মার্চ ০১, ২০২৩ ২০:৩২ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে। আমরা স্নায়ুরোগ বা নার্ভের রোগ নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে কথা বলব। আর আমাদের সঙ্গে আছেন স্মায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমাম। তিনি মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তো আমরা আজকের আলোচনা শুরু করছি।

জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমাম, গত সপ্তার আলোচনার শেষ দিকে আপনি স্নায়ুরোগের লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময়ের অভাবে সেটি করা সম্ভব হয়নি। আজকের আসরের শুরুতে যদি আপনি বলেন কেন স্নায়ুরোগ হয় বা স্নায়ুরোগের লক্ষণগুলো কি?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: দেখুন, এখনও পৃথিবীতে অনেক রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে স্নায়ুরোগ সম্পর্কে কিছু প্রকৃতি দেখে আমরা বুঝতে পারি। আমরা বিষয়টিকে যদি অন্য সিস্টেমের সাথে তুলনা করে বলি তাহলে, ধরুন নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের প্রদাহ। ঠিক একইভাবে একটা ইনফেকশন কিন্তু ব্রেনে হতে পারে। একটা ইনফেকশান ব্রেনের কভারটা যাকে আমরা যাকে মেনিনজেস বলি। একটা পর্দা-সেই পর্দাতে যদি ইনফেকশন হয় কিংবা প্রদাহ হয় তখন তাকে আমরা 'মেনিনজাইটিস' বলি। ব্রেনে যখন ইনফেকশন হচ্ছে তখন আমরা তাকে এঙ্কেফেলাইটিস। আর নির্দিষ্ট একটা নার্ভেও ইনফকেশন হতে পারে। আমরা যদি আরেকটা উদাহরণ দেই- যেমন ধরুন কিছু ইনফ্লামেন্টারি ডিজিজ যাকে আমরা  বলি জ্বালা পোড়া সম্বন্ধীয় রোগ। প্রদাহজনিত রোগ। এসব রোগ সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে বোধগম্য হওয়ার কথা না। তবে খুব সহজ করে যদি বলি- নার্ভাস সিস্টেমের মস্তিষ্কে, মেরুরজ্জুতে বা স্নায়ুতন্তুতে যেটাকে আমরা নার্ভ বলি এসব জায়গায় প্রদাহ হতে পারে। আর এতে নার্ভাস সিস্টেম আক্রান্ত হতে পারে।

রেডিও তেহরান: আপনি লক্ষণের মধ্যে ইনফেকশনের কারণে স্নায়ুরোগ হতে পারে বললেন। তাছাড়া নার্ভাস সিস্টেমে প্রদাহজনিত কারণে স্নায়ুরোগ হতে পারে। আর কি কি লক্ষণ থাকতে পারে?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: স্নায়ুরোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেটাবলিক কিছু কারণ আছে। উদাহরণ হিসেবে ডায়াবেটিসের কথা বলা যায়। ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেটি সত্যিই মারাত্মক হতে পারে। রক্তে সুগারটা সিরিয়াসলি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই যে অতিরিক্ত সুগার বা গ্লুকোজ প্রতিটি কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরমধ্যে নার্ভাস সিস্টেমের যে নিউরন, স্নায়ুতন্ত্র-তাদের ক্ষতি করতে পারে। এই ডায়াবেটিস ব্রেন, মেরুরজ্জু এবং স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভেরও ক্ষতি করতে পারে। এটি ব্রেনকে এককোষি করে দিতে পারে। একসময় প্যাথোলোজিক্যাল প্রসেসে ব্রেনে রক্ত চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

স্নায়ুরোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.শাহ দিদার ইমামের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। আমাদের সাথেই থাকুন। ফিরছি শিগগিরি

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম আলোচনায়।  ডা. শাহ দিদার ইমাম, আপনি বললেন ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুরোগ হতে পারে। ব্রেনের রক্তসঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আপনি বললেন এটি আমরা স্কোপ হিসেবে। তো এই স্কোপটি আসলে কি?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: দেখুন, স্ট্রোক খুবই কমন একটি রোগ। প্রায়ই এই স্ট্রোক দেখা যায়। বড় দুটি রোগের কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে ডায়াবেটিস  অন্যটি হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। আমরা মেডিকেলের ভাষায় যেটাকে বলি হাইপারটেনশান। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই দুটো নার্ভাস সিস্টেমের প্রধান দুটো শক্র। এই দুটি রোগ নার্ভাস সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। অনেকসময় আমাদের কাছে আসা ডায়াবেটিস রোগীরা বলে হাত পা জ্বালা পোড়া করছে। এরকারণ হচ্ছে তার হাত-পায়ের স্নায়ুতন্তুগুলোকে সে ডায়াবেটিস দুর্বল করে দেয়।

রেডিও তেহরান: জ্বি এমন কথা প্রায়ই শোনা যায় আমরা অনেককে বলতে শুনেছি তাদের হাত পা জ্বালা পোড়া করছে। তো আসলে বিষয়টি কি কেন জ্বালা-পোড়া করে?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: এই হাত পা জ্বালাপোড়া করা, হাত পায়ে শক্তি কমে যাওয়া এমনকি হাত পা অনেক দিন দুর্বল হয়ে থাকলে মাংসপেশী কিন্তু শুকিয়েও যেতে পারে।

আমাদের একটা ফেসিয়াল নার্ভ আছে। এই ফেসিয়াল নার্ভ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে মুখটা বাঁকা হয়ে যেতে পারে। চোখ বন্ধ করতে গিয়ে দেখা গেল যে এক চোখ বন্ধ হচ্ছে না ঠিকমতো। অর্থাৎ ঐ পাশটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় অমনটি হচ্ছে। ফলে স্নায়ুরোগের প্রকৃতিটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। মেটাবোলিক কারণ কি না, জেনেটিক কোনো কারণ অথবা কোনো টিউমারের জন্য হচ্ছে কি না অথবা ইনফেকশনের জন্য হচ্ছে কি না..। এভাবে নানান কারণে স্ট্রোক হতে পারে।

অনেকের ধারণা স্ট্রোকটা হার্টের অসুখ। কিন্তু আসলে স্ট্রোক হচ্ছে ব্রেনের রোগ। ফলে ব্রেনের কোনো একটা রক্তনালী হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। আর এই রক্তের মাধ্যমে আমরা জানি প্রধান দুটি জিনিস সেলুলার মেটাবলিক-  সেলের কার্যক্রমের জন্য সাহায্য করে। একটা হলো অক্সিজেন সাপ্লাই অন্যটি হলো নিউট্রিন। এই জিনিষগুলো সাপ্লাই হয় রক্তের মাধ্যমে। এখন ব্রেনের একটা নির্দিষ্ট অংশে  যদি রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন ব্রেনের ঐ অংশগুলো কাজ করতে পারে না। আর কাজ করতে না পারলে মস্তিষ্কের  যে অংশটা অকার্যকর হয়ে গেল সেই অংশটি শরীরের যে অংশকে নিয়ন্ত্রণ করত সেই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তখন আর তার থাকে না। যার প্রকাশ হিসেবে একদিকের হাত কিংবা একদিকের পা  হঠাৎ করে অবশ হয়ে গেছে। অথবা তার শরীর ভার ভার লাগছে অথবা শক্তি পেলেও সেটি অন্য হাত বা পায়ের সাথে তুলনা করলে খুব কম মনে হচ্ছে।

 রেডিও তেহরান: আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বললেন, আপনি বলছিলেন মস্তিস্কের যে অংশটা অকার্যকর হয়ে গেল সে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্ত নিয়ন্ত্রণ করত সেগুলো অবশ হয়ে যেতে পারে। লক্ষণ হিসেবে আপনি দুর্বলতার কথা বলছিলেন- তো আর কি বলবেন এ সম্পর্কে?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: হঠাৎ করে দুর্বলতা ভর করতে পারে। একদিকের হাতে কিংবা একদিকের পায়ে। অথবা দুইটা পায়েই হঠাৎ করে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অথবা মুখের একটা অংশ বাঁকা হয়ে যেতে পারে। এমনও হতে পারে রোগী খাবার গিলতে পারছে না। খাদ্যনালী দিয়ে খাবার পাকস্থলিতে নিতে পারছে না। কারণ খাদ্যনালীর মাংশপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ায় খাবার সে নিতে পারছে না। ফলে নার্ভের অসুখে মাংসপেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এরফলে ঐ যে আগে বললাম, কোনো একদিকের হাত-পা, অথবা চোখের একদিকে বাকা হয়ে যাওয়া কিংবা মুখ বাকা হয়ে যাওয়া। এ সবকিছুই হচ্ছে নার্ভের ডিজিজের কারণে। কারণ আমরা জানি নার্ভ নিয়ন্ত্রণ করে মাংসপেশীকে। ফলে নার্ভ যখন কাজ করতে পারবে না তখন স্বাভাবিকভাবেই মাংসপেশীগুলো কাজ করতে পারবে না।

তো অধ্যাপক শাহ দিদার ইমাম-স্নায়ুরোগের লক্ষণ নিয়ে আজকের পর্বে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৮

ট্যাগ