এপ্রিল ০৬, ২০২২ ১৮:৫১ Asia/Dhaka

মাগফেরাতের সওদা নিয়ে/এলো মাহে রমজান সকল মাসের শ্রেষ্ঠ এ মাস/তৌহিদী ফরমান

গত পর্বের আলোচনায় আমরা পাপ কাজের পক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা সম্পর্কে কথা বলছিলাম। আমরা বলছিলাম যে, কোনো পাপকে দৃশ্যত ছোট মনে হলেও তা মনে করা উচিত নয়। কারণ, তা আল্লাহ দেখছেন। অনেক মানুষ মহান আল্লাহ মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বকে সব সময় হৃদয় দিয়ে অনুভব করে না বলে পাপে জড়িয়ে পড়ে। আমরা নামাজ পড়ার সময় বলছি আল্লাহু আকবার বা আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। অথচ নামাজ পড়ার পরই আবারও পাপে জড়িত হই! অর্থাৎ আল্লাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মুখে স্বীকার করা সত্ত্বেও কাজের বেলায় তার শ্রেষ্ঠত্বকে মানার পরীক্ষায় ফেল করছি। রমজানের রোজা এ ধরনের পরীক্ষায় ফেলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে কুপ্রবৃত্তিকে দমানোর অনুশীলনের মাধ্যমে। ঈমান তো কেবল মৌখিক স্বীকৃতি নয়। কাজেও তা প্রমাণ করতে হয়। তাই সবক্ষেত্রে মহান আল্লাহর আদেশকে শিরোধার্য করতে হবে।

আত্মশুদ্ধির অনন্য পথ হল রোজা রাখা। ইসলামী ধর্মতত্ত্বের ছাত্রদের এ বিষয়ে উপদেশ দিতে গিয়ে  মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছেন: রোজা রাখার অর্থ কেবলমাত্র খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা নয়, বরং মানুষকে পাপ থেকেও বিরত থাকতে হবে। যেভাবে পানাহার থেকে বিরত থাকো, ঠিক একইভাবে চোখ, কান এবং জিহবাকেও সীমালঙ্ঘন করা থেকে সংযত করো। এখন থেকে তোমাদের জিহ্বাকে অপরের সমালোচনা, গিবত, মন্দ কথা এবং মিথ্যা থেকে দূরে রাখো; হিংসা-জিঘাংসা এবং অন্যান্য শয়তানী বৈশিষ্ট্যকে নিজের অন্তর থেকে বের করে দাও। যদি পারো, আল্লাহ ছাড়া আর সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলো। প্রতারণা না করে নিষ্ঠার সাথে কাজ করো। মানুষ এবং জিনদের মধ্যে যেসব শয়তান আছে, তাদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলো। যদিও আমরা দৃশ্যত: এই মহামূল্যবান মর্যাদাকে আমাদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে পারি না, অন্ততপক্ষে এটুকু নিশ্চিত করার চেষ্টা করো যেনো তোমার রোজার সাথে কোনো পাপ না থাকে। তা না হলে তোমার রোজা ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক হলেও সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। 

আত্মশুদ্ধি ও সংশোধনের বিষয়ে ধর্মতত্ত্বের ছাত্রদের উপদেশ দিতে গিয়ে মরহুম ইমাম খোমেনী (র) আরও বলেছেন: কোনো কাজের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক হওয়া না হওয়া এবং সেই কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়া এই দুয়ের মাঝে বিরাট ব্যবধান আছে। যদি পবিত্র রমজান মাসের শেষে তোমাদের কথা ও কর্মে কোনো পরিবর্তন না আসে, তোমাদের আচার-আচরণ যদি রোজার মাসের আগের দিনগুলোর থেকে ভিন্ন না হয়, তাহলে এটা সুস্পষ্ট যে রোজার প্রকৃত তাৎপর্য তোমরা উপলব্ধি করতে পারো নাই। আর তোমরা যা করেছো, তা কেবলই দৈহিক রোজা।

এই মহান মাস, যে মাসে তোমাকে ঐশী উৎসবে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এসময়ে যদি তুমি খোদার ব্যাপারে মারেফাত (অন্তর্দৃষ্টি) অর্জন করতে না পারো, কিংবা অন্ততঃ নিজের ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে না পারো, তাহলে বুঝে নিতে হবে তুমি আল্লাহর দেয়া এই উৎসবে ঠিকভাবে অংশগ্রহণ করো নাই।

একই প্রসঙ্গে ইমাম খোমেনী (র) আরও বলেছেন: তোমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এই পবিত্র মাস, যা কিনা আল্লাহর মাস, যে সময়ে খোদার বান্দাদের জন্যে ঐশী দয়ার দরজা খুলে যায়। এবং কিছু বর্ণনা অনুযায়ী এ সময়ে শয়তানদেরকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়; আর এমন সময়ে যদি তোমরা নিজেদের সংস্কার করতে না পারো, আত্মশুদ্ধি করতে না পারো, নফস-এ-আমারাহ কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারো, নিজের স্বার্থপর কামনা-বাসনাকে দমন করতে না পারো, এই দুনিয়া ও বস্তুজগতের মায়া ত্যাগ করতে না পারো, তাহলে রোজার মাস শেষ হওয়ার পরে এগুলো অর্জন করা তোমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। তাই এই অপূর্ব দয়া শেষ হবার আগেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করো, আত্মসংস্কার করো, নিজেকে বিশুদ্ধ করে তোলো। রোজার মাসের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। একই প্রসঙ্গে মরহুম ইমাম  খোমেনী আরও বলেছেন:

এমনটা যেনো না হয় যে, রমজান মাস আসার আগেই শয়তান তোমাকে এমনভাবে আক্রান্ত করে ফেলেছে যে, যখন শয়তানকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে, তখন তুমি নিজে থেকেই নানারকম পাপকাজ ও ইসলামবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছো ! অনেকসময় খোদা থেকে দূরে সরে যাবার কারণে এবং বড় বড় গুনাহের কারণে সীমালঙ্ঘনকারী পাপী মানুষ অজ্ঞতা ও অন্ধকারের এতই অতলে নেমে যায় যে, শয়তানের আর তাকে প্ররোচিত করার প্রয়োজন হয় না, বরং সে নিজেই শয়তানের রং ধারণ করে। সিবগাত আল্লাহ হলো শয়তানের রঙের বিপরীত।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। অনেকেই মনে করেন এখানে ধৈর্য বলতে রোজা বা সংযমকে বোঝানো হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজা আত্মরক্ষার ঢালস্বরূপ।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।