মার্চ ০৭, ২০২১ ১৫:৩০ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল জাব্বার। এই মহাগ্রন্থে জাব্বার নামটি দশ বার এসেছে।

তবে এই দশবারের মধ্যে নয় বারই এসেছে জালিম, বিদ্রোহী ও অনাচারী অর্থে। কেবল একবার মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হিসেবে শব্দটি এসেছে সুরা হাশরের ২৩ নম্বর আয়াতে। এই আয়াতের অর্থ হল: তিনিই আল্লাহ তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, সব ত্রুটি থেকে পবিত্র,  তিনি কারো ওপর জুলুম করেন না। তিনি মুমিনদের নিরাপত্তা দান করেন।  বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর সংরক্ষক। শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, সব কিছুর ওপর পরাক্রান্ত ও অপরাজেয়, তিনি তার অদম্য ইচ্ছার মাধ্যমে সব কিছুকে সংশোংশন করেন। তিনি প্রতাপান্বিত, গৌরবান্বিত ও মাহাত্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। 

জাব্বার নামটি প্রতিপালক অর্থে ব্যবহৃত মহান আল্লাহর রব বা রাব নামের আওতাধীন একটি নাম। মহান প্রতিপালক আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দার সব ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে দেন ও সব মন্দ দূর করেন। আর এই অর্থে তিনি জাব্বার। মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অর্থও এ শব্দের অন্যতম দিক। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম ক্ষমতাবলে সব ধরনের মন্দ, অনাচার, অনিষ্ট, অন্যায় বা জুলুম দূর করতে বা সংস্কার করতে পারেন। এ জন্যই আল্লাহকে জাব্বার বলা হয়।   

মহান আল্লাহর জাব্বার, মুতাকাব্বির, মুন্তাকিম, কাহ্হার, মুজিল্লু -এইসব নাম মানুষের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় অনেক সময়। ফলে অনেকেই মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এসব শব্দের যথাযথ অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান রাখেন না। তারা মনে করেন মানুষের ক্ষেত্রে যেসব নেতিবাচক অর্থ করা হয় এসব শব্দ ব্যবহার করে মহান আল্লাহর ক্ষেত্রেও তা-ই প্রযোজ্য। যেমন, সেইসব মানুষকে জাব্বার বলা হয় যারা অত্যাচারী এবং নিজেদের দাপট তুলে ধরার জন্য যারা বল প্রয়োগ করে ও এভাবে অন্যদের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয়।

কিন্তু মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে জাব্বার নামের বেশ কয়েকটি ইতিবাচক অর্থ রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহর অতুল মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। কারণ মহান আল্লাহর বাস্তবতার পূর্ণ রূপ ও সত্তার রহস্য কারো পক্ষেই জানা ও বোঝা সম্ভব নয়। কোনো বুদ্ধিবৃত্তি মহান আল্লাহর অতুল মহত্ত্বের পরিধির বিষয়টি কল্পনাও করতে পারে না এবং কোনো দৃষ্টি বা চোখ আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের বিশালতা ও ব্যাপকতা দেখার ক্ষমতাও রাখে না।

মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে জাব্বার নামের আরেকটি অর্থ হল সংশোধনকারী ও ক্ষতিপূরণকারী। তাই আরবীভাষী অনেকেই ভগ্নতার সংশোধনের অর্থে বলে থাকেন 'জাবারতাল কাসরা' তথা ভগ্নতাগুলো মেরামত করেছে সে। হাতে ব্যান্ডেজ বা পট্টি থাকার কারণে তার ওপর মসেহ করার মাধ্যমে যে ওজু করা হয় তাকে বলা হয় জাবিরে পদ্ধতির ওজু। ওজুর অঙ্গে ভগ্নতা বা জখম থাকলে যে ব্যান্ডেজ বাধা হয় তাকে বলা হয় জাবিরে।

