মার্চ ১০, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

পপবিত্র কুরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল মুতাকাব্বির। এই নামের অর্থ মহত্ত্ব, বড়ত্ব, উচ্চ মর্যাদা ও গৌরবের অধিকারী।

মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হিসেবে এ শব্দটি এসেছে সুরা হাশরের ২৩ নম্বর আয়াতে। এই আয়াতের অর্থ হল: তিনিই আল্লাহ তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, সব ত্রুটি থেকে পবিত্র,  তিনি কারো ওপর জুলুম করেন না। তিনি মুমিনদের নিরাপত্তা দান করেন। বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর সংরক্ষক। শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, সব কিছুর ওপর পরাক্রান্ত ও অপরাজেয়, তিনি তার অদম্য ইচ্ছার মাধ্যমে সব কিছুকে সংশোংশন করেন। তিনি প্রতাপান্বিত, গৌরবান্বিত ও মাহাত্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র।

মানুষের ক্ষেত্রে মুতাকাব্বির নামের অর্থ নিজেকে বড় মনে করা, নিজের প্রশংসায় ডুবে থাকা বা আত্মতুষ্টি ও অহংকার। কিন্তু মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এ নামের অর্থ সর্বোচ্চ মহত্ত্ব বা গৌরবের অধিকারী। এই শব্দের মূল অংশটি হল কিব্‌র্। মহান আল্লাহ এই কিব্‌র্‌ বা শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী বলেই বলা হয় -আল্লাহু আকবার বা আল্লাহ সবচেয়ে বড় বা সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি এত অসীম বড় যে তা বর্ণনাতীত। মহান আল্লাহ না চাইলে কোনো কিছু অস্তিত্ব লাভ করতে বা সৃষ্টি হতে পারে না।

মহান আল্লাহ নিজেকে মুতাকাব্বির মনে করেন কারণ তিনি কিবরিয়া তথা অনন্য গৌরব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যদার অধিকারী। অভিধানে কিবরিয়া বলতে এমন মহাসম্রাটকে বোঝানো হয় যার কর্তৃত্ব চিরন্তন ও চিরস্থায়ী।  আর কেবল মহান আল্লাহর অক্ষয়-অমর সত্ত্বা বা অস্তিত্বই এই অনন্য সম্মানের উপযুক্ত।  মহান আল্লাহর অশেষ মহত্ত্ব, ঔজ্জ্বল্য ও অতুলনীয় শ্রেষ্ঠত্বের মোকাবেলায় অন্য কারো আমিত্ব বা গৌরব প্রকাশ হাস্যকর। যে যত বড়ই হোক না কেন মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের মোকাবেলায় অতি তুচ্ছ ও হীন। তাই গরিমা বা কিব্‌র্‌ মহান আল্লাহরই একটি সত্ত্বাগত বৈশিষ্ট্য যা সমস্ত পূর্ণতা ও বিষয়-আশয় বা সম্পদের অধিকার একমাত্র তাঁরই রয়েছে বলে বোঝায়। আর এই সব কিছুই আল্লাহর নিজেরই এবং তা তিনি কারো থেকে নেননি ও কেউ তাঁকে দেয়নি।

মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাক্বির (আ) বলেছেন, অহংকার বা গরিমা হচ্ছে মহান আল্লাহর পোশাক। অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর এই পোশাক নেয়ার জন্য তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা সংঘাতে লিপ্ত।  এই বর্ণনার আলোকে বলা যায় মহান আল্লাহর মোকাবেলায় মানুষের গৌরব বা গরিমার দাবি হাস্যকর মিথ্যা দাবি। বিশ্বজগতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। মানুষ বা অন্য কারো কাছে কিছু থাকলেও তা হচ্ছে আল্লাহরই অনুগ্রহ মাত্র। তাই সব নবী-রাসুল ও পরিশুদ্ধ ব্যক্তিরা আল্লাহর দরবারে বিনয় ও দুর্বলতা প্রকাশ করেন। মহান আল্লাহ যদি কাউকে সোলায়মান নবীর মত বিশাল রাজত্ব ও ক্ষমতা দিয়ে থাকেন তবুও সে আল্লাহর কাছে তুচ্ছ দরিদ্র ও আল্লাহর মুখাপেক্ষী। পবিত্র কুরআনের সুরা ফাত্বিরের  ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে জনগণ! তোমরা সবাই মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী তথা আল্লাহর কাছে ফকির।

