জুন ০৮, ২০২৩ ২২:৪০ Asia/Dhaka
  • ডায়াবেটিসে- 'ত্রি ডিএস' মানুন- নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম /ব্যায়াম, ঔষধ সেবন

শ্রোতাবন্ধুরা! পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রোগগুলোর মধ্যে একটি ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারি হয়ে উঠছে। সারা বিশ্বে এটি একটি আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

তো এই ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগটি নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা হবে। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুল।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ডা. রাহুল: রেডিও তেহরান এর মাধ্যমে শ্রোতাদেরকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল, প্রথম পর্বের আলোচনায় আপনি খুব সহজ সরল ও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি বিষয়। ডায়াবেটিস কি, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার, ইনসুলিন, কেন ডায়াবেটিস হয়, কতরকমের ডায়াবেটিস হয় এবং এর লক্ষণগুলো। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে আপনার কাছে জানতে চাইব, ডায়াবেটিস হয়েছে কি না তা জানার জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং কি পরীক্ষা করাতে হবে?

ডা. রাহুল: আসলে ডায়াবেটিস আমাদের মধ্যে এত মারামারি হয়েছে যে আগে ধারণা করা হতো বয়স ৪০ এর উপর হলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, কিন্তু বর্তমানে কারো বয়স ৩০ কিংবা তার নিচে হলেও ডায়াবেটিস ঝুঁকি বেড়ে গেছে ।

নিয়ন্ত্রিত জীবন খুবই প্রয়োজন

তাই যাদের বয়স ৩০ এর উপরে, সবাইকে নিজ দায়িত্বে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা দরকার, আর যাদের বংশে ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে অবশ্যই বয়স ৩০ হওয়ার আগেই পরীক্ষা করতে হবে।

আপনার মধ্যে যদি ডায়াবেটিস এর কোন লক্ষণ দেখা যায়, আপনি একজন এমবিবিএস ডাক্তারের স্বরাপন্ন হতে পারেন, এক্ষেত্রে প্রথমেই শেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন নেই। আর যদি এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে না যেতে পারেন তাহলে সকালে খালি পেটে সুগার পরীক্ষা করতে হবে।

ডাক্তাররা সাধারণত একটা রেনডম ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা করে থাকেন, এটার রেজাল্টের পরিপ্রেক্ষিতে  অভুক্ত অবস্থায় ব্লাড গ্লুকোজ, HbA1C এবং কারো কারো ক্ষেত্রে OGTT পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন ডায়াবেটিস আছে কিনা।

রেডিও তেহরান: ডা, রাহুল, পরীক্ষার পর জানা গেল ডায়াবেটিস হয়েছে। তখন করণীয় কী? মানে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাটা কী হবে?

ডা. আবু কামরান রাহুল: পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারো যদি ডায়াবেটিস নিশ্চিত হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারানো বা নিরাময় করা যায় না, তবে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব।  সেক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে ডাক্তারের দেয়া তিনটি পরামর্শ মেনে চলা

ইংরেজিতে বলে থাকি 3D's

Diet, Discipline and Drugs

(নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম /ব্যায়াম, ঔষধ সেবন)

আমাদের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য থাকে ডায়াবেটিসের জটিলতা দূর করা বা বিলম্বিত করা।

১. ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়

২. রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম করার পরও যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসে সেক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করা যায়, সেটা মুখে খাওয়ার বরি হতে পারে বা ইনসুলিন ইনজেকশন হতে পারে।

পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা, ডায়াবেটিস নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: ডা, রাহুল, ডায়াবেটিস রোগটি প্রতিরোধযোগ্য?  তো কীভাবে এই প্রতিরোধটি করা যাবে?

ডা. আবু কামরান রাহুল : হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগটি প্রতিরোধ করা যায়।

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিরোধ তিনটি ধাপে করা যায়

১. প্রথম ধাপ হল প্রাথমিক প্রতিরোধ প্রাইমারি প্রিভেনশন। অর্থাৎ রোগ হওয়ার আগেই এর প্রতিরোধ করা। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা।

২. প্রতিরোধের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান।

৩. তৃতীয় ধাপ হচ্ছে যাদের ইতোমধ্যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তাদের সঠিক চিকিৎসা দেয়া এবং আরো জটিলতা যাতে না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া।

ডায়াবেটিস সাধারণত রোগীর চোখ, রক্তনালী, হার্ট, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র ও পদযুগলের ভয়ানক ক্ষতি করে।

জটিল রোগীদের চিকিৎসা আনা এবং বাসন করাও ডায়াবেটিস চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রেডিও তেহরান:  ডা. আবু কামরান রাহুল, আজকের আলোচনার শেষ ভাগে এসে যে প্রশ্নটি জানতে চাইব সেটি হচ্ছে, ডায়াবেটিস হলে নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাসের বিষয়টি আপনারা বলে থাকেন- তো এই নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস বলতে আসলে কি বোঝান আপনারা।

ডা. আবু কামরান রাহুল: নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস বলতে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ এবং ব্যায়াম বা শারীর পরিশ্রম করা বুঝায়।

ডায়াবেটিস খাদ্য-তালিকা:  ৫ টি সাধারণ মিষ্টি ফল খাওয়া যায় কৌশলে

নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ:  ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য হল ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণের রাখা, স্বাস্থ্য ভালো রাখা।

  • মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব বাদ দিতে হবে
  •  ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে হবে
  •  আসবহুল খাবার বেশি খেতে হবে
  • -ঘি, মাখন, চর্বি, ডালডা বর্জন করতে হবে
  • লাল চর্বিযুক্ত মাংস কম খেতে হবে

২) ব্যায়াম:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে কার্যকারিতা ও নিঃসরণ পরিমাণ বেড়ে যায়।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মধ্যম গতিতে হাঁটা যথেষ্ট। শারীরিক অসুবিধা থাকলে সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।

ডা. রাহুল আজ আর হাতে সময় নেই নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাসের বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পর্বে আরও বিস্তারিত শুনব আপনার কাছ থেকে। তো সাস্থ্যকথার আসরে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আর শ্রোতাবন্ধুরা! ডায়াবেটিস নিয়ে তৃতীয় পর্বে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কথা বলবেন। সে আসরেও আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার আশা করছি। একইসাথে বলে রাখছি-নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।#

স্বাস্থ্যকথার আসরটি প্রযোজনা, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

পার্সটুডে/জিএআর/৮

ট্যাগ