ডিসেম্বর ০১, ২০২২ ১৬:১১ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা!কথাবার্তার প্রাত্যহিক আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আজ ১ ডিসেম্বর বৃহষ্পতিবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। তারপর দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাব। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

  • ঢাকার কয়েকটি খবরের শিরোনাম
  • বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি ২০২২-কর্তৃত্ববাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ-প্রথম আলো
  • শিশু আয়াতের লাশের আরেকটি অংশ উদ্ধার-বাংলাদেশ প্রতিদিন
  • নির্বাচিত কলাম. খোলা চোখে ১০ই ডিসেম্বর কী হচ্ছে, কী হবে?-মানবজমিন
  • রিজার্ভ আরও কমলো-যুগান্তর
  • কাদের ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক, জানাতে হবে ওয়েবসাইটে: হাইকোর্ট–ইত্তেফাক
  • এক মাসে ২০৪ নারী-কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার-কালের কণ্ঠ
  • ‘ব্যাংকের কোথায় খারাপ’ না জানা অর্থমন্ত্রীকে কে দেবেন ‘লিখিত’-ডেইলি স্টার

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ‘হিন্দি আগ্রাসন’ বরদাস্ত নয়, বিক্ষোভের জেরে তামিলনাড়ুর স্টেশনের সাইনবোর্ডে সরল হিন্দি শব্দ-সংবাদ প্রতিদিন
  • ধোপে টিকল না শুভেন্দুর আপত্তি, ‘শান্তিকুঞ্জে’র সামনে অভিষেকের সভার অনুমতি দিল হাই কোর্ট-আজকাল
  • দেশকে নেতৃত্ব দেবে বাংলা!’ মন্তব্য রাজ্যপাল বোসের, ধনখড়-পর্বের তিক্ততা মোছার ইঙ্গিত?-আনন্দবাজার পত্রিকা

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবারে বিশ্লেষণে যাচ্ছি। 

বিশ্লেষণের বিষয়:

১. ‘নয়াপল্টনেই সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি’- এমন খবর দিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো। এ নিয়ে বেশ একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে?

২. সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

বিশ্লেষণের বাইরের কয়েকটি খবর:

বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি ২০২২-কর্তৃত্ববাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ-প্রথম আলো

বিশ্বে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কর্তৃত্ববাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান হয়েছে। ‘দ্য গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২২’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসট্যান্স (আইডিইএ)।

গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া ও কাজাখস্তানকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলোতে যেসব আইন করা হয়েছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। বলা হয়েছে, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সাইবার হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষার কথা বলে এই আইনের আওতায় অনলাইন কনটেন্টকে নিশানা করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের পর থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তত ১৫টি দেশ বাক্‌স্বাধীনতা দমনে, বিশেষত অনলাইনে মতপ্রকাশ ঠেকাতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এ অঞ্চলে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে, পক্ষান্তরে কর্তৃত্ববাদী শাসন সংহত হচ্ছে। এ অঞ্চলের মাত্র ৫৪ শতাংশ মানুষ গণতান্ত্রিক পরিবেশে আছে। আফগানিস্তান ও মিয়ানমার গণতন্ত্রের পতনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেও ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও তাইওয়ানের মতো দেশেও গণতন্ত্র ঝুঁকিতে আছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অর্ধেকেই গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকট এটাকে ত্বরান্বিত করছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সবচেয়ে বেশি মাত্রায় খারাপ হয়েছে এমন দেশের তালিকায় এবার যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় অন্য দেশগুলো হলো ব্রাজিল, হাঙ্গেরি, ভারত, মরিশাস ও পোল্যান্ড।

রিজার্ভ আরও কমলো-যুগান্তর

সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে কমছে রিজার্ভের অংক। বুধবার দেশের রিজার্ভ ৩ হাজার ৩৮৬ কোটি (৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হিসাব করা হলে রিজার্ভ আরও ৮ বিলিয়নের মতো কম হবে। সে হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে ২৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ডলারের খরচ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে নতুন এলসি খোলা কমেছে। তবে বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগের খোলা এলসির দায় এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমেনি। যে কারণে দিন দিন ডলারের সংকট বাড়ছে। চাপে পড়ছে অর্থনীতি।

এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো ৯৭ টাকা দামে প্রতি ডলার বিক্রি করছে। যদিও পণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের দাম নিচ্ছে ১০২ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম দিচ্ছে ১০৪ টাকা। আর রপ্তানি নগদায়নের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ধরা হচ্ছে ১০২ টাকা ৪৮ পয়সা। এদিকে বাংলাদেশের কাছে তাদের বৈদেশিক ঋণের সব তথ্য চেয়েছে আইএমএফ।

এক মাসে ২০৪ নারী-কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার-কালের কণ্ঠ

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ২০৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৮ কন্যাশিশুসহ ৪৩ জন। আর তাদের মধ্যে ছয় কন্যাশিশুসহ ১২ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাশিশুসহ দুজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এক মাসে ২০৪ নারী-কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার
Image Caption

এ ছাড়া ছয় কন্যাশিশুসহ আটজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তারা। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১০ কন্যাশিশু। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ১১ কন্যাশিশু। পাঁচ নারী ও কন্যাশিশু পাচারের শিকার হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে একজন। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আটজন। তাদের মধ্যে একজনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তিনজন। দুজন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে ছয় কন্যাশিশুসহ ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১১ কন্যাশিশুসহ ২৪ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৯ কন্যাশিশু অপহরণের শিকার হয়েছে এবং একজন কন্যাশিশু  অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছে। তিনজন কন্যা সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচজন কন্যাসহ ১০ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

রাজনীতির খবর: নির্বাচিত কলাম. খোলা চোখে ১০ই ডিসেম্বর কী হচ্ছে, কী হবে?-মানবজমিন

আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এই মাসেই অর্জিত হয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়। বিজয়ের এই মাসে বিজয় দিবসকে ঘিরে নানা আয়োজন থাকে সারা দেশেই। উৎসবের আমেজ বিরাজ করে দেশজুড়ে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করবে। ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি যে সমাবেশ আহ্বান করেছে সেটি স্র্রেফ রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবেই পালিত হবে এটি আমাদের প্রত্যাশা। এই সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের সহিংসতা-সংঘাত কারোরই কাম্য নয়। আমরা আশা করবো বিএনপি এই সমাবেশের মাধ্যমে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরা পর্যন্তই সমাবেশের আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখবে। একই সঙ্গে গরম বক্তব্য ও হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারের দলের পক্ষ থেকে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করাও কারও কাম্য নয়। এই মুহূর্তে যেকোনো ধরনের সংঘাত হিংস্রতার সূত্রপাত হলে এর দায় কিন্তু দুই দলের ওপরই পড়বে। আর এর বড় শিকার হবে সাধারণ মানুষ।

কি হবে ১০ ডিসেম্বর?

১০ই ডিসেম্বর কী হবে, কী হচ্ছে। এমন প্রশ্ন চারদিকে। সারা দেশে ধারাবাহিক সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সবশেষ ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে এদিন। কেউ বলছেন, ১০ লাখ। কেউ বলছেন ৩০ লাখ নেতাকর্মী জমায়েত হবেন ঢাকায়। এই কর্মসূচির এক মাস আগে থেকে আলোচনায় সমাবেশকেন্দ্রিক নানা বিষয়। এখন চলছে অনুমতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি। ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ করতে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিয়েছে। সঙ্গে ২৬টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ডিএমপি’র পক্ষ থেকে এই অনুমতি দেয়ার পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষণা না দেয়া হলেও নেতারা বলছেন, তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি  চেয়েছিলেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, এর আগেও নয়া পল্টনে দলের অনেক সমাবেশ হয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ হয়েছে। যেহেতু নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসবেন তাই নয়া পল্টনের আশপাশে আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেলসহ আরও অনেক সুবিধা পাবেন তারা।

 সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে হলে এসব সুবিধা তারা পাবেন না। এতে অনেকে সমস্যায় পড়তে পারেন। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও সমাবেশের স্থানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা নয়া পল্টনেই সমাবেশ করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এমন অবস্থায় বিএনপি আবার আবেদন করতে পারে নয়া পল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে। ডিএমপি অনুমতি দেবে কি দেবে না সেটি নির্ভর করবে সরকারের মনোভাবের ওপর। তবে আপাত দৃশ্যে মনে হচ্ছে সরকার বিএনপিকে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানেই রাখতে চায়। বিএনপি যাতে সমাবেশ করতে পারে এজন্য আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ দুই দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সরকার বিএনপি’র সমাবেশে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের বাধা দিতে চায় না। তবে সমাবেশের লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ ও সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয় তা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে সোহ্‌রায়ার্দীতে সমাবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

