এপ্রিল ১৯, ২০২২ ১৭:১১ Asia/Dhaka

রমজান মুমিনের রহমতলুব্ধের/রমজান মুনাফিকের অতিশয় ক্ষুব্ধের। জীবনের যুক্তি/ সংযম বা পরিমিত আচারেই মুক্তি/ভেবে দেখো রমজান কতটুকু মুগ্ধের? (ইসলাম তরিক)

পবিত্র রমজান দোয়া কবুল হওয়ার সুবর্ণ সুযোগের মাস। কিন্তু এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা দোয়ার ফল প্রাপ্তির পথে বাধা হয়ে থাকে। তাই আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে এইসব বাধা অপসরণ করে দোয়াকে মহান প্রভুর মনঃপুত করা যায়।

শুধু বিপদের সময় দোয়া করাকে মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এমন এক শ্রেণীর মানুষের পরিচয় দিয়েছেন যারা কেবল বিপদে পড়লেই হলেই মহান প্রভুর পানে দোয়ার হাত তোলে। এই জাতীয় লোকদেরকে সুরা ইউনুসের ১২ নম্বর আয়াতে তিরস্কার করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন: আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায়, তখন মনে হয়, কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে সে যেন আমাকে ডাকেইনি।

যদি কেউ তার দোয়া কবুল হওয়ার প্রতি আস্থাবান হ’তে চায় তাহলে তার উচিত হবে সর্বাবস্থায় স্রষ্টাকে ডাকা। সুখের দিনে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং দু:খের দিনেও তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করার নীতিতে চলতে হবে। আর তাহলেই মহান প্রভু আমাদের দোয়ার প্রতি মনোযোগ দিবেন।

পাপকাজ থেকে বিরত না থাকা দোয়া কবুল না হওয়ার পথে আরেকটি বড় বাধা। অন্য কথায় দোয়া কবুল হওযার আরেকটি শর্ত হল পাপাচার থেকে দূরে থাকা। গোনার কারণেই অনেক মানুষের দোয়াই প্রভুর কাছে পৌছায় না। এ প্রসঙ্গে ইমাম বাকির (আঃ) বলেছেন: যখন কোন বান্দা আল্লাহর কাছে কোন কিছুর আবেদন করে তখন প্রভু প্রার্থনা অতি নিকট সময়ে অথবা একটু দেরীতে পূর্ণ করতে মনস্থ করেন। কিন্তু যখনই সে বান্দা কোন গোনার কাজ করে ফেলে তখন প্রভু তাঁর ফেরেশতাদের বলে দেন যে তার দোয়া মঞ্জুর করো না, তাকে বঞ্চিত কর, কেননা সে সীমা লঙ্ঘন করেছে। তাই তাকে বঞ্চিত করাই বাঞ্ছনীয়। [ওসাইলুশ্ শিয়া ৭খন্ড, ১৪৫পৃঃ; আল্ ইখতিসাস, ৩২পৃঃ; এবং মিশকাতুল আনোয়ার ২৭২ পৃঃ] দোয়া-ই-কুমাইল-এ আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ) বলেন: হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা দোয়া কবুল হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়

দোয়া কবুল হওয়ার আরেকটি শর্ত হ, অন্তর দিয়ে দোয়া করা। আবেদনকারীর মুখের ভাষার সাথে তার অন্তরের আকাঙ্ক্ষার মিল থাকতে হবে। কোন কোন ব্যক্তি দোয়া শুধু পাঠ করে যান কিন্তু দোয়ায় কি বলেন তা নিজেও বোঝেন না। আবার কখনো কখনো মুখে আবেদন করছেন এক জিনিসের, আর সে চিন্তায় ও মনে মশগুল হয়ে আছেন অন্য বিষয় নিয়ে। তিনি কি চাচ্ছেন নিজেই যদি না জানেন, না বোঝেন, তাহলে আজীবন এভাবে দোয়া করলেও এমন দোয়া তার জন্যে কোন ফল বয়ে আনবে না। এ প্রসঙ্গে ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেন: মহান প্রভু অন্যমনস্ক অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না। তাই যখন তোমরা কোন দোয়া করবে, অন্তর থেকে তা বের করবে, অতঃপর কবুল হওয়ার প্রতি আস্থাবান হবে। [ ওসাইলুশ্ শিয়া ৭খন্ড, ৫৪পৃ.।]

দোয়া গৃহীত হওয়ার আরেকটি শর্ত হল হালাল খাবার খাওয়া। তাই যারা হারাম অর্থ সঞ্চয় করে জীবিকা নির্বাহ করে বা হারাম খায় তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। এ প্রসঙ্গে ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেন: তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ চায় যে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করুন, তাহলে তার উচিত হালাল অর্থ উপার্জন করা এবং নিজকে ঋণ মুক্ত করা। কেননা যার পেটে হারাম খাবার থাকে বা, যে অন্যের অধিকারকে ফিরিয়ে দেয়নি তার দোয়া আল্লাহ কখনো কবুল করেন না। [ মুসতাদরাকুল ওসাইল ১৩খন্ড, ২৭ পৃঃ] আরো বলা হয়েছে এক লুকমা হারাম আহার কারো পেটে গেলে তা তাকে ৪০ দিন পর্যন্ত দোয়া কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত করে।

আজ ১৭ রমজান, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ-দিবস। দ্বিতীয় হিজরিতে সংঘটিত  এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের প্রথম সুসংগঠিত কোনো যুদ্ধ। কুরাইশ কাফিরদের বাণিজ্য কাফিলাকে বাধা দিতে ও তাদের সম্পদ আটক করতেই একদল মুসলিম মুজাহিদ বিশ্বনবীর (সা.) নেতৃত্বে মদিনা থেকে বেরিয়ে আসেন। কাফিররা মক্কায় মুসলমানদের অনেক সম্পদ আটক করে রেখেছিল। তাই এ ধরনের হামলার অধিকার মুসলমানদের ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হবে বলে মুসলমানদের কেউই ভাবেননি এবং সে জন্য প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু কুরাইশ কাফিরদের প্রধান নেতা আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্য কাফিলার ওপর মুসলমানদের হামলার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে সেই খবর মক্কার কাফিরদের জানালে অনেক কাফির নেতা উত্তেজিত হয়ে একটি সুসংগঠিত যুদ্ধের আয়োজন করে

এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা মক্কার সুসজ্জিত প্রায় এক হাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হন। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ যুদ্ধে কাফির বাহিনীর ৭০ জন মুজাহিদদের হাতে নিহত এবং তাদের ৭০ জন বন্দী হয়।

অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন হযরত আলী (আ.) তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও খ্যাতিমান যোদ্ধা এবারে শোনা যাক অর্থসহ ১৭ তম রমজানের দোয়া

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।