এপ্রিল ০৫, ২০২২ ১৮:১৮ Asia/Dhaka

মাহে রমজান এসেছে যখন, আসিবে ‘শবে কদর’, নামিবে তাহার রহমত এই ধূলির ধরার পর। এই উপবাসী আত্মা, এই যে উপবাসী জনগণ, চিরকাল রোজা রাখিবে না আসে শুভ ‘এফতার’ ক্ষণ।

বিশ্বনবী (সা.)'র রমজান সংক্রান্ত ভাষণ থেকে আমরা জানতে পারছি যে এই মাসে সবচেয়ে ভালো কাজ হল নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা। আমরা নিষিদ্ধ কাজ করি দুই কারণে। প্রথমতঃ নিষিদ্ধ কাজ কী কী তা জানা নেই ভালোভাবে। দ্বিতীয়তঃ জানা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর প্রতি ভয়, প্রেম ও লজ্জা না থাকার কারণে। অর্থাৎ কখনও কখনও আমরা জেনে-শুনেও নিষিদ্ধ কাজ করি। -শয়তান মহান আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল যে সে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেই। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দা বা দাসদের ওপর তোর কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। অর্থাৎ কেউ যদি প্রকৃত ইমানদার হয় তাহলে শয়তান তাকে পাপের জড়াতে পারবে না। তাই পাপ এড়াতে কেবল জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার জ্ঞানকে নিশ্চিত বিশ্বাসে বা দৃঢ় ঈমানে পরিণত করা।

কবরের আজাব, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি তথা সেখানে পাপের মাত্রার আলোকে পাপীদের কোটি কোটি বা লাখ লাখ কিংবা শত-সহস্র বছর ধরে আগুনে জ্বলার কথা জানা সত্ত্বেও অনেকেই পাপে জড়িয়ে পড়ে! এর কারণ পরকালের বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সুদৃঢ় ঈমানে রূপ নেয়নি। অনেকেই মানুষের লাশের পাশে থাকতে ভয় পায়। লোকটি মারা গেছে এটা জানার পরও এ বিষয়ে সুনিশ্চিত বিশ্বাস না থাকায় তারা ভয় পায়।

শয়তান অনেক সময় নানা কুযুক্তি তুলে ধরে আমাদের মনে যাতে আমরা নিষিদ্ধ কাজ বা পাপে জড়িত হই। যেমন, শয়তান এ কথা বলে যে, আরে তুমি তো অনেক ভালো কাজ কর!- তাই দু-একটা খারাপ কাজ করলে এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না! অথবা, আপাতত জরুরি প্রয়োজন বলে এই খারাপ কাজটি কর, পরে ক্ষমা চেয়ে নিবে আল্লাহর কাছে বা যার ক্ষতি করছি সে ভালো মানুষ বলে তার কাছে পরে ক্ষমা আদায় করা যাবে! কিংবা শয়তান বলে, আরে এটাতো খুবই ক্ষুদ্র বা ছোটোখাটো পাপ! অথবা আল্লাহ ছাড়া আপাতত অন্য কেউ তো তোমার এ পাপ কাজটি লক্ষ্য করছেন না ইত্যাদি।

আসলে এইসব কুযুক্তি বা কুমন্ত্রণা আমাদের ওপর জোরালো হয় ঈমানের দুর্বলতার কারণে এবং খোদা-ভীতি ও আল্লাহর ব্যাপারে যথেষ্ট মাত্রায় লজ্জা না থাকার কারণে। 

আমরা অনেক সময় ৪-৫ বছর বয়সের কোনো শিশুর সামনেও কোনো অন্যায় বা মন্দ কাজ করতে লজ্জা পাই কিংবা ভয় পাই এ কারণে যে এই শিশুটা কী ভাববে অথবা সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে আমার মন্দ কাজটির কথা হয়তো বলে দেবে! অথচ মহান আল্লাহ আমাদের সব কাজের খবর রাখছেন ও আমাদের দেখছেন বলে জানা সত্ত্বেও মহান আল্লাহকে আমরা ভয়ও করি না বা লজ্জাও পাই না তাঁকে! অর্থাৎ আল্লাহকে আমরা পাপ করার সময় শিশুর চেয়েও কম গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মনে রাখা উচিত পাপ যত ছোটোই মনে হোক না কেন তা-ও আল্লাহ দেখছেন এবং আল্লাহর সামনেই তা করা হচ্ছে।-তাই বলা হয় কোনো পাপকে ক্ষুদ্র মনে করা হলে তা আল্লাহর দরবারে বড় পাপ হিসেবেই ধরা হয়। আমরা কি কেউ অতি অল্প পরিমাণ মল-মূত্রও খেতে রাজি হব, কিংবা তীব্র ক্ষমতা-সম্পন্ন বিষ অল্প পরিমাণেও খেতে রাজি হব? সামান্য আগুন যেমন বিশাল খড়ের পাহাড় বা বনকে জ্বালিয়ে দেয়, তেমনি সামান্য পাপও পুরো ঈমানকে বরবাদ করে দিতে পারে। কারণ, যে মুহূর্তে মানুষ পাপ করে সেই মুহূর্তের জন্য মানুষ এক ধরনের কুফরিতে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে এই কুফরি বাড়তেই থাকে মনের দিক থেকে বাধা না পাওয়ার কারণে।

সুরা তালাকের প্রথম আয়াতের শেষাংশে ও দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। -

হযরত ইমাম বাকির -আ থেকে বর্ণিত হয়েছে, কেউ যদি যা জানে তার আলোকে কাজ করে তাহলে আল্লাহ তাকে এমন কিছু শেখাবেন যা সে জানে না। আমরা অনেকেই জানি বা শুনেছি যে বাবা মায়ের অবাধ্য হয় তার হায়াত ও রিজিক কমে যায়। আর এটা জানার পরও কি আমরা বাবা মায়ের কোনো নির্দেশ কি অগ্রাহ্য করতে পারি?

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।