ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ ১১:১৪ Asia/Dhaka

মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আদব বা শিষ্টাচার জরুরি। প্রতিদিন আমাদেরকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নানা ধরণের মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। এ সময় আমাদের আচার-আচরণ আসলে কেমন হওয়া উচিত। বিজ্ঞজনদের সাধারণ সূত্র হলো, মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে, বয়সে যারা বড় তাদেরকে মান্য করতে হবে এবং যেকোনো মানুষের সঙ্গেই সদাচরণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই বড়দের শ্রদ্ধা করতে শেখাতে হবে। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অর্থ নিজের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা। আসলে শৈশবে যে শিষ্টাচার শেখে না, পরিণত বয়সেও তার কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বিদ্যা-বুদ্ধি, শিক্ষা-দীক্ষা প্রভৃতির সমাবেশে চিত্ত ও মনের যে প্রকৃত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তা ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। অনেকেই অহংকারের কারণে অন্যকে শ্রদ্ধা করতে পারে না। অনেকে মনে করে বড়দের সম্মান বা মর্যাদা দিলে সে ছোট হয়ে যাবে। কিন্তু সে বুঝতে চেষ্টা করছে না অন্যকে মর্যাদা দিলে যে নিজেরও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। অন্যকে সম্মান দেওয়ার মানে এই নয়, নিজে ছোট হয়ে যাওয়া। অন্যকে সম্মান দিলে নিজের মহত্ত্ব যে কত বেড়ে যায় সেই চিন্তা অনেকের মাঝে নেই। 

বর্তমানে সমাজে নানা কারণে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। আর এই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে শ্রদ্ধাবোধেরও অবনতি হচ্ছে। তবে যারা বড়দের তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে ছোটদেরকে আদর-সোহাগে শিষ্টাচার শেখানো। আপনি ছোটদেরকে সালাম দিতে শুরু করুন, দেখবেন তারা এরপর থেকে আপনার আগেই সালাম দেওয়ার চেষ্টা শুরু করবে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, যে আগে সালাম দেবে সে বেশি সওয়াব পাবে। ছোটরা আমাকে শ্রদ্ধা করছে না সেজন্য তাদের অপরাধী ভাবলে চলবে না। তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসতে হবে। তাদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে শ্রদ্ধার যোগ্য করে তুলতে হবে। শ্রদ্ধার যোগ্যতায় নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন কথা বলার ধরন, চলাফেরা, আচরণ ছোটদের কাছে অনুকরণীয় হয়। ওরা যেটা জানে না, বোঝে না, সেটা ওদের জানাতে ও বোঝাতে হবে। ওদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে তাদের ভদ্র মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

শিষ্টাচার হচ্ছে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ। প্রথম সাক্ষাতে আপনি একজন মানুষকে ভালো বা মন্দ হিসেবে বিচার করেন মূলত সে ব্যক্তির আচরণ দেখেই। আর ভালো আচরণের বৈশিষ্ট্য হলো সংযম ও বিনয়। শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি তার ভদ্র ও সংযত ব্যবহার দিয়ে যেকোনো পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। আর এমন মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে; হোক সে ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরিব। পৃথিবীতে যারা মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তারা শিষ্টাচার ও মার্জিত ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। প্রত্যেক ধর্মেই আদব ও শিষ্টাচারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (স.) গোটা মানবজাতির জন্য আদর্শ। তিনি নিজের আচার-আচরণের মাধ্যমে সবার জন্য শিষ্টাচারের শিক্ষা রেখে গেছেন। তিনি এতটাই বিনয়ী ছিলেন যে,  ছোট-বড় সবাই তাকে পছন্দ করত। সংযম, বিনয়, ভদ্রতা তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কখনও তিনি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি, উদ্ধত আচরণ করেননি। এ কারণেই যুগে যুগে মানুষের কাছে তিনি এত শ্রদ্ধার পাত্র। 

শিষ্টাচারের বীজ মূলত বপিত হয় শিশুকালে। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। পরিবারের বড়রা যে রকম ব্যবহার করে শিশুরা তাই অনুকরণ করে। বাল্যকালে শিশুদের সংযম, বিনয় ও উন্নত রুচির চর্চা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলে। আজ আমরা আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করব যা সবারই বর্জন করা উচিত। গ্রাম-গঞ্জে ভোর বেলায় খুব চোখে পড়ে, বাড়ির সামনে বা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো দাঁত ব্রাশ করতে করতে বিভিন্নজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে, আবার কেউ কেউ বাইরে না বেরোলেও বাসার ভেতর হেঁটে হেঁটে দাঁত ব্রাশ করছে। এভাবে হেঁটে হেঁটে দাঁত ব্রাশের ফলে মুখের টুথপেস্ট ছিটকে বাইরে পড়ে, বাসাবাড়ির ওয়াল, ফার্নিচার, কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়। যারা এটি দেখে, তাদের মধ্যে অরুচি ভাব তৈরি হয়। দাঁত ব্রাশ ওয়াশরুমেই সম্পন্ন করা উচিত, যা কেউ আমাদের বুঝিয়ে ও শিখিয়ে দিচ্ছে না। এ বিষয়গুলো ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বললে যে কেউ সহজেই নিজেকে সংশোধন করতে পারবে।  

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে শিষ্টাচার অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। ছোটবেলা থেকেই ভদ্রতা ও কথা বলার ধরন শেখানো উচিত। কারণ মানুষের মধ্যে এসবের ঘাটতি থাকলে অনেক ভালো গুণও ম্লান হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো ছোটবেলায় যদি বাচ্চাদের মনে গেঁথে দেয়া যায়, তারা সারা জীবন তা মনে রাখবে এবং ওইভাবে চলার চেষ্টা করবে। 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