যৌবনের ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়
সোনালী সময়-১ (ইসলাম গ্রহণ ও প্রচারে যুবসমাজই ছিল অগ্রগামী)
শ্রোতা ভাই বোনেরা, সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে যুব-শক্তি তথা তারুণ্য বা যৌবনকাল ও যৌবনের মেধা এবং জীবনের এ সময়ের নানা সুবিধা ও শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর গুরুত্ব আর কৌশল বিষয়ক নতুন ধারাবাহিক অনুষ্ঠান 'সোনালী সময়' র প্রথম পর্বে আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি
হে দুরন্ত পথিকের দল! খুলে মন-প্রাণ শোনো পেতে কান
জীবনের অনন্য সোনালী সময়ের উদাত্ত আহ্বান!
মৃত্যুকে জীবনের পানে ডেকে যারা হয়ে আছে মহিয়ান
সত্যের সংগ্রামে যারা অম্লান অবিচল চির-দেদীপ্যমান
বেঁচে থাকে যারা যুগে যুগে জাতির মহা-কীর্তি বীরত্ব-গাথায়!
গেয়ে সঙ্গীত দুরন্ত যৌবনের আর দিলখোলা তারুণ্যের জয়গান!
যে তারুণ্য দুরন্ত বৈশাখী ঝড়ের মত
উদ্দাম ধূমকেতুর মত ক্ষিপ্র-বেগে ধাবমান
দেশে দেশে গড়ে দেয় মুক্তির সোনালি সোপান।
দুর্ভাগা স্বদেশেও যেন রয় মুক্তির সে অমিয় ফল্গুধারা বহমান!
ওরা যুগে যুগে আসে প্রদীপ্ত জ্ঞান ও বিশ্বাসের মুক্তধারায়!
ওরা আসে যুগে যুগে বদর, ওহুদ, খন্দক আর কারবালার পথ ধরে
শহীদি স্বপ্নের আবির ছড়িয়ে রক্ত-রাঙ্গা সত্যের সোনালি পাখায়!

মানুষের আয়ু বা পার্থিব-জীবন মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামতগুলোর অন্যতম। জন্মলাভের পর শৈশব থেকে বার্ধক্যের এই দীর্ঘ জীবন-পরিক্রমায় মানুষের জীবনের নানা পর্যায়ে যৌবন ও তারুণ্যের পর্যায় সবচেয়ে ঐশ্বর্যময়। এ সময়ই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময় তথা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বা জীবনের বসন্তকাল।
তারুণ্য মানে কখনও উদ্দীপনা, আনন্দ ও স্ফূর্তির জোয়ারে ভেসে চলা; কখনও দায়িত্ব ও অঙ্গীকারের চেতনার স্ফুরণ এবং কখনও স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বনির্ভরতার প্রখর চেতনার বিস্ফোরণ। তারুণ্য ও যৌবনকাল নানা গুণের সমন্বয়ে ব্যক্তিত্ব গঠনের ও বিকাশের সোনালী সময়। এ সময়টা একদিকে ফোটায় প্রেম ও আশার কলি, অন্যদিকে জাগিয়ে তোলে জৈবিক উগ্র বাসনা ও বিচিত্রময় চিন্তা-চেতনা! এ সময়ে তাদের মধ্যে থাকে একদিকে দুরন্ত সাহসিকতা, অহংবোধ ও অহমিকা এবং অন্যদিকে প্রবল আদর্শিক চেতনা ও সৃজনশীলতার আকর্ষণ। নিজেকে তুলে ধরার ও জানার প্রবল আগ্রহও এ সময়ই প্রবল হয়ে ওঠে। কেবল ঈমান ও জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণই তারুণ্য বা যৌবনকালকে এগিয়ে নেয় প্রকৃত মনুষ্যত্ব ও মানবীয় উচ্চতর কল্যাণের দিকে।