মানুষের নিজস্ব বা নিজের বলতে কিছুই নেই। তার যা আছে সবই আল্লাহরই দয়া ও করুণার দান মাত্র। তাই আল্লাহর দেয়া কিছু পেয়ে মানুষ যদি অহংকার দেখায় তাহলে তা চরম অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা মাত্র। অহংকারী আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। কারণ সে তার সব কিছু আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েও আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করে! যেমনটি ফিরআউন বলেছিল আমি তোমাদের বড় রাব বা প্রতিপালক!(সুরা নাজিয়াত,২৪) তার খোদাদ্রোহিতার পরিণতি আমরা সবাইই জানি।

আসলে মানুষ হয়েও যারা প্রভুত্বের দাবি করে মানুষের ওপর ও আল্লাহকেও চ্যালেঞ্জ করে তাদের স্থান হবে জাহান্নাম।

মহান আল্লাহর তাকাব্বর বা অহংকারের উৎস হল তাঁর অস্তিত্বের পরিপূর্ণতা, স্বয়ংক্রিয়তা ও অনির্ভরতা। সুরা যাসিয়ার ৩৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: নভোমণ্ডলে ও ভূ-মণ্ডলে একমাত্র তাঁরই তথা আল্লাহরই রয়েছে গৌরব-গরিমা। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

সব কিছুই মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী অথচ আল্লাহ কারোই মুখাপেক্ষী নন। তাই মানুষের তাকাব্বুরি বা অহংকার এক ধরনের মানসিক রোগ বা দুর্বলতারই প্রকাশ মাত্র। আমরা যদি মহান আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হতে চাই তাহলে কি অহংকারেরও চর্চা করব? এর উত্তর হল মানুষের জন্য খোদায়ী অহংকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এমন এক ধরনের প্রশংসনীয় অহংকারও রয়েছে। তবে সত্যিকারের মৌলিক অহংকার একমাত্র মহান আল্লাহরই অধিকার।

উল্লেখ্য শয়তানের অভিশপ্ত হওয়ার ও পতনের কারণ ছিল নিষিদ্ধ বা নিন্দনীয় অহংকারে লিপ্ত হওয়া। শয়তান অহংকারের কারণে মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে হযরত আদম (আ)-কে সিজদা করেনি। সে এ অপযুক্তি দেখায় যে আদম মাটির তৈরি আর সে আগুনের তৈরি। কিন্তু মহান আল্লাহ আদমকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন ও তাঁর মধ্যে ফুকেছেন খোদায়ি রুহ। তাই শয়তান অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার শিকার হয়ে অহংকারে লিপ্ত হয়েছে। ফলে তার ছয় হাজার বছরের ইবাদত এক মুহূর্তে বরবাদ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য শয়তানের সেই ছয় হাজার বছরের ইবাদাত বলতে ইহলোকের ছয় হাজার না পরলোকের হিসাব অনুযায়ী ছয় হাজার বছরের ইবাদাত ছিল তা স্পষ্ট নয়। তাই মানুষও যদি এ ধরনের নিন্দনীয় অহংকারে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্যও নিঃসন্দেহে শয়তানের পরিণতি রয়েছে যদিও তার ইবাদাতের অতীত ইতিহাস শয়তানের চেয়েও হয় বেশি সমৃদ্ধ।

মানুষের জন্য খোদায়ী অহংকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এমন এক ধরনের প্রশংসনীয় অহংকার হল ইসলামের সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত উদ্ধত ও দাম্ভিক কাফের-মুশরিকের মোকাবেলায় অহংকার করা। মুমিন মুসলমান এ ধরনের কাফের মুশরিকের মোকাবেলায় নতজানু ভাব ও নম্রতা দেখাতে পারে না। আজ মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মোকাবেলায় যেমন নম্রতা দেখাচ্ছে কোনো কোনো আরব শাসