স্বাস্থ্যকথা: স্নায়ুরোগ-পর্ব ১
'স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কে না জানার কারণে এ রোগ নিয়ে আমাদের ভীতি আছে'
স্নায়ুরোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটা ভীতি আছে। এর কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের নার্ভাস সিস্টেম সম্পর্কে জানিনা। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-যেমন হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, লিভার এগুলো সম্পর্কে যেমন কমবেশি জানি এবং রোগগুলোও সাধারণ মানুষ জানে কিন্তু স্নায়ু নিয়ে ধারণা একেবারে নাই বললেই চলে। ফলে এ বিষয়টি জানা দরকার। রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে এসব কথা বললেন মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমাম।
তিনি বললেন, আমরা যে হাত পা কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াই –সেটি কিন্তু তারা নিজেরা করে না। এটি ব্রেন থেকে নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে একটা সংকেতের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তো চলুন পুরো আলোচনাটি শোনা যাক। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, তৈরি ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ডা. শাহ দিদার ইমাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
রেডিও তেহরান: স্নায়ুরোগ বা নার্ভের রোগের কথা প্রায়ই শোনা যায়। বিষয়টি খুবই জটিল। মানুষ সহজে বুঝতে পারে না এই রোগটি সম্পর্কে। তো স্নায়ুরোগ বা নার্ভের রোগ কি যদি সহজ করে বিষয়টি একটু বলেন।
ডা. শাহ দিদার ইমাম: আসসালামু আলাইকুম। রেডিও তেহরানের শ্রোতা ও পাঠকদের প্রতি আমার পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা। রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আমাকে স্নায়ুরোগ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
দেখুন, স্নায়ুরোগ নিয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে-একথা ঠিক। কারণ নার্ভের রোগ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। আমার কাছে এ সম্পর্কে যেটি মনে হয়- ধরুন পেটে লিভার আছে, ফুসফুস আছে, কিডনি আছে-তার রোগ হয়,। হার্ট আছে এবং হার্টের রোগ সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের কিছুটা ধারণা আছে। লিভারের রোগ সম্পর্কেও অনেকের জানা আছে। পেটের কোনো সমস্যা হলে সেটাও কম বেশি আমরা জানি। কিন্তু স্নায়ুরোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকার মূল কারণ যেটি- আমাদের নার্ভাস সিস্টেম সম্পর্কে যথাযথ ধারণাটা না থাকা সাধারণ মানুষের কাছে। নিউরো রোগ বা নার্ভের রোগ বলতে সাধারণ মানুষ অনেকে বোঝেন ব্রেনের রোগ। ব্রেনের সাথে যে আরো কতগুলো অর্গান আছে, অঙ্গ আছে যেটি নার্ভাস সিস্টেমকে গঠন করে সে সম্পর্কে ধারণা না থাকাটা ভীতির একটা কারণ সাধারণ মানুষের কাছে।
রেডিও তেহরান: ডা.শাহ দিদার ইমাম, আপনি যে নার্ভাস সিস্টেমের কথা বললেন-সেটি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা সাধারণ মানুষের না থাকাই এখানে মূল সমস্যা। আচ্ছা- নার্ভাস সিস্টেমকে মূলত কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
ডা. শাহ দিদার ইমাম: মূলত নার্ভাস সিস্টেমকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি কেন্দ্রেীয় স্নায়ুতন্ত্র অপরটি প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র।
The nervous system is made up of the central nervous system and the peripheral nervous system: The central nervous system includes the brain and spinal cord. The peripheral nervous system includes the nerves that run throughout the whole body.
প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (ইংরেজি: peripheral nervous system) বা পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম (পিএনএস) হচ্ছে দ্বিপার্শ্বিক প্রাণির স্নায়ুতন্ত্রের দুটি অংশের একটি যার মধ্যে অপর অংশটির নাম কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভার সিস্টেম (সিএনএস)।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়-ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ড দিয়ে। স্পাইনাল এবং ব্রেনের মধ্যে কনটিউয়েশন থাকে। পীঠের যে মেরুদ্বণ্ড থাকে- সেখানে হাড়ের ভেতরে মেরুরজ্জু থাকে। মেরুরজ্জু থেকে দুইপাশে নার্ভ থাকে। যাকে স্নায়ুতন্তু বলে। এই নার্ভগুলো বিশেষত হাতে-পায়ের মাংশপেশিতে যায়। আমাদের শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে নানান মাংসপেশি আছে –ইন্টারনাল অর্গানেও মাংসপেশি আছে-এই সব মাংসপেশিকে পরিচালিত করে এই নার্ভাস সিস্টেমের কতগুলো ইলেকট্রো-কেমিক্যাল সঙ্কেতের মাধ্যমে। আর এই ধারণা সাধারণ মানুষের না থাকার কারণেই স্নায়ুরোগ সম্পর্কে একটা ভীতি কাজ করে। ফলে নার্ভাস সিস্টেমটা আমাদেরকে জানতে হবে তাহলে স্নায়ুরোগ সম্পর্কে ভীতিটা কমে যাবে।