 পাশপাশি সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চান সেটাও সম্ভব হবে না। সরকার এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বিএনপিকে সোহ্‌রাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো বিএনপি কি সরকারের দেয়া সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে নাকি তাদের ঘোষণা অনুযায়ী নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। তবে বিএনপি এ পর্যন্ত কঠোর কোনো বার্তা দেয়নি। বলা হচ্ছে দলের স্থায়ী কমিটির সামনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকে সমাবেশের স্থানের বিষয়ে নেতারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।  দুই দলের এই পাল্টাপাল্টির মধ্যে মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে নানা শঙ্কা। ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে বিএনপি কী ঘোষণা দেবে। কী আল্টিমেটাম দেবে সেটা অবশ্য নেতারা গোপন রেখেছেন। তবে এটা স্পষ্ট যে, এই সমাবেশ থেকেই পরবর্তী দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে দলটি। একইসঙ্গে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর ঘোষণাও আসতে পারে এই সমাবেশ থেকে। রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্মসূচি ঘোষণা, আল্টিমেটাম দিতে পারেই যে কোনো দল। বড় দল হিসেবে বিএনপি তেমন কিছুই হয়তো করবে। কিন্তু সরকারের তরফে বার বার শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সহিংসতা হলে জবাব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। রাজধানীর পাড়ায় পাড়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা পাহারা বসাবেন এমন কথা বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বলা হচ্ছে ১০ই ডিসেম্বর খেলা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন  ‘খেলা হবে’কে স্লোগানের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সভা-সমাবেশে তিনি প্রতিদিনই ‘খেলা হবে’- বলে স্লোগান দিচ্ছেন। সরকারের দলের পক্ষ থেকে নানা আশঙ্কা প্রকাশ, তাদের তরফে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার কথা বলার কারণেই বাড়ছে উত্তাপ-উত্তেজনা। 

 সাধারণ মানুষের মনেও দানা বাঁধছে নানা শঙ্কা। আসলে ১০ই ডিসেম্বর কী হচ্ছে, কী হবে এমন প্রশ্ন করছে নানাজন।  গত অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। এ পর্যন্ত ৮টি সাংগঠনিক সমাবেশ করেছে দলটি। এসব সমাবেশ ঘিরেও হয়েছে নানা আলোচনা। একদিনের সমাবেশ গড়িয়েছে দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত। কুমিল্লার সমাবেশ ছাড়া প্রায় প্রতিটি সমাবেশের এক বা দুই দিন আগে থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খোঁড়া অজুহাতে। একই দাবিতে একই বিষয়ে পরিবহন ধর্মঘট ঢাকা হয়েছে ঠিক বিএনপি’র সমাবেশের আগের সময়ে। এমন পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দেশকি তাহলে বিএনপি চালায়। বিএনপি’র সমাবেশের আগে ধর্মঘট দিয়ে দাবি আদায়ের আওয়াজ তোলা মানে বিএনপি’র কাছে দাবি করা। অথচ এই সময়ে আওয়ামী লীগও বিভিন্ন জেলায় সভা- সমাবেশ করলেও তাদের সমাবেশের আগে কোনো ধরনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকতে দেখা যায়নি। এছাড়া সমাবেশের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছে দলটি। কিন্তু হয়ে যাওয়া সমাবেশগুলোতে লোক সমাগম নিয়ে চাঙ্গা দলের নেতাকর্মীরা।