আত্মপরিচিতির অনুসন্ধানও অনভিজ্ঞ তারুণ্যের অন্যতম ধর্ম। তবে তারুণ্যের শক্তি ও প্রতিভাগুলোকে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে জীবন হয় সৌভাগ্যময় ও পূর্ণতার ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ। আসলে তারুণ্য ও যৌবনের অবস্থাকে উর্বর জমির সঙ্গে তুলনা করা যায় যেখানে যে কোনো ধরনের বীজই বপন করা হোক না কেন তার ফলন হবে বেশ ভালো। যৌবনকালকে জীবনের মধ্য গগণের সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ সময় সূর্যের আলো যেমন সবচেয়ে উজ্জ্বল ও প্রখর থাকে তেমনি মানুষের শক্তি ও যোগ্যতাও থাকে পূর্ণ মাত্রায় এবং একই সময়ে থাকে না শৈশবের অপরিপক্বতা। শৈশবে শিশুরা মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল থাকে। বার্ধক্যেও মানুষ আশপাশের ঘনিষ্ঠজনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যৌবনে বা মধ্য-বয়সে মানুষ পেশা, সমাজ ও পদের ওপর নির্ভরশীল থাকে তীব্র মাত্রায়। অথচ অনেক মানুষ জীবনের বসন্তকাল বা যৌবনের তথা সোনালি সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগায় না, এ সময় যখন কেটে যায় তখনই বুঝতে পারে যে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় পার হয়ে গেছে।
মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করেন যৌবনে মানুষের প্রয়োজন পথ-নির্দেশক ও সংরক্ষক শক্তি। একটি জাতির যুব-শক্তিকে বড় বাঁধের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বাঁধের পানির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষিকাজ ও বনায়ন করা যায় তেমনি গড়ে তোলা যায় বিদ্যুৎ ও মৎস্য শিল্পের মত নানা শিল্প। সমাজে নানা ধরনের কল্যাণকর মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলেও দরকার যুব-শক্তির যথাযথ ব্যবহার ও প্রশিক্ষণ। যুব প্রজন্ম যদি ধার্মিক না হয় এবং আধ্যাত্মিক বা নৈতিক দিক থেকে উন্নত না হয় তাহলে তা সমাজের সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। নতুন সমাজ বিনির্মাণ নির্ভর করে যুব-শক্তির ওপর। তাই প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের পক্ষ হতে যুব সমাজের শক্তির ব্যবহারও লক্ষণীয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের আত্মাকে আধ্যাত্মিক দিক থেকে উন্নত করার শ্রেষ্ঠ সময় হল যৌবনকাল। তরুণ ও যুবকদের মন কোমল থাকে। যৌবনের ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এ সময়ের ইবাদতের ভিত্তিতেই অনেক মহান নবী-রাসুল ওই উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছেন। যুবকদের কোমল মন ও সত্যকে গ্রহণের সৎসাহসের দিকে ইঙ্গিত করে মহানবী (সা) বলেছেন, মানুষকে যখন আল্লাহর রহমত ও শাস্তির কথা বলেছি তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুবকরাই আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছে ও আমার সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু বৃদ্ধরা আমার আহ্বানে সাড়া দেয়নি বরং বিরোধিতা করেছে।
যুবক ও তরুণরা পদ-মর্যাদা ও বৈষয়িক বিষয়ের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় না। তারা সত্য-সন্ধানী এবং রক্ষণশীলতা, জড়তা ও পশ্চাতপদকামিতা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। তারা গতিশীল ও উৎফুল্ল চিত্তের অধিকারী। সমাজে মূল গতির সঞ্চার করে তারাই। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে,
যে কোনো আন্দোলনের কেন্দ্রে ও ফ্রন্ট-লাইনে থাকে যুব-সমাজ। তারা হয় অন্যদের চেয়ে বেশি অগ্রসর। মহানবীর ইসলাম প্রচারের আন্দোলনেও বেশি সক্রিয় ও অগ্রপথিক ছিল এই যুব-শ্রেণী।

ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ) বলেছেন, যদি সমাজকে সংশোধন করতে চাও তাহলে তরুণ ও যুব সমাজ থেকে এই কাজ শুরু করতে হবে, কারণ এই শ্রেণী কল্যাণকর কিছু গ্রহণে বেশি প্রস্তুত থাকে এবং তাদের হৃদয় বেশি কোমল হয়ে থাকে।
তাই যুব সমাজকে সুশিক্ষা দেয়া সম্ভব হলে সমাজকে আলোকিত ও সুস্থ করা সহজ হয়। নানা ধরনের ভ্রান্ত মতবাদ ও চিন্তার কলুষতা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হলে যুব ও তরুণ বয়সেই তাদের কাছে সুশিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে। মহানবী (সা) কোমলমতি তরুণ ও যুব সমাজের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার ও তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যুব সমাজকে কিভাবে সর্বোত্তম উপায়ে সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের শক্তি ও মেধাগুলোকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আমরা কথা বলব আগামী পর্বগুলোতে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।