মে ১২, ২০১৮ ২০:২১ Asia/Dhaka

ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত ৩৬তম ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে Buddhas shame যার বাংলা রুপ 'বিমর্ষ বুদ্ধ' ডকুমেন্টারিটি দেখার পর তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মজিবুর রহমান ভূঁঞা বললেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করুণদশা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের যেভাবে নির্যাতন করে বের করে দেয়া হয়েছে তা জাতিগত নিধনের পর্যায়ে পড়ে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তিনি মানবিকবোধ সম্পন্ন সব ব্যক্তি, সংগঠন ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ করেছেন সৈয়দ মূসা রেজা। উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: আপনার কাছে জানতে চাইব,' বিমর্ষ বুদ্ধ সিনেমাটি দেখার পর আপনার অনুভূতি কী?

তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা

মজিবুর রহমান ভূঁঞা: বুদ্ধ শান্তির বাণী প্রচার করেছেন এবং তার অনুসারীরা শান্তির পথ অনুসরণ করে থাকেন বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু সে দেশে মুসলমানদের ওপর যে বারবার অত্যাচার করা হয়েছে তার গভীরতা সাগরের মতো। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের যেভাবে নির্যাতন করে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে জাতিগত নিধনের পর্যায়ে পড়ে। বিমর্ষ বুদ্ধ ডকুমেন্টারি সিনেমাটিতে যা দেখানো হয়েছে-সেটি হচ্ছে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর যেভাবে জীবনযাপন করছেন সেটি তুলে ধরা হয়েছে। এই চিত্র থেকে বোঝায় যায় রোহিঙ্গা মুসলমানরা কী ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছিল! রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা বাংলাদেশ সরকারের যথাসাধ্য তৎপরতা কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো বিদেশি সহায়তার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা সিনেমাটির আলোকে রোহিঙ্গাদের যে সহায়তা তৎপরতা চলছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ আছে কী না?

মজিবুর রহমান ভূঁঞা: দেখুন, প্রায় ৭ লক্ষের মতো রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগেও বহু রোহিঙ্গা সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন আমাদের দেশে। সবমিলিয়ে প্রায় ১ মিলিয়নের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছেন। এই বিপুল সংখ্যক শরাণার্থীকে সার্বিক সহায়তার জন্য বিপুল উদ্যোগের প্রয়োজন। আমাদের সরকার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের সহায়তা করার। বিষয়টি কেবল ওষুধ ও খাবারের নয়; এরসাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক বিষয়। কিছু বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে এজন্য বেশকিছু সহায়তা পাচ্ছি তবে তা যথেষ্ট নয়। আরো বেশি সহায়তার প্রয়োজন।

রেডিও তেহরান: জনাব মুজিবুর রহমান: আপনি কী রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে আরো কিছু বলতে চান?
 

মজিবুর রহমান ভূঁঞা: দেখুন রোহিঙ্গাদের কষ্টের  বিষয়টি অনেক বেশি হৃদয় ও অনুভূতিকে নাড়া দেয়। তাদের কষ্টের বিষয়টি আসলে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মানবিকবোধ সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ, সংগঠন ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা উচিত। মিয়ানমার থেকে যেকারণে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে সে সংকটের যেন সমাধান হয়। রোহিঙ্গা মুসলমানরা যেন তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে গিয়ে সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারে। 

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক শাওলী মাহবুব রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানিয়ে জানতে চাইছি 'বিমর্ষ বুদ্ধ' মানবিক ডকুমেন্টারি ফিল্মটি দেখার পর আপনার অনুভূতি কী?