মহান আল্লাহ জাব্বার বলেই  যেসব অন্তর মহান আল্লাহর অতুল মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব দেখে নতজানু হয় বা ভেঙ্গে পড়ে খোদাপ্রেম ও খোদাভীতির কারণে সেইসব অন্তরকে বিশেষ অনুগ্রহ করেন তিনি। তিনি দরিদ্রকে ধনী বা স্বচ্ছল করে দেন। মহান আাল্লাহ মানুষের নিঃস্বতা ও অভাবের কষ্টকে সহজ করে দেন। বিপদাপন্ন মানুষকে দান করেন ধৈর্য। মহান আল্লাহ তার প্রিয় দাসদের অন্তরকে সম্মান, অনুগ্রহ, জ্ঞান ও ঈমানের মিষ্টতায় ভরপুর করে দেন এবং এভাবে তাদের যত্ন নেন। তাই মহান আল্লাহ হচ্ছেন এমন এক জাব্বার যিনি ভগ্নতা ও ত্রুটি পূরণ করে দেন এবং সব অনিষ্টকে দূর করেন। কেউ পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। আর মহান আল্লাহর এ কাজটিও হল জাব্বারিয়াত। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী গোনাহ করার পর কেউ যদি তওবা করে তাহলে মহান আল্লাহর ক্ষমার কারণে তার অবস্থা এমন হয় যে সে যেন কোনো গোনাহই করেনি।

পাপাচার মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং মানুষের চোখ, কান ও অন্যান্য অঙ্গে এমন পর্দা ফেলে যে তাতে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। আর পাপের এই বোঝার স্বরূপ বুঝতে পেরে কেউ যখন অনুশোচনার আগুনে জ্বলতে থাকে তখন তার ভগ্ন হৃদয় মেরামত করে দেন মহান আল্লাহ।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের কাজ স্থায়ী। মুমিন বান্দাহর মৃত্যুর পরও আল্লাহ তার কমতি বা ঘাটতিগুলো এমনভাবে মিটিয়ে দেন যে সে বেহেশতে স্থান পায়।

মানুষসহ সৃষ্টিকুলের জীবন ও মৃত্যু এবং আরও অনেক বিষয় মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন বলেই মহান আল্লাহ হলেন জাব্বার। মহান আল্লাহ জাব্বার হলেও তিনি কোন বান্দাহকে তাঁর ইবাদত করতে বা অনুগত হতে বাধ্য করেন না। তবে তিনি সৃষ্টিকুল ও নিজ দাসদের ওপর বিজয়ী এবং কর্তৃত্বশীল।

মহান আল্লাহর জাব্বারিয়াত বা জাব্বারসুলভ বৈশিষ্ট্য  সব বিষয়ে তাঁর পরিপূর্ণ ও অসীম জ্ঞান, শক্তি ও প্রজ্ঞা থেকে উৎসারিত। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যদি জাব্বার বা বলদর্পি হয় সেটা অজ্ঞতা, অপূর্ণতা, ক্রোধ , ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা ও লোভ থেকে উদ্ভূত হয়। জালেম শাসক বা ব্যক্তিরা যখন দেখে যে মানুষ তাদেরকে মান্য করছে না বা সম্মান দেখাচ্ছে না তখন তারা জনগণের ওপর জুলুমের মাধ্যমে বা জোর করে নিজ মত চাপিয়ে দেয়। কিন্তু মহান আল্লাহ জালিম অর্থের জাব্বারকে বা বলদর্পিদের পছন্দ করন না। সুরা কাফ-এর ৪৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মহানবীকে (সা) জাব্বার মনে করার মত ধারণা থেকে মুক্ত করেছেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে :

হে নবী! তারা অসত্য বা অলীক যা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি ও তারা এ জন্য শাস্তি পাবে আমার পক্ষ থেকে। আপনি তো তাদের উপর জোরজবরকারী নন যে জোর করে তাদেরকে সত্য গ্রহণে বাধ্য করবেন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।

সুরা মারিয়ামের ৩২ নম্বর আয়াতে হযরত ঈসা আ. জাব্বার বা  জালেমদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে বলছেন: মহান আল্লাহ আমাকে উদ্ধত বা বলদর্পি ও হতভাগা করেননি।

অন্যকথায় বিনম্র, সৎ ও অনুগত বান্দাহ'র বিপরীত বৈশিষ্ট্য হিসেবে মানুষের ক্ষেত্রে জাব্বার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মহান আল্লাহ নিজের জন্য ও বান্দাহর জন্য উদ্ধত-বলদর্পি আচরণ পছন্দ করেন না। সর্বশক্তিমান ও অপরাজেয় এবং ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মহান আল্লাহর পক্ষেই কেবল সর্বশ্রেষ্ঠত্বের গৌরব শোভা পায়। তাই মহান আল্লাহর ইচ্ছাই হল চূড়ান্ত। সবার ওপর কর্তৃত্বশীল ও বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও তিনি জালিম নন ও অবিচারপূর্ণ সিদ্ধান্ত কারো ওপর চাপান না। তাই আমাদেরকেও জুলুম ও বলদর্পিতা থেকে দূরে থাকতে হবে।  #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।