কোনো নারীর যদি সন্তান নাও থাকে তার মধ্যেও থাকে প্রবল মাতৃস্নেহ
নারী: মানব-ফুল- ৭ ( ইসলামে নারী-অধিকার ও মায়ের সম্মান )
নারীকে এক সময় মনে করা হত পশুতুল্য বা নিকৃষ্ট প্রাণী! ইসলাম নারীর প্রতি এমন সব ধারণা বাতিল করে দিয়ে তাকে দিয়েছে মানুষের সম্মান। মেয়েদের পছন্দের বাইরে তাদের বিয়ে দেয়া যাবে না বলে বিধান দিয়েছে ইসলাম।
মা যেন এক সূর্য
স্নেহের উত্তাপ তার প্রখর!
তার মমতার আলোয় ভরে থাকে ঘর!
তার ভালোবাসার তাপে বেড়ে ওঠে ছেলে-মেয়েরা!
তাঁর ভালোবাসা অশেষ!কঠিন কষ্টেও পারে না ভুলতে মায়েরা
ঘর, স্বামী, সন্তান আর ঘর!
তাঁর সংস্পর্শে কেউ যেন নয় পর
আলোর প্রদীপের মত নিজেকে করেন নিঃশেষ!মায়ের আঁচলের নীচেই
সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়!
স্মৃতিতে চির-অক্ষয়!
মা-ই শেখায় ভাষার প্রথম অক্ষর!দয়া আর বিনয়েরও প্রথম পাঠ এখানেই!
সুস্থ মায়ের সুস্থ শিক্ষায়
গড়ে ওঠে সুশীল প্রজন্ম অনন্য উচ্চতায়!
এসো সবে প্রথম শিক্ষকে করি অশেষ সালাম!
বিধাতার নিয়োগ করা প্রথম শিক্ষকে!
বিধাতার প্রশিক্ষিত শিক্ষকে!
সালাম হে সর্বোত্তম পেশাজীবী, গর্ভধারিণী ও স্তন্যদাতা
সালাম হে সবার প্রশান্তিদাতা
সন্তানকে দিয়ে মমতাময় সময়
নিজেকে তিলে তিলে করে ক্ষয়
অবশেষে একদিন হারিয়ে যায়!
অথচ তাঁরই পায়ের নীচে বয়ে যায়
স্বর্গ ও সভ্যতার বহমান ধারা উদ্দাম।–
ইসলামই ঘোষণা করেছে যে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া কলঙ্কের বিষয় নয় বরং কন্যা সন্তানকে লালনকারী বাবা মা হবেন জান্নাতের অধিকারী। ইসলাম নারীকে দিয়েছে ব্যক্তিত্ব এবং মালিকানার অধিকারসহ সুনির্দিষ্ট নানা অধিকার। নারী হচ্ছে মানব-প্রজন্মকে শিক্ষিত করার মৌলিক ও অনন্য গৌরবের অধিকারী। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহতী দায়িত্ব।মহানবী (সা) নারীকে সুগন্ধি ফুল বা লতা-পাতার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, তারা গৃহকর্মী বা গৃহকর্মীদের তত্ত্বাবধায়ক নন! - শিশু সন্তানদের প্রতিপালনের জন্য মায়ের সাহচর্য ও সঙ্গ এবং তাদের পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়ে মায়ের দুধই শিশুর জন্য পরিপূর্ণ খাদ্য। সন্তান ও স্বামীর যত্ন নেয়ায় স্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে ইসলাম ধর্ম নারীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। নারীর মাতৃ-সুলভ স্নেহ ও মমতা এবং বিশেষ যত্ন পরিবারের সবাইকে যোগায় প্রশান্তি।
মহান আল্লাহ সুরা রূমের ২১ নম্বর আয়াতে বলেছেন: আল্লাহর আর এক নিদর্শন বা দয়া এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। -পরিবারে মায়েদের স্নেহ মমতার অসাধারণ ভূমিকার প্রভাব পড়ে সর্বত্র। পরিবারের সব সদস্য মায়ের মমতার প্রভাবেই পরস্পরের প্রতি হয়ে ওঠেন সহৃদয় ও আন্তরিক। পিতা যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে সন্তানের প্রতি সর্বোত্তম দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যান তাতেও রয়েছে মায়ের তথা স্ত্রীর যোগানো প্রশান্তি আর প্রেরণার ভূমিকা। মায়ের ভালোবাসা থেকেই সন্তানরা ভালবাসতে শিখে সমাজের অন্য সদস্যদের এবং এভাবে তারা হয়ে ওঠে সমাজের দায়িত্বশীল সুনাগরিক।
