পাকিস্তান ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ সংবাদ সম্মেলন
আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে তালেবানকে শর্তের কথা জানালেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, মানবাধিকারের প্রতি আফগান তালেবানকে সম্মান দেখানোর উপর আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিষয়টি নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, তালেবানের এটা জেনে রাখা উচিত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিও তাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের একদিন পর ইসলামাবাদে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালেবানের ব্যাপারে এ বক্তব্য দিলেন। এ সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আফগানিস্তানে মানবাধিকার রক্ষা ও জাতীয় সরকার গঠন করবে কিনা সেটাই আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সমর্থন পেতে হলে তালেবানকে মানবাধিকার মেনে চলার যে শর্ত পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা থেকে ব্যক্তি ও সামাজিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি তালেবানদেরকে আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এবং সেদেশ থেকে মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর তারা কিভাবে দেশ শাসন করবে আফগানিস্তানের জনগণসহ আন্তর্জাতিক সমাজের এখন সেটাই প্রশ্ন।
আফগানিস্তানে গত দুই দশকে তালেবানের অতীত নৃশংস কর্মকাণ্ড ও আচরণের কারণে ওই দেশটির জনমনে এ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে ক্ষমতায় আসার পর তালেবান আদৌ মানবাধিকারের নীতিমালা মেনে চলব কিনা। রাজনৈতিক দলগুলোসহ আফগানিস্তানের সর্ব মহলে ব্যক্তি, সামাজিক, ধর্মীয় ও জাতিগত স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষিত হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও দুই দশক পর ক্ষমতায় এসে তালেবান তাদের অতীত নীতি ও কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু তারপরও জনমনে উদ্বেগ দূর হচ্ছে না। তবে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘গত দুই দশকে এই গোষ্ঠী অনেক বিজ্ঞ হয়েছে এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে’।
তালেবান মুখপাত্রের এ বক্তব্য থেকে তারা মানবাধিকারসহ সব ধর্ম, জাতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাসী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পাশ্চাত্যের কোনো কোনো কর্মকর্তা আফগানিস্তানকে সাহায্য বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তারা যদি মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখায় তাহলে তালেবানের ব্যাপারে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আসবে।
এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সমর্থন পেতে হলে তালেবানকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার যে শর্ত দিয়েছেন তার মাধ্যমে তিনি মূলত মানবাধিকার মেনে চলার ব্যাপারে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে তালেবানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তবে তালেবানও এটা বুঝতে পারছে যে অতীতের মতো বলদর্পিতা ও সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে দেশ শাসন করা সম্ভব নয়।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২