এপ্রিল ২১, ২০২৩ ১৭:৫৩ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম মুমতাহিন مُمتَحِن । এর অর্থ পরীক্ষক। পবিত্র কুরআনে এই শব্দ দুই বার এসেছে। মহান আল্লাহ মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন।

তবে এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য মানুষের অবস্থা জানার জন্য নয়। কারণ আল্লাহ আগ থেকেই কোন্‌ মানুষ কেমন প্রকৃতির ও তারা ভবিষ্যতে কি করবে - এসবই জানেন। বরং পরীক্ষাগুলোতে অবতীর্ণ হওয়া মানুষের জন্যই কল্যাণকর। শিক্ষক ছাত্রদের পরীক্ষা নেন যাতে তারা পরীক্ষার মাধ্যমে নানা তথ্য ও জ্ঞান ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে। মহান আল্লাহ সুরা আনকাবুতের দ্বিতীয় আয়াতে বলেছেন: মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?- 

যে কোনো কিছু দাবি করা সহজ: যেমন কেউ খুব বড় মুমিন হওয়ার, মুজাহিদ হওয়ার কিংবা খুব বড় ত্যাগী মানব হওয়ার দাবি করা। কিন্তু এসব দাবি অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তো সবারই ঈমানের গভীরতা, ত্যাগের প্রস্তুতি বা মুজাহিদ হিসেবে কে কতটা যোগ্য -এসবই জানেন। কিন্তু মানুষ যাতে এসব ক্ষেত্রে নিজের অবস্থাকে বাস্তবতার ময়দানে যাচাই করে নিজেকে জানতে ও বুঝতে পারে সে জন্যই পরীক্ষা গ্রহণটা জরুরি। তাই মহান আল্লাহ মানুষকে নেয়ামত দিয়ে ও কখনও নেয়ামত কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন যাতে তাদের প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটে। 

যারা মহান আল্লাহর মুমতাহিনা নামের অর্থ ও খোদায়ি পরীক্ষাগুলোর মর্ম বোঝেন না তারা কখনও কখনও প্রতিবাদের সুরে বলেন, কেনো আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে এনে পরীক্ষার মধ্যে রেখেছেন এবং এতসব কষ্ট আর বিপদের শিকার করেছেন? –এমন ধারণা বা প্রতিবাদের সঠিক জবাব জানা জরুরি, তা না হলে এর বিশ্বাসগত ও সামাজিক প্রভাব হবে অত্যন্ত মন্দ। 

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষ সৃষ্টি ও তাদের নানা বিপদ আপদের বিষয়ে অনেকের প্রতিবাদী বক্তব্য বা প্রশ্নের জবাব জানা জরুরি। তবে  আরও বড় প্রশ্ন হল , মহান আল্লাহ কি আমাদেরকে কেবল খাওয়া-দাওয়া করতে, ঘুমাতে ও বংশ বিস্তার করতে তথা আনন্দ-ফুর্তি করতেই সৃষ্টি করেছেন, না কেবল আল্লাহর ইবাদাত করতেই সৃষ্টি করেছেন? আর যদি ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে ফেরেশতারাও তো মানুষের আগে এ কাজই করতেন ও চিরকাল তা করেই যাবেন। আসলে আল্লাহ আমাদের বা কারো ইবাদাতেরই মুখাপেক্ষী নন। আরও একটু এগিয়ে এসে আমরা যদি পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ত্রিশ নম্বর আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখব এই আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি ভূপৃষ্ঠে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করব। - এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, যে কোনো  যোগ্য মানুষই মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার সামর্থ্য রাখে। অবশ্য আল্লাহর খলিফাদের নানা স্তর রয়েছে। যার ঈমান ও সৎকর্মের মাত্রা যত গভীর সে আল্লাহর তত বেশি নৈকট্য-প্রাপ্ত প্রতিনিধি। অন্য কথায় যার মধ্যে মহান আল্লাহর গুণ ও নামের প্রকাশ যত বেশি ঘটবে সে আল্লাহর তত বেশি নৈকট্যের অধিকারী হবে।