 

অধ্যাপক শাওলী মাহবুব

বাম দিক থেকে দ্বিতীয় অধ্যাপক শাওলী মাহবুব

অধ্যাপক শাওলী মাহবুব:  দেখুন, বিমর্ষ বুদ্ধ' ডকুমেন্টারি দর্শকদের কাছে সাংঘাতিকভাবে আবেদন রেখেছে। এ ধরণের ডকুমেন্টারি আরো তৈরি হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

আমি আরো বলবো, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে আরো বেশি বেশি সহায়তা আসা দরকার। নইলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে মানবিক বিপর্যয় তা আরো মারাত্মক আকার ধারন করবে।

মুর্তজা অতাশ যামযম

রেডিও তেহরান: জনাব মুতর্জা অতাশ যামযম, ফিল্মটির নির্মাতা হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাইছি-রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ইরানে কী এটাই প্রথম কোনো ডকুমেন্টারি?

সর্ববামে মুর্তজা অতাশ যামযম , মাঝে রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা

মুর্তজা অতাশ যামযম: জি, ইরানে সম্ভবত এটাই প্রথম। তবে বিশ্বের কথা জানি না। নিশ্চয়ই অন্য দেশের অনেকে সেখানে গেছেন এবং ডক্যুমেন্টারি তৈরি করেছেন। তবে আমি এটাও জানি যে, বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি একটা কাজ হয়নি। আমার ভাবতে অবাক লাগে, রোহিঙ্গারাও তো মানুষ, কেন তাদের নিয়ে ফিল্ম তৈরি হচ্ছে না? আমি আশা করব এ বিষয়ে আরো বেশি বেশি ফিল্ম তৈরি হবে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অনেক কম ফিল্ম তৈরি হওয়ার কারণে পরিচালক হিসেবে আমি মোটেও খুশি নই। আরো অনেক বেশি ফিল্ম তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

রেডিও তেহরান: রোহিঙ্গা মুসলমান কিংবা বাংলাদেশের ব্যাপারে আপনার কি আরো কাজ করার ইচ্ছা আছে?

মুর্তজা অতাশ যামযম: রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে আমার মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমার আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক পুরনো।  আমি যেহেতু ফিল্ম প্রডিউসার এবং সিনেমা ও টিভি সিরিয়াল তৈরি করাই আমার কাজ সেজন্য ইরান ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে একটি ধারাবাহিক তৈরির পরিকল্পনা আমার মাথায় আছে। তবে আপাতত আমি রোহিঙ্গাদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে চাই। বিষয়টা আমার কাছে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

বিতাড়িত রোহিঙ্গা  মুসলমান

আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব তারা তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাক। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাক রোহিঙ্গারা। এটি আসলে একটি মানবিক সংকট।  দেখুন, অং সান সুচি মিয়ানমারে সেনা শাসনের সময় গৃহবন্দি ছিলেন। তখন এই নারী নেত্রীর জন্য আমার খারাপ লাগত। তিনি তখন নির্যাতিত ছিলেন। কিন্তু আজ যখন তিনি দেশনেত্রী হলেন তখন তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সেই আচরণটি করলেন যেটি সেনাবাহিনী তার সঙ্গে একদিন করেছিল। কাজেই একদিন সু চি’র প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল তা আজ ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। বিষয়টা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

রেডিও তেহরান: রেডিও তেহরান: সবশেষে আমি আপনার কাছে জানতে চাইব, রেডিও তেহরানের বাংলা প্রোগ্রামের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আপনি কিছু বলবেন কি?

মুর্তজা অতাশ যামযম: প্রথমত, আমার জানা ছিল না যে, ইরান থেকে বাংলা ভাষায় রেডিও অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান আছে জেনে খুশি হলাম। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এটা আমার জানা উচিত ছিল। ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব এ ধরনের তথ্য শূন্যতা যেন আমার মধ্যে না থাকে। 

যাইহোক, আমি খুশি হয়েছি এটা ভেবে যে, ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে রেডিও তেহরান বাংলা প্রোগ্রামের মতো একটি সেতুবন্ধন রয়েছে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমঙ্গেও আপনাদের শ্রোতা রয়েছে। আমি সত্যিই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে আত্মার টান অনুভব করি। তারাও আমাদের ইরানিদের মতো অতিথিপরায়ণ ও দয়ালু। বাংলাদেশে অবস্থানকালে বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে।# 


পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১২