মহানবী (সা) বলেছেন, বার্ধক্য আসার আগেই যৌবনকে গুরুত্ব দিতে শেখ
সোনালী সময়-২ (তারুণ্য ও যৌবনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য)
শ্রোতা ভাই বোনেরা, সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। যৌবনকাল ও যৌবনের মেধা এবং এর নানা সুবিধা ও শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর গুরুত্ব আর কৌশল বিষয়ক নতুন ধারাবাহিক অনুষ্ঠান 'সোনালী সময়' -এর দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।
হে দুরন্ত পথিকের দল! এসো গাই আলোকিত তারুণ্যের জয়গান!
যে তারুণ্য প্রেম মৈত্রীর গুলবাগিচায় ফোটায় নিত্য নতুন গোলাপ!
যে তারুণ্যের সজীবতা ধুয়ে মুছে দেয় সব গ্লানি আর পাপ!
যে তারুণ্য নয় দাস হীন কামনা-বাসনার কিংবা লোভ লালসার!
যে তারুণ্য বয়ে আনে সৃষ্টিশীলতা ও নব-শক্তির অনন্য উত্তাপ!
মহানীলীমার বুকে ফোটায় অজস্র ঈদের চাঁদ সৌভাগ্যের নিশান!
বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ভাসিয়ে নেয় সব জঞ্জাল ভীরুতা আর অসম্মান,
বইয়ে দেয় জীবন-মরুতে মহাসাগরের মত দিগন্ত-বিস্তৃত অফুরন্ত কল্যাণ।
তারুণ্য ও যৌবন হচ্ছে মেঘমালার মত যা দেখতে মনে হয় বেশ প্রশান্ত কিন্তু বাস্তবে বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে ও দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যায়। জীবনের সুবর্ণ সুযোগগুলোও হল এমনই! সেসব সুযোগ বার বার আসে না কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে সেইসব সুযোগ বজায় থাকে না। ভালো কাজের সুযোগ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগগুলোকে তাই হাতছাড়া করা উচিত নয়। বয়ঃসন্ধিকাল মানব ব্যক্তিত্ব গঠনের একটি সংবেদনশীল পর্যায়, এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলি জানা ও তরুণদের ব্যক্তিত্বের গঠন-রূপদানকারী বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দেয়া তাদের অন্যতম অপরিহার্য চাহিদা। এটা স্পষ্ট যে মানুষের ব্যক্তিত্বের গঠন জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় এবং এমনকি এ প্রক্রিয়া তারও আগে শুরু হয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে। কৈশোর ও যৌবনের বিশেষ শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং রয়েছে তাদের বিশেষ ব্যক্তিত্বের ধারা। তাই কীভাবে তরুণ ও যুবকরা সমাজে ভূমিকা রাখবে এবং কিভাবে তারা সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে তা জানা বেশ জরুরি। কারণ এসব বিষয় মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে। এ সংক্রান্ত কৌশল আর দক্ষতাগুলো তারা এমনিতেই পরবর্তী বছরগুলোতে শিখে নিবে এমনটি আশা করা ঠিক নয়।
যুব সমাজ স্বাধীন ব্যক্তিত্বের অনুভূতি নিয়ে সমাজে উপস্থিত হয়। এ সময়ে গড়ে ওঠে তার সামাজিক সম্পর্ক। ফলে এ সময়টি তাদের জীবনের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল অধ্যায় যা তারা অনুভব করে। তাদের এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে যদি যথেষ্ট মাত্রায় বাস্তবতা, সচেতনতা, প্রজ্ঞা ও শিক্ষার সমন্বয় বা যোগসাজশ না ঘটে তাহলে তা নানা ধরনের বিপর্যয় ও তিক্ততা বয়ে আনতে পারে এবং এর ফলে বদলে যেতে পারে তরুণ বা যুবক-যুবতীদের জীবনের পুরো গতিপথ।