কোনো নারীর যদি সন্তান নাও থাকে তার মধ্যেও থাকে প্রবল মাতৃস্নেহ। মহানবীর (সা) হাদিসে বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত। সন্তানের প্রতি মায়েদের মমত্ববোধের পবিত্রতা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মুসা নবীর মায়ের ইতিহাসেও হয়েছে প্রতিফলিত।মুসা নবীকে তাঁর মা জন্ম দিয়েছিলেন এমন এক ভয়াবহ সময়ে যখন বনি ইসরাইলে কোনো পুত্র সন্তান জন্ম নিলেই ফেরাউনের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হত। মুসা নবীর মা এই আতঙ্কের মধ্য ছিলেন যে যে কোনো মুহূর্তে ফেরাউনের গুপ্তচররা হয়তো জেনে যাবে মুসার জন্মের ঘটনা! আর তখনই প্রাণ হারাবে তাঁর নবজাতক পুত্র! সুরা কাসাস-এর সপ্তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
আমি মুসা-জননীকে তার অন্তরে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের তথা ফিরাউনের অনিষ্টের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব।
-মুসা নবীর মা হৃদয়ে খোদায়ি আদেশ পেয়ে বিস্মিত হলেন এবং এই ভেবে হয়রান হলেন যে কিভাবে নবজাতককে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেব? সন্তানের প্রতি স্নেহের দরিয়ার ঢেউ তখন তখন তার মাতৃরূপ সাগরের মাঝেই আছড়ে পড়ছিল! ভেবে আকুল হলেন কি করা যায়? ! কিন্তু যেহেতু তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগত খোদাভীরু নারী ও মহান আল্লাহর ওয়াদার প্রতি বিশ্বাসী, তাই তিনি আল্লাহর নির্দেশকেই প্রাধান্য দিয়ে একটি সিন্দুক বানিয়ে নবজাতক সন্তানকে তাতে রেখে ভাসিয়ে দিলেন তা দরিয়ায়! ছোট্ট সেই বাক্স যখন ফেরাউনের প্রাসাদের ঘাটের কাছে ভিড়লো তখন সেটা তার স্ত্রীর চোখে পড়ল! আসিয়া বহুকাল ধরে ফেরাউনের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো সন্তান ছিল না! তিনি এই নবজাতক দেখে খুশি হলেন।
ফেরাউনের প্রসাদের ঘাটে ভেসে আসা সিন্দুকে অপরূপ সুন্দর ও লাবণ্যময় শিশুকে দেখে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন বন্ধ্যা নারী বিবি আসিয়া তা পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাস-এর সাত নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে: ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে মুসার ভবিষ্যৎ ও ফেরাউনের পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না। - এভাবে দেখা যায় যে স্থানটি ছিল মুসার জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক মহান আল্লাহর অপরাজেয় ইচ্ছায় সেই ঘর বা স্থানটিই হল মুসার জন্য নিরাপদতম আশ্রয়! মহান আল্লাহ বিবি আসিয়ার হৃদয়ে মাতৃত্বের অশেষ স্নেহ জাগিয়ে দেয়ায় তাঁর বাধার কারণে ফেরাউনের সেনা বা প্রহরীরা মুসাকে হত্যা করতে পারেনি। এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর ক্ষমতার নিদর্শনকে আবারও তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টভাবে। অর্থাৎ মুসার মা ও বিবি আসিয়া দু'জনেরই মাতৃত্বের অনন্য রূপ এভাবেই তুলে ধরলেন মহান আল্লাহ এবং আল্লাহর ইচ্ছাই যে সব কিছুর ওপর বিজয়ী হয় তাও স্পষ্ট করলেন।
পার্সটুডে/এমএএইচ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।