জুন ৩০, ২০২২ ১৭:৫৮ Asia/Dhaka

চমৎকার একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি এরকম: এই পা নিয়ে যেতে চাও সুদূর চীনে? গল্পটি হলো: একটা কচ্ছপ বিশাল এই পৃথিবীর ছোট্ট এক কোণে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করে আসছিল।

বয়সের ভারে জীবনের অভিজ্ঞতা তার কম হয় নি। বহু চড়াই উৎরাই দেখেছে জীবনে। এ কারণে অন্যান্য প্রাণীও কচ্ছপকে খুব সম্মান করতো এবং যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে কিংবা সমস্যায় তার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিতো।

যে-কোনো প্রাণীই বিপদ আপড়ে কচ্ছপের শরণাপন্ন হতো। লম্বা সময় ধরে তার সঙ্গে কাটাতো। সুযোগমতো নিজেদের সমস্যার কথাটা পাড়তো। কচ্ছপও বেশ ধৈর্যের সঙ্গে প্রাণীদের বিচিত্র সমস্যার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতো এবং তার দৃষ্টিতে সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান যেরকম মনে করতো, বলে দিতো। সকলেই তাই কচ্ছপকে বিজ্ঞ বলে অভিহিত করতো এবং তাকে খুব ভালোবাসতো। তবে একটা কাঁকড়া ছিল, সে কচ্ছপকে মোটেই পছন্দ করতো না। ওই কাঁকড়া আর কচ্ছপের ঘটনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে আজকের আসরের প্রবাদটি।

কেবল কাঁকড়াই তাকে পছন্দ করতো না। কচ্ছপ যে অনেক প্রবীণ এবং জীবনাভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এই বিষয়টা কাঁকড়া বরাবরই এড়িয়ে যেতো। সে বলতো: আমিও কচ্ছপের মতোই। তার মতোই হাত পা নেড়ে চলি। ও যেমন পানিতে বাস করে আবার শুকনো ডাঙাতেও বাস করে, আমিও তেমনি কখনও পানিতে বাস করি আবার কখনও স্থলে বাস করি। তবে আমার অনেক দাঁত আছে বেশ তীক্ষ্ণ সুচাগ্রের মতো। কচ্ছপের কিন্তু আমার মতো দাঁত নেই। আমি বেশ দ্রুত পথ চলতে পারি, প্রয়োজনে দৌড়তেও পারি কিন্তু কচ্ছপ তা পারে না। আমার এতো এতো গুণ থাকা সত্ত্বেও প্রাণীকূল কেন আমাকে এমনকি একটা সালামও দেয় না! তাদের কোনো বিপদ আপদে আমার কাছে আসে না! আমার কাছে পরামর্শ চায় না। আসলে অহংকারী কিংবা হিংসুক প্রকৃতির কাউকেই অন্যরা পছন্দ করে না। এ কারণেই কাঁকড়ার কাছে কেউ ঘেঁষতো না।

অথচ ওই ধীরগতির দন্তবিহীন কচ্ছপের কাছে সবাই যায় সমস্যা সমাধানের জন্য। তাকে সবাই সম্মান করে, মর্যাদা দেয়। এর পেছনে কী রহস্য রয়েছে-এই চিন্তা কাঁকড়াকে ভাবিয়ে তোলে। কাঁকড়া মনে মনে কচ্ছপকে তার ধারালো দাঁত দিয়ে কামড়ে দিতে চায়। তাকে এই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিতে চায়। বেশ কয়েকবার সে হামলা করেছেও। কিন্তু কচ্ছপের কঠিন শিলার মতো পিঠের আস্তরণ ভেদ করতে পারে নি কাঁকড়ার দাঁত। এ কারণে কাঁকড়া আরও বেশি বিরক্ত কচ্ছপের ওপর। কাঁকড়া কচ্ছপকে বিরক্ত করার জন্য বারবার আজেবাজে কথা বলে উত্যক্ত করতো। কচ্ছপ কাঁকড়ার কথা শুনতো ঠিকই কিন্তু না শোনার ভান করে একরকম এড়িয়ে চলে যেতো তার পথে।

