রমজান: আত্মশুদ্ধির মহোৎসব (পর্ব- ৫)
আল্লাহ তোমার হাজার শোকর/দিলে মাহে রমজান অধম নাদান বান্দার তরে/তুমি যে মেহেরবান। রমজানের এই রহমতী মাস/মিটায় প্রাণের বেহেশতী আশ খোদা আমরা তোমার দাসানুদাস/চাই যে শান্তি সত্য জ্ঞান।
রমজানে পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে পাপের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কোনো কোনো পাপ সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। যেমন-মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন, জুয়া খেলা,তামাশা ও বিদ্রূপপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ, অপর মানুষের দোষ-ত্রুটি নিয়ে গল্প করা এবং সন্দেহবাদী ও নাস্তিকদের সাথে ওঠাবসা করা (আনিসুল লাইল, ইমাম জাফর সাদিক)
কোনো কোনো পাপ দুর্যোগ ডেকে আনে । যেমন-চুক্তি ভঙ্গ করা, লজ্জাজনক কাজ প্রকাশ করা,আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশের বিপরীত রায় দেয়া, জাকাত দিতে অস্বীকার করা বা বাধা দেয়া, মাপে কম দেয়া।
কোনো কোনো পাপ নিয়ামতগুলোকে গজবে পরিবর্তিত করে দেয় । যেমন-মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা, একজন আলেমকে চুপ করিয়ে দেয়া বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা, আল্লাহর রহমতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া এবং আল্লাহর সাথে শরীক করা, নিজের দারিদ্র প্রচার করা, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হওয়া ও আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। -কোনো কোনো পাপ দোয়া কবুল হবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন-বিকৃত ঈমান পোষণ, দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে অবিশ্বাস, ভাইয়ের প্রতি মোনাফেকি, সময়মত নামাজ না পড়া এবং পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন না করা। (প্রাগুক্ত)-কোনো কোনো পাপ দুর্ভাগ্য বা কষ্ট ডেকে আনে । যেমন- যারা কষ্টে আছে তাদের সাহায্য না করা, নির্যাতিত ব্যক্তি, যারা সাহায্য প্রার্থনা করছে, তাদের রক্ষার জন্যে অগ্রসর না হওয়া এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধের বিরোধিতা করা (ইমাম যাইনুল আবেদীন, আনিসুল লাইল।) কোনো কোনো গোনাহ আশাকে বিনষ্ট করে দেয় । যেমন- আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হওয়া,আল্লাহর ক্ষমাশীলতায় আস্থা না রাখা, আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কারো ওপর ভরসা করা এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে অবিশ্বাস করা। (ইমাম জাফর সাদিক)

আত্মসংশোধনের বিষয়ে মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছেন: আল্লাহ চান না মানুষ এমন রোগে আক্রান্ত হোক, যাতে কষ্ট অনুভূত হয় না। কারণ রোগে কষ্ট অনুভূত হলে মানুষ বাধ্য হয় প্রতিকার খুঁজতে, ডাক্তারের কাছে বা হসপিটালে যেতে, কিন্তু যে রোগে কোনো কষ্ট অনুভূত হয় না, তা আরও ভয়ানক। মানসিক অসুস্থতার কারণে যদি ব্যথা অনুভূত হতো, তাহলে সেই ব্যথার জন্য খোদার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো যেতো। কারণ মানুষ বাধ্য হয়ে শেষমেশ প্রতিকার খুঁজত। কিন্তু ব্যথাহীন এই ভয়ানক রোগের সমাধান কী ? অহংকার ও স্বার্থপরতার মত রোগগুলোতে কোনো বাহ্যিক কষ্ট নেই। এগুলো ছাড়াও অন্যান্য পাপ মানুষের হৃদয় ও আত্মাকে দূষিত করে ফেলে, কোনোরূপ ব্যথা অনুভূত হওয়া ছাড়াই। এসব রোগে যে শুধু ব্যথা অনুভূত হয় না, তা নয়, বরং এতে আনন্দও পাওয়া যায়। পরচর্চার আড্ডাগুলো খুবই আনন্দের ! নিজের প্রতি ভালোবাসা আর দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা, যা হল সকল পাপের মূল, তা-ও সুখকর। ড্রপসি রোগে আক্রান্ত রোগী পানির কারণেই মারা যায়, তবুও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পানি খাওয়াকে উপভোগ করে।
আত্মিক পরিশুদ্ধির বিষয়ে ইমাম খোমেনী-র. আরও বলেছেন: এটাই স্বাভাবিক যে, অসুস্থতার কারণে যদি মানুষ আনন্দ পায়, আর তাতে কোনো ব্যথা-বেদনাও না থাকে, তবে সে এর কোনো প্রতিকার খুঁজবে না। যতই তাকে সতর্ক করা হোক না কেনো যে এটা প্রাণঘাতী রোগ, সে বিশ্বাসই করবে না ! যদি কাউকে ভোগবাদিতা ও দুনিয়া-পূজার রোগে পেয়ে বসে, তবে দুনিয়া আর দুনিয়াবি জিনিস ছাড়া অন্য যেকোনো কিছুতেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহ না করুন, তখন সে হবে আল্লাহর শত্রু, আল্লাহর বান্দাদের শত্রু, নবী-আউলিয়াগণ ও আল্লাহর ফেরেশতাদের শত্রু। তাদেরকে সে ঘৃণা করবে। আর যখন খোদার তরফ থেকে ফেরেশতা তার জান কবজ করতে আসবে, তখন তার ঘৃণাবোধ হবে, কারণ সে দেখবে যে খোদার ফেরেশতা তাকে তার প্রিয়বস্তু তথা দুনিয়া ও দুনিয়াবি জিনিস থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
যারা আত্ম-সংশোধন না করে বা এই পথে সাধনা ও চেষ্টা-প্রচেষ্টা ছাড়াই অন্যদের সংশোধনের উপদেশ দেয় তারা যত ভালো কথাই বলেন না কেন তাতে কোনো ফল হয় না। কারণ তারা পরিণত হয়েছে শয়তানের দাসে। পবিত্র কুরআনে এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কেন সেই কথা বল যা নিজেরা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।
মহানবী-সা. একটি ছোট্ট শিশুকে বেশি মিষ্টি না খাওয়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে আগে নিজেই এ বিষয়ে নিজেকে সংযমী করতে এক সপ্তাহ বা কিছু দিন সময় নিয়েছেন।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৫