জুন ২৪, ২০২৩ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রোগ যে রোগটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এখন মহামারি হয়ে উঠছে সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র। সারা বিশ্বে এই রোগটি এখন আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তো আশার কথা প্রায় ৭০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য এই রোগটি। তো বলাচলে আমাদের সবার ঘরে বসবাস করা এই ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগটি নিয়ে আজ তৃতীয় পর্বের আলোচনায় যাব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুল।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব, ডা. আবু কামরান রাহুল, দ্বিতীয় পর্বের শেষভাগে নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিন্তু বিষয়টি শেষ করা যায়নি। আপনি যদি নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস যা ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন?

ডা. আবু কামরান রাহুল:

নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস গুলো হচ্ছে:

১. ছোট বেলা থেকে সবুজ শাক-সবজি, মাছ এবং কম চর্বি যুক্ত খাবারের অভ্যাস করতে হবে।

২. ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

৩. ধূমপান পরিহার করতে হবে।

৪. সময়মত ঘুমানো, স্ট্রেস পরিহার করা, সর্বোপরি নিয়মাবর্তিতা মানার মাধ্যমে নিহিত আছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের মূল ব্যবস্থা।

৫. শিশু  কিশোর ও বয়স্ক সবার মধ্যে কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৬. এই সচেতনতা গড়ে তুলতে সঠিক জীবন আচরণ তথ্য পাঠ্যপুস্তকে  অন্তর্ভুক্তি করা, মিডিশার ব্যবহার, সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদি করা।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল,এই নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাসের মধ্যে আপনি বললেন খাদ্যভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তো ডায়াবেটিস রোগীর খাবারটি কেমন হবে? এ বিষয়ে কি কোনো চার্ট মেনে চলতে হবে? যদি বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলেন?

ডা. আবু কামরান রাহুল: ডায়াবেটিস রোগীর খাবার হবে

খাদ্য তালিকা অনুযায়ী। যেটা যেকোন ডায়াবেটিস গাইডবুকে পাওয়া যাবে।

সাধারণত,

১. খাদ্য তালিকা টা হবে

শর্করা: ৫০-৬০%

চর্বি জাতীয়/ ফ্যাট: ৩০%

আমিষ/প্রোটিন: ১০-২০%

২. কোন বেলার খাবার বাদ দেয়া ঠিক নয়। একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে খেতে হবে।

৩ বেলার খাবার ৬ বার ভাগ করে খাবেন, যথা-

সকাল, মধ্য সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত, রাতে শোবার আগে

২ বেলা রুটি, দুপুরে ভাত হবে মুল খাবার।

৩. ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

৪. চর্বি জাতীয় খাবার  (যেমন: গরু/খাসির মাংস, মগজ, কলিজা, চিংড়ি মাছ, ডিমের কুসুম) কম খেতে হবে।

৫. মাটির নীচে হয় এমন সবজি কম খাবেন ( কচু, মুলা, গাজর, শালগম, ওলকপি)

মনে রাখতে হবে, আলুকে সবজি হিসাবে গণ্য করা যাবেনা। এটা ভাত বা রুটির বিকল্প খাদ্য।

৬. মাটির উপরের সব সবজি  খাওয়া যাবে তবে মিষ্টি কুমড়া কম খাবেন।

৭. কামরে খাওয়া যায় এমন ফল খাওয়া যাবে (যেমন: আপেল-নাশপাতি অর্ধেক, ছোট কলা ১ টা, বড় কলা অর্ধেক, বরই ৫-৬ টা, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই, শসা-ইচ্ছেমত। তবে কামরাঙ্গা একটু কম খাওয়া ভালো যা কিডনি এর উপর প্রভাব ফেলে।

৮.রসালো ফল ( যেমন: কমলা, আঙ্গুর, আনার, আনারস, লিচু, আম, কাঁঠাল, তরমুজ, পাকা বেল, পেপে, জাম্বুরা) কম খাবেন।

আপনার ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা মেনে চলবেন।

পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা, ডায়াবেটিস নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল একটি ছোট্ট  বিষয় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ এই রোগটির সাথে মিষ্টির একটি সম্পর্ক আছে। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না ইত্যাদি। তো ধরুন কেউ মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করেন। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তো তিনি কি একদমই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না?

ডা. আবু কামরান রাহুল: দেখেন, ডায়াবেটিস রোগীর আমরা মিষ্ট ও মিষ্টি জাতীয় খাবার (যেমন চিনি, গুড় কিংবা চিনি গুড় দিয়ে তৈরী মিষ্টি জাতীয় খাবার) নিষিদ্ধই বলে থাকি। তবে, শর্ত সাপক্ষে (যেমন, সুগার কমে গেলে) খেতে পারবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টির প্রতি আকর্ষন একটু বেশিই থাকে। মিষ্টি খাওয়া নিষেধ বলা হয় কারন, মিষ্টির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশী, যা খাওয়ার সাথে সাথেই রক্তের সুগার বাড়িয়ে ফেলে।

রেডিও তেহরান: ডা. আবু কামরান রাহুল, ডায়াবেটিস হলে অর্থাৎ সুগার লেভেলটা কত থেকে কত এর মধ্যে থাকতে হবে। কত হলে বিপদ আর কত হলে স্বাভাবিক?

ডা. আবু কামরান রাহুল: ধন্যবাদ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্য। আমরা অনেকেই জানিনা, আমাদের ডায়াবেটিস চিকিৎসার মুল উদ্দেশ্য কী।

দেখেন ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিসের আগাম ভবিষ্যৎ জটিলতাকে কমানো। এর মানে হচ্ছে, ডায়াবেটিস হলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি করবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বা অনিয়ন্ত্রিত থাকে।

নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বলতে বুঝায়,  যে কোন সময় রক্তের গ্লুকোজ (গ্লুকোমিটারে) ৪ থেকে ১০ মিলিমোল/লিটার এর মধ্যে থাকতে হবে। আরো নির্দিষ্ট করে যদি বলি, অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলিমোল/লি. এর নিচে এবং খাওয়ার দুই ঘন্টা পর ১০ মিলিমোল/লিটার এর নীচে থাকতে হবে। তবে বয়স ৬০ এর উপরে হলে একটু কম লেভেল বাড়িয়ে দেয়া হয়।

এখন কেউ কষ্ট করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে আর কেউ যদি না রাখে তাদের মধ্য পার্থক্য হলো, যে নিয়ন্ত্রণে রাখতেছেনা সুগার লেভেল সবসময় ১০ এর উপর থাকে তাহলে তার আগাম ভবিষ্যৎ জটিলতা (যেমন: কিডনি অকেজো হওয়া, হার্ট অ্যাটাক হওয়া, ব্রেন স্ট্রোক হওয়া, চোখের ছানী পড়া, রক্তের নালী ব্লক হওয়া) এগুলা তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আর যে নিয়ন্ত্রণে রাথতেছে, তার জটিলতা আসতে অনেক বছর বিলম্বিত হবে।

তাই, ডায়াবেটিস যদি আমরা নির্দিষ্ট টার্গেটের মধ্যে রাখি এটা আমাদের অনেক স্বস্তির বিষয়।

তো ডা. আবু কামরান রাহুল ডায়াবেটিস নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায় রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। #

 সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ

পার্সটুডে/জিএআর/২৪

ট্যাগ