মুমতাহিনা শব্দের অর্থ পরীক্ষক 

 

 উচ্চতর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা অর্জনের পথ সব সময়ই খোলা। উচ্চতর পর্যায়গুলোতে পৌঁছানোর জন্যই মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন। শিক্ষক ছাত্রের পরীক্ষা নেন এবং আল্লাহও মানুষের পরীক্ষা নেন। এক্ষেত্রে পার্থক্য হল শিক্ষক ছাত্রের যোগ্যতা বা জ্ঞানের মাত্রা নাও জানতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দার যোগ্যতা, জ্ঞান ও সামর্থ্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ খবর রাখেন। আল্লাহ বান্দার পরীক্ষা নেন যাতে তার নানা যোগ্যতার বিকাশ ঘটে এবং সে প্রকৃত মানুষ হওয়ার সুযোগ পায়। প্রত্যেক পরীক্ষায় মানুষের আসল ইচ্ছা ও মনের ঝোঁকগুলো ফুটে ওঠে।

অস্তিত্ব জগতে পূর্ণতা ও উন্নতির ব্যবস্থা রয়েছে। সব জীবন্ত অস্তিত্বকে পূর্ণতার এই পথ অতিক্রম করতে হবে। আল্লাহ কখনও ব্যাপক নেয়ামত ও নানা সাফল্য দান করে এবং কখনও নানা বিপদ-আপদ, রোগশোক, ব্যর্থতা ও দারিদ্র দিয়ে পরীক্ষা করেন। এসব পরীক্ষা কারো কারো জন্য বেশ কঠিন হওয়া সত্ত্বেও তারা উতরে যেতে সক্ষম হন। পরীক্ষা সহজ ও কঠিন হওয়ার ওপর নির্ভর করে পরীক্ষার পুরস্কার। নবী-রাসুল, ইমাম ও আল্লাহর অলিদের পরীক্ষাগুলো তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণতা তুলে ধরে। আর সাধারণ মুমিন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন বা ছোটোখাটো শির্ক থেকে পবিত্র হন। এসব শির্কের ব্যাপারে সাধারণ মুমিন সাধারণ অবস্থায় সচেতন থাকেন না।

যারা পরিপূর্ণ মানব বা মহামানব আল্লাহ তাঁদের পরিপূর্ণতা দানের জন্য পরীক্ষা করেন না। কারণ তাঁরা তো পরিপূর্ণ হয়েই আছেন। বরং আল্লাহ তাঁদের পরীক্ষা করেন তাঁদেরকে নিজের আরও ঘনিষ্ঠ করতে এবং তাঁদের আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব ও উচ্চতর অবস্থা অন্যদের কাছে তুলে ধরতে। আশুরার সময় ইমাম হুসাইনের সঙ্গীরা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন যাতে পূর্ণতা অর্জন করতে পারেন। কিন্তু ইমাম হুসাইন-আ মানবীয় পূর্ণতার শিখরেই ছিলেন। এই ঘটনা ইমাম হুসাইনের ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ তাঁর নানা পূর্ণতা অন্যদের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

অবশ্য খোদায়ি পরীক্ষা কোনো কোনো মানুষের জন্য শাস্তির মাধ্যম। আল্লাহ জালিমদেরকে নানা বিপদে ও সংকটে জড়িয়ে তাদের শাস্তি দেন যাতে তারা জুলুম ছেড়ে দেয়।  অনেক মানুষ অন্যদের পাপ দেখে বিস্মিত হয়, অথচ নিজেও একই পরিস্থিতিতে সেইসব পাপ ও প্রলোভনের শিকার হন! মহান আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমে এইসব ব্যক্তির আসল অবস্থা তাদের কাছে স্পষ্ট করেন। এ ধরনের পরীক্ষা মুমিনের ইমানকে শক্তিশালী করে ও ঈমানের ভুয়া দাবিদারদের আসল অবস্থা অন্যদের কাছে স্পষ্ট করে।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২১


 

ট্যাগ