 তারা বলছেন, কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে সাধারণ মানুষ ব্যাপকহারে সমাবেশে অংশ নেয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নেতারা। এই ধারা সামনেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা। হয়ে যাওয়া সমাবেশের বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপি নেতারা ঢাকায় ব্যাপক লোকসমাগমের আশা করছেন। এজন্য তারা সে ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।  এখন কথা হচ্ছে অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের ক্ষেত্রে যে দৃশ্য দেখা গেছে ঢাকায়ও কী এমন কিছু দেখতে হবে। সমাবেশের আগে বাস বন্ধ হবে। হোটেল বন্ধ থাকবে। রাজধানীর প্রবেশ পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দেবেন। এ ধরনের চেষ্টা হলে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা কিন্তু বেড়ে যাবে। বিএনপি আগে থেকেই বলছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। বাইরেও বলাবলি ছিল। ১০ই ডিসেম্বর সমাবেশ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তায় বসিয়ে দেবে। তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে অবস্থান ঘোষণা করবে। এমন আলোচনা ও গুঞ্জনেরও জবাব দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতোই এই সমাবেশ হবে। এটি ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ।

 সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।  বিএনপি’র সমাবেশে বাধা এবং আগে থেকে পরিবহন বন্ধ করার বিষটি সরকার এবং সরকারের দলের জন্য কোনো সুফল আসলে আনছে না। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমনটি বলা হয়েছে। বরং আগে থেকে পরিবহন বন্ধ করায় বিএনপি’র সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়ছে না। উল্টো সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে দল এবং সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের  নেতারাও বলছেন, বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোনো বাধা দেয়া হবে না। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি’র সমাবেশে বাধা দেবে না সরকার। তাদের সমাবেশের আশেপাশেও যাবে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে পাড়া- মহল্লায় সতর্ক পাহরায় থাকবেন দলের নেতাকর্মীরা।  গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী দলের সর্বশেষ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিএনপি’র সমাবেশে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট দেয়া নিয়েও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগ এবং সরকারের সমর্থন না থাকলে এই ধরনের ধর্মঘট দিয়ে মানুষের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনছে কারা। কারা কি উদ্দেশে এই ধর্মঘট দিচ্ছে।  

কাদের ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক, জানাতে হবে ওয়েবসাইটে: হাইকোর্ট-ইত্তেফাক

হাইকোর্ট

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঋণ মঞ্জুরের চিঠি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘কোনো ব্যাংক চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না’ এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আদালত বলেন, ব্যাংকের টাকা যেহেতু জনগণের টাকা, সেহেতু জনগণের টাকা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, তা জানার অধিকার তাদের আছে। রায়ে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে।

১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে নতুন আরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আদায় করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে স্যাংশন লেটারে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সকল ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করবে এবং নিয়মিত বিরতিতে তা দেখাশোনা করবে।

এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ব্র্যাক ব্যাংকের একটি চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে রায় দেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। একইসঙ্গে বর্তমানে বিচারিক আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নেওয়া হচ্ছে, সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

‘ব্যাংকের কোথায় খারাপ’ না জানা অর্থমন্ত্রীকে কে দেবেন ‘লিখিত’-ডেইলি স্টার

তিনটি ব্যাংক থেকে  প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা সন্দেহজনক ঋণ নেওয়া হয়েছে

ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা সন্দেহজনক ঋণ নেওয়া হয়েছে। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত 'ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর' শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংকে থেকেই প্রায় ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, 'ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ, লিখিত দিয়ে যান, আমরা খতিয়ে দেখব।'

আজ ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপটি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ, এস আলম গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নিজ প্রতিষ্ঠান ও তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া।

ইসলামী ব্যাংকের ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ তদন্তে গত সোমবার কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাবিল গ্রুপসহ ৮ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছাড় বন্ধ রাখতে বলেছে কমিটি।

এই যে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া হলো, ব্যাংক কি ঋণ দেওয়ার আগে সেসব যাচাই-বাছাই করেনি? দেশে ডলার, টাকা, গ্যাস, জ্বালানিসহ নানা ধরনের সংকট চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। সরকার দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে জনগণকে কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলছে। অন্যদিকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকার সন্দেহভাজন ঋণ আলোচনায় এলো। সরকার কি তাহলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না নাকি চাইছে না? আবার প্রতিবেদন প্রকাশের পরেও অর্থমন্ত্রী লিখিতভাবে দিতে বলেছেন। তার মানে অর্থমন্ত্রী কি আসলেই জানেন না যে ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ?

দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদের সঙ্গে।

তাদের মতে, এসব ঘটনার পেছনের অবশ্যই সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় আছে। অন্যথায় বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নেওয়া যেত না।

অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়ার জন্যই অর্থমন্ত্রী এ ধরনের মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, 'এ ধরনের অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করে তিনি সমস্যা এবং সেগুলো সমাধানের পথ আরও জটিল করে দিচ্ছেন। এসব মন্তব্য কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তার দায়িত্ব অন্যরা পালন করবে, সেটা তিনি কীভাবে আশা করেন? ব্যাংকের অবস্থা কোথায় খারাপ সেটা বের করার দায়িত্ব তো তার। সেটা সাংবাদিকরা কেন লিখিত দেবে? এর আগে পুঁজিপাচারের ঘটনাও তিনি লিখিতভাবে দিতে বলেছিলেন। নিজের দায়িত্ব পালন না করে অন্যকে এসব কথা বলার কোনো মানে হয় না।'

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, 'যারা এভাবে ঋণ নিচ্ছে, তাদের রক্ষা ও আড়াল করাটাই অর্থমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব হিসেবে মনে করছেন। যেসব তথ্য সামনে আসছে, সাংবাদিকরাই সেগুলো দিচ্ছে। কিন্তু, এসব তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের, বাংলাদেশ ব্যাংকের ও সরকারের। এখন এসব বিষয়ে যদি তাদের বোধোদয় না হয়, তারা যদি দেখেও না দেখার ভান করে, অস্বীকার করে এবং দেখতে না চায়, এতেই প্রমাণ করে যে, যারা এভাবে ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি করছে, অর্থপাচার করছে, তারা সরকারের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ নিয়েই কাজগুলো করছে এবং সরকার ও অর্থমন্ত্রী এই লুটেরাদের প্রধান অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায়।'

ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ নেওয়ার ঘটনা সুপরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দেশের ব্যাংকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলেও অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। ১ লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলেও ব্যাংকে এনআইডিসহ প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ব্যাংক সেসব যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিয়ে থাকে। সেরকম একটা অবস্থায় হাজারো কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে, অথচ তাদের নাম-ঠিকানার ঠিক নেই। যেকোনো বড় অঙ্কের ঋণ নিতে গেলে অনুসন্ধান হয়। ব্যাংকের নির্দিষ্ট টিম আছে এর জন্য। সে টিম সব যাচাই-বাছাই করে তারপর ঋণ অনুমোদন দেবে, যাতে ঋণ ফেরত আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কিন্তু, আমরা দেখেছি যে, অনামি কিংবা সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সহজেই বোঝা যায় যে, এগুলো সুপরিকল্পিত।'

'ব্যাংকে যারা নীতি-নির্ধারক এবং তাদের যারা নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন: বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়— সবার যোগসাজশ না থাকলে এ ধরনের কাজ একের পর এক হওয়া সম্ভব নয়। বছরের পর বছর এ ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সর্বশেষ ইসলামী ব্যাংকে যে ঘটনা ঘটল, এখানে বিষয়টি আরও পরিষ্কার যে মালিকানা পরিবর্তন ও যথেচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, এতে বোঝা যায় যে, জনগণের টাকার যথেচ্ছা বিতরণ-লুণ্ঠন হয়েছে। এটা উদ্দেশ্য হিসেবেই ছিল। এটা আকস্মিক বা অনিচ্ছাকৃত নয়', বলেন তিনি।

সরকারের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অনিয়ন্ত্রিত লুণ্ঠন ও সেই অর্থ বিদেশে পাচার দেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। 'কৃচ্ছ্রতাসাধন বা দুর্ভিক্ষসহ নানা ধরনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ক্ষমতাহীন নাগরিকদের জন্য। আর ক্ষমতাবানদের ক্ষেত্রে ঋণখেলাপি হওয়া বা সম্পদ পাচার করা, আমলাদের বিদেশ সফর, মন্ত্রী-সচিবদের সম্মিলিত ভোগবিলাস, সব কিছুই চলছে। এখানে কৃচ্ছ্রতাসাধন নেই। তার মানে হলো একটা সংকটের কথা বলে জনগণকে নিরস্ত করা, যাতে জনগণ তাদের অধিকার না পায়। যেমন: বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যে দাম বাড়িয়েছে। এগুলোকে রেশনালাইজ করতে কিংবা জনগণ যাতে এগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ না হয়, সেজন্যই যুদ্ধসহ নানা কিছু বলে কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, এ অবস্থার আড়ালে সরকারের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী ঠিকই অধিক হারে লুণ্ঠন ও সম্পদ পাচার করছে। ঋণখেলাপিদের যে টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামে যে টাকাটা তোলা হয়েছে, এই টাকা তো দেশে নেই, বিদেশে চলে গেছে। ডলার করে এগুলো বিদেশে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো আড়ালের জন্যই কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা বলা হচ্ছে।'