প্রত্যেক মানুষের শারীরিক, মানসিক, স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ও আবেগ-অনুভূতি এবং রুচির ধারা ভিন্ন ধরনের বা স্বতন্ত্র হতে পারে। মানুষের কথা, নিরবতা ও আচরণের মধ্যে তার স্বভাব, ব্যক্তিত্ব, চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতা এবং সর্বোপরি তার সামাজিক সম্পর্কের ধরণ ফুটে উঠে। মানুষের এইসব দিকের মধ্যে যেমন অনেক অমিল থাকে আবার অনেক মিলও থাকে। তবে এটা স্পষ্ট যে তরুণ ও যুব সমাজের ব্যক্তিত্বে এবং তাদের নানা বৈশিষ্ট্যের রয়েছে স্থিতিশীলতা। তাই এই সময়কে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যুক্তি ও প্রজ্ঞার ধর্ম ইসলাম।
মহানবী (সা) বলেছেন, বার্ধক্য আসার আগেই যৌবনকে গুরুত্ব দিতে শেখ তথা যৌবনকে যথাযথভাবে কাজে লাগাও! -শৈশবের চপলতা, একরোখা ভাব ও চঞ্চলতা এবং যে কোনো কাজে তাড়াহুড়া করার স্বভাব যৌবনে কমে আসে। ফলে তরুণ ও যুব সমাজ সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। নিজেকে চেনা ও জানার শিক্ষা অর্জন যুব সমাজের জন্য খুবই জরুরি। এ সময়ে তা অর্জন করা সম্ভব না হলে পরবর্তীকালেও এর নেতিবাচক প্রভাব বয়ে বেড়ায় মানুষ। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, মানুষ কোনো কিছু হারিয়ে ফেললে তা ফেরত পাওয়ার জন্য অধীর বা অস্থির হয়ে ওঠে। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার হল তারা নিজের হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি বা আত্মাকে জানা বা ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন।
মানুষের মধ্যে সুবিধাবাদ, অলসতা, আরামপ্রিয়তা, চিন্তাহীনতা বা অদূরদর্শিতা এবং অধ্যবসায়, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও কর্মপ্রিয়তার মত দুই বিপরীত স্বভাবের দ্বন্দ্ব চলে। এ দ্বন্দ্বে যদি প্রথমোক্ত প্রবণতাগুলোর বিজয় ঘটে তাহলে পরিণতি হয় অনুতাপ আর লজ্জা। আর শেষোক্ত প্রবণতাগুলোর বিজয় ঘটলে আসে পূর্ণতা, সাফল্য ও তৃপ্তি বা সন্তুষ্টি। তারুণ্য ও যৌবনের স্বাভাবিক ধর্ম হল এই শেষোক্ত প্রবণতাগুলো।
কেউ যদি মানব-জীবনের আসল লক্ষ্য বা টার্গেট ঠিক না করেই দ্রুত গতিতে একদিকে চলা শুরু করে তাহলে সে কাঙ্ক্ষিত টার্গেট বা লক্ষ্য থেকে কেবল বেশি দূরেই সরে যেতে থাকবে। তারুণ্য বা যৌবনও এর ব্যতিক্রম নয়।
যুব সমাজের মধ্যে যেসব প্রশ্ন, সন্দেহ ও জিজ্ঞাসা রয়েছে যথাসময়ে সেসবের উপযুক্ত জবাব বা ব্যাখ্যা তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি। এ ছাড়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের যোগ্যতা এবং অসাধ্য সাধনের ক্ষমতা পরিবার ও সমাজের পক্ষ থেকে উৎসাহ পায় না বলে তারা হতাশ হয়ে পড়ে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই এ বিষয়গুলোর দিকে সংশ্লিষ্ট সবার লক্ষ্য রাখা উচিত ও এ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হওয়া উচিত বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন। যুব সমাজকে আদর্শমুখী, আত্ম-সচেতন, আত্মবিশ্বাসী, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, সাহসী, সৃষ্টিশীল ও কর্মমুখী এবং উদ্যমী শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এসব বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
কোনো এক যুবক এক বৃদ্ধ ব্যক্তির বাঁকা হয়ে পড়া পিঠে হাত রেখে উপহাস করে বলল: এই ধনুকটা কতো দামে বিক্রি করবেন? বৃদ্ধ জবাব দিলেন : সময় এটা তোমাকেও বিনা মূল্যেই দিয়ে দেবে তবে তার আগে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে তোমার জীবনের সবচেয়ে দামি বস্তুটি তথা যৌবন!#
পার্সটুডে/এমএএইচ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।