রেডিও তেহরান: ডা. শাহ দিদার ইমাম, স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কে একটু জানার কথা বললেন-তো সেটিই একটু সহজভাবে বলুন যাতে সাধারণ মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারে।
ডা. শাহ দিদার ইমাম: যেটা বললাম ব্রেন এবং স্পাইনাড কর্ড , মস্তিষ্ক এবং মেরুরজ্জু- যা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয় তার মধ্য থেকে চিকন চিকন সুতার মতো কিছু নার্ভ ফাইবার বা স্নায়ুতন্তু বের হয় এবং সেটি আমাদের শরীরের নানান অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাংসপেশির সাথে যুক্ত হয়। এরমাধ্যমে যেটি হয়- ব্রেন থেকে সঙ্কেত আসে- সেই সঙ্কেত তারা মাংসপেশিতে নিয়ে যায়। মাংসপেশি যখন উদ্দীপ্ত হয় এবং আমরা আমাদের কাজ করি। যেমন দৈনন্দিন আমরা হাঁটা-চলাফেরা করছি। ধরুন আমাদের মাংসপেশি সঞ্চালন করি-অর্থাৎ হাত নাড়াচ্ছি, হাঁটিছি। এতে হাত ও পায়ের মাংসপেশি এবং জয়েন্ট বা গিরা সচল থাকছে। কাজ করছে। এরা নিজেরা কিন্তু কোনো কাজ করতে পারে না। এদের কাজ করার ক্ষমতাটি মূলত নার্ভাস সিস্টেমের সঙ্কেতের মাধ্যমে। নার্ভাস সিস্টেমের ব্রেনে বলেন কিংবা স্নায়ুরজ্জুতে বলেন অথবা স্নায়ুতন্তুতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে কিন্তু এর ইফেক্টটা পড়বে মাংসপেশিতে। মাংসপেশি কাজ করতে পারবে না।
এছাড়া আমরা যদি বলি উল্টাটাও হতে পারে। কিছু কিছু সংকেত আবার চামড়া থেকে যায়। যেটাকে আমরা অনুভূতি বলছি। ধরুন আপনার পায়ে একটা মশা কামড় দিল। আমি কিন্তু মশা দেখতে পারছিনা তবে আমি বুঝতে পারছি যে পায়ে একটা মশা কামড় দিয়েছে। মশার কামড়ের সংকেত কামড়ের জায়গা থেকে তৈরি হয়ে ব্রেনে চলে যাচ্ছে নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে একটি ইলেকট্রো কেমিক্যাল সংকেতের দ্বারা। তখন আমাদের ব্রেন বুঝতে পারে এবং সেখান থেকে একটা সংকেত তৈরি হয় এবং যার মাধ্যমে আমার হাত রেডি হয়ে যায়। তখনই অজান্তেই আমার হাতটি মশা কামড়ের জায়গায় চলে যায় ও তাপ্পড় দেই। এভাবেই নার্ভাস সিস্টেম কাজ করে।
স্বাস্থ্যকথার আসরে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমামের আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম স্বাস্থ্যকথার আসরে স্নায়ুরোগ বিষয়ক আলোচনায়। ডা. শাহ দিদার ইমাম, ডা.শাহ দিদার ইমাম, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ কি সে সম্পর্কে যদি আরও একটু বুঝিয়ে বলেন?
ডা. শাহ দিদার ইমাম: স্নায়ুতন্ত্রের কাজ একটু জটিল আবার সহজও। সহজ ঐভাবে যদি আমি স্নায়ুতন্ত্রের কাজটি ভালো জানি। আমি আগেই বলেছি আমাদের মস্তিস্কে মেরুরজ্জু আছে এবং মেরুরজ্জু থেকে থেকে যে স্নায়ুতন্তু বের হচ্ছে যেগুলোকে আমরা পেরিফেরাল নার্ভ বলি। উদারহণ হিসেবে আমাদের মুখের মাসেলগুলোকে-মুখের দুইপাশে দুইজোড়া ফেসিয়াল নার্ভ আছে-ঐ ফেসিয়াল নার্ভ মুখের মাংসপেশিকে উদ্দিপ্ত করে। আমরা যখন হাসি, কাঁদি কিংবা শিস দেই, চোখের পাতা নাড়াই এগুলো কিন্তু ঐ নার্ভের সংকেতের মাধ্যমেই কিন্তু আমরা করে থাকি। আমি স্নায়ুতন্ত্রের কাজটি সহজভাবে শ্রোতা-পাঠকদের বোঝাবার চেষ্টা করেছি। জানিনা তাঁরা কতটুকু বুঝতে পেরেছেন।
রেডিও তেহরান: আপনি খুব সুন্দর করে বললেন- আমরা যে হাত-পা নাড়াচ্ছি এরা কিন্তু নিজেরা নড়েনা-এদের কার্যশক্তি মূলত নার্ভাস সিস্টেমের সংকেতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
ডা. শাহ দিদার ইমাম: আমরা হাঁটার জন্য পায়ের মাংসপেশিগুলোকে সচল করি। জয়েন্ট যেগুলো আছে-যেমন নি জয়েন্ট, অ্যাঙ্কেল জয়েন্ট এবং দুই পায়ের যে মাংসপেশি আছে তাদের নিজস্ব কিন্তু কো নো ক্ষমতা নেই। তারা কাজ করে সেই সংকেতটা আসে ব্রেন থেকে।
রেডিও তেহরান: তো ডা. শাহ দিদার ইমাম-স্নায়ুরোগের লক্ষণগুলো আপনি বলতে চাইছিলেন কিন্তু আজ আর আমাদের হাতে সময় না থাকায় আপনাকে থামিয়ে দিতে হলো। আগামী সপ্তায় আপনি এ বিষয়ে বলবেন। তো রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ডা. শাহ দিদার ইমাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৩১