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা 'সন্দেহজনক' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকে পরপর ২ জন আমলাকে গভর্নর বানানো হয়েছে। আমলাদের দায়িত্ব বা কাজের ধরন হচ্ছে, তারা উপরের আদেশ পালন করে। গত কিছুদিনে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো পরিচালনার দায়িত্ব কিছু গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, কোনো ধরনের মনিটরিং নেই এবং ঋণখেলাপিদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে বিভিন্ন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তাতে এটা ধরে নেওয়ার কারণ আছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক উপরের আদেশে আদিষ্ট হয়ে একটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে এবং আদিষ্ট হয়ে তারা এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে দিচ্ছে। কারণ, শত বা হাজারো কোটি টাকার যে সন্দেহজনক ঋণ, এটা নেওয়ার প্রক্রিয়া তো ১ বা ২ দিনে হয়নি।'

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ঋণ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করতে হয়। তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না, এর আগে ঋণ নিয়ে সেটা পরিশোধ করেছিল কি না, এগুলোসহ নানা ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর। কিন্তু, শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, সোনালী ও জনতাসহ প্রায় সব ব্যাংকই অনেক সময় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে না। এর পেছনে দায়ী ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ও পরিচালনা পর্ষদ। আর সর্বোপরি দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের দুর্বলতা। 

এসবের পেছনে সরকারেরও দায় আছে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, 'অনেক সময় তো সমস্যাটা চিহ্নিত। কিন্তু, সরকারের সংশ্লিষ্টরা যথাযথভাবে ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে না। যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এসব সমস্যা সমাধান করা যায়।'

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

‘হিন্দি আগ্রাসন’ বরদাস্ত নয়, বিক্ষোভের জেরে তামিলনাড়ুর স্টেশনের সাইনবোর্ডে সরল হিন্দি শব্দ-সংবাদ প্রতিদিন

কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের ‘হিন্দি আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হয়েছিল তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) বিধানসভায়। সেই রাজ্যেই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগন উঠল দক্ষিণ রেলওয়ের বিরুদ্ধে। স্টেশনে হিন্দি শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, এমনই দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ। স্টেশন থেকে হিন্দি শব্দ সরিয়ে ফেলতে হবে, এই দাবিতে আন্দোলনও শুরু হয়। প্রবল চাপের মুখে অবশেষে স্টেশনের সাইনবোর্ড থেকে হিন্দি শব্দ সরানো হয়।

বন্ধু’ বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার, সম্পর্ক মজবুত করে বার্তা নবনিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের-সংবাদ প্রতিদিন

ক্ষমতায় এসেই ‘প্রতিবেশি প্রথম’ নীতিতে জোর দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফের সেই কথা মনে করিয়ে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে ভারত। বুধবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য ভারতের একটি নীতি রয়েছে। আর যে কোনও বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায় বাংলাদেশ।” বাংলাদেশকে ভারতের ‘খুব ভাল বন্ধু’ উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, “এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা দেবে।” বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে প্রণয় ভার্মাকে বলেছেন, “বাংলাদেশ কখনওই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম ও সীমানা নেই। বাংলাদেশ ও ভারত আলোচনার মাধ্যমে তিস্তা নদীর জল বণ্টন-সহ অমীমাংসিত সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের একশোটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ও ভারত আলোচনার মাধ্যমে তিস্তা নদীর জল বণ্টন-সহ অমীমাংসিত সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। 

‘দেশকে নেতৃত্ব দেবে বাংলা!’ মন্তব্য রাজ্যপাল বোসের, ধনখড়-পর্বের তিক্ততা মোছার ইঙ্গিত?-আনন্দবাজার পত্রিকা

পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস

বাংলার ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেল রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গলায়। বৃহস্পতিবার নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জানান, বাংলা দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আর ভারত গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। 

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।