কচ্ছপ আর কাঁকড়ার দিনকাল এভাবেই যাচ্ছিলো। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ একদিন একটা খরগোশ দৌড়াতে দৌড়াতে এলো কচ্ছপের কাছে। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বিস্ময়ের সঙ্গে কচ্ছপকে জানালো যে জঙ্গলে আগুন লেগেছে। মুহূর্তের মধ্যে সারা জঙ্গলে এই খবর রটে গেল। সবাই কচ্ছপের কাছে এসে জড়ো হলো উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় জানতে। কচ্ছপ খানিক ভেবে চিন্তে প্রাণীদের বললো: আমাদের সবার উচিত এখান থেকে সরে যাওয়া। বাতাসের তাড়নায় আগুন এখানেও চলে আসতে পারে। প্রাণীকূল ধীরে ধীরে ওই স্থান ত্যাগ করে সরে গেল। কেউ দ্রুত দৌড়াতে দৌড়াতে গেল, কেউ লাফিয়ে লাফিয়ে গেল কেউবা আবার তাড়াহুড়ো করে হামাগুড়ি দিয়ে কিংবা সাপের মতো এঁকেবেঁকে পার হলো।

কচ্ছপও আস্তে আস্তে পা বাড়ালো অন্য কোনো নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে। একমাত্র প্রাণী যে কিনা কচ্ছপের কথায় কান না দিয়ে হামবড়া ভাব নিয়ে স্থির বসে রইলো সে হলো ওই অহংকারী কাঁকড়া। সে বরং সবার পথ আটকে চীৎকার করে বলতে লাগলো: এই প্রাণীকূল! এই পশুর দল! কীরকম মূর্খ তোমরা!  নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে তোমরা চলে যাচ্ছো এক মূর্খ কচ্ছপের কথায়? কোথায় বাতাস যে আগুন নিয়ে আসবে এখানে? কিন্তু কোনো প্রাণীই কাঁকড়ার কথায় কান দিলো না। সকলেই যার যার মতো পথ পাড়ি দিলো মনোযোগের সঙ্গে। সর্বশেষ যে প্রাণীটি কাঁকড়ার পাশ দিয়ে গেল সে হলো কচ্ছপ। কচ্ছপকে দেখে কাঁকড়া হাসতে হাসতে বললো: তুই আবার কই যাস হে বৃদ্ধ কচ্ছপ! কচ্ছপ বললো: চীন যাবো!

কচ্ছপের কথায় কাঁকড়া কী প্রতিক্রিয়া দেখালো তা বলছি! আসলে কাঁকড়া বুঝতে পারে নি যে কচ্ছপ তাকে বোকা বানাচ্ছে। সে জানতো চীন অনেক দূরে। সুতরাং কচ্ছপ যে গতিতে পথ চলে তাতে তো তার দশ বছর লেগে যাবে। তাই সে কচ্ছপকে বললো: এই পা নিয়ে যেতে চাও সুদূর চীনে! এই বলেই কাঁকড়া মনের আনন্দে তিরস্কারের হাসি হাসলো। হাসতে হাসতে সে বললো: এইসব বেচারা প্রাণীদের দিকে তাকাও! আহা রে! কী বেআক্কেল এক কচ্ছপের কথায় ওরা নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে নিজেদের বাসভূমি ছেড়ে দিলো!

এদিকে জঙ্গল ছেড়ে পালানো প্রাণীরা একটু দূরের এক জায়গায় গিয়ে আবারও সুন্দরভাবে একত্রে জীবনযাপন করতে লাগলো। কিন্তু কাঁকড়ার কোনো খবরই আর পাওয়া গেল না মানে তাদের সঙ্গে কাঁকড়াকে দেখা গেল না। এর পর থেকে যে বা যারাই অলসতার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্দান্ত কাজ করতে চায় তাদের সম্পর্কে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়: এই পা নিয়ে যেতে চাও সুদূর চীনে?#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩০

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