নিষেধাজ্ঞায় বহু দেশ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোনো কোনো দেশের পক্ষ থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের বহু দেশের জনগণ উন্নয়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যেসব দেশ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তাদেরকে এ আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান অথবা নিষেধাজ্ঞার মাত্রা এতোটাই কমিয়ে আনা উচিত যাতে ওই দেশগুলোর উন্নয়ন ও মানবাধিকার ব্যহত না হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা তাদের বিবৃতিতে আরো বলেছেন, এসব অন্যায় ও অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কেবল ব্যক্তি কিংবা কোম্পানিগুলো ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এতে করে কেবল ওই দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে এবং জনগণ পিছিয়ে পড়ছে। শুধু যে নিষেধাজ্ঞা কবলিত দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয় বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এর ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের এ বিবৃতিতে পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করেই বক্তব্য দেয়া হয়েছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশ এবং নিষেধাজ্ঞাকে তারা নিজেদের অবৈধ লক্ষ্য হাসিলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ঘরে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা বিশেষ করে ব্রিটেনও ওয়াশিংটনের এ অন্যায় নিষেধাজ্ঞার শরীক। নানান অজুহাতে মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের কোনো কোনো দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে অথবা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে।
এমনকি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতো স্পর্শকাতর সময়েও ওয়াশিংটন অন্য দেশের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য খাতে নিষেধাজ্ঞা দিতেও পিছ পা হয়নি বরং বিশ্বব্যাপী এ দুর্যোগের সময় তারা নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরো বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অতীত সরকারগুলোর মতো বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিরোধী দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার নীতি বহাল রেখেছে। মার্কিন সরকার শুধু যে ইরানের বিরুদ্ধে গত প্রায় ৪০ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তাই নয় এমনকি রাশিয়া, চীন, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ওয়াশিংটন রাজনৈতিক, বাণিজ্য, নিরাপত্তা এমনকি মানবাধিকারের মতো বিষয়ে নানা মিথ্যা অজুহাত তুলে অন্য দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কেবলমাত্র নিজের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছে। যদিও বর্তমান বাইডেন প্রশাসন পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু এখনো প্রতিদ্বন্দ্বী এমনকি শরীক দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞার নীতি থেকে সরে আসেনি। মার্কিন এসব নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই একতরফা ও বেআইনি। কেননা এতে জাতিসংঘের কোনো অনুমোদন নেই।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ বহুবার মার্কিন এসব একতরফা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসলে মার্কিন এ স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বিশ্বের সব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যাতে পাশ্চাত্য তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের এ বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