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।

ম্যাক্রনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্লেষকরা বলছেন: এই বিলটি কার্যত ফরাসি মুসলিমদের ওপর বিধিনিষেধ ও সীমাবদ্ধতা আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য হলো, ফ্রান্সে আগে থেকেই এ বিষয়ে আইনি অনেক উপায় রয়েছে। সুতরাং নতুন এই আইনটি কেবল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধতা বাড়িয়ে তুলবে।

ইসলামো-ফোবিয়ার জাতীয় পর্যবেক্ষণ গ্রুপের প্রধান আবদুল্লাহ জিকরি একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০২০ সালে ফ্রান্সে ইসলামোফোবিয়ার কারণে ২৩৫ টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫৪ টি হামলার ঘটনা বেশি হয়েছে। একই বছর মসজিদে হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা পঁয়ত্রিশ ভাগ। এই সময়ের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ঘটনাও ছড়ানো হয়েছে ব্যাপকহারে। সেই সাথে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগ্রত করে-এমন ইমেল প্রেরণের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর।

সকল প্রকার প্রতিবাদ বিক্ষোভকে উপেক্ষা করে ফরাসী সংসদ সদস্যরা গত সপ্তায় প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধি আইনের খসড়ায় ভোট দিয়েছে এবং ফরাসী সংসদের উভয় কক্ষেই  বিলটি অনুমোদন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও ফরাসী বিক্ষোভকারীরা গতকালও ওই আইনটি বাতিল করাসহ দেশে স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ না করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন ম্যাক্রনসহ কয়েকজন ফরাসি কর্মকর্তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব দুর্নীতি করেছে সেসব ধামাচাপা দিতে এবং আসন্ন নির্বাচনে তাদের অবস্থান বজায় রাখতেই এ জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকতে পারেন।#

পার্সটুডে/এনএম/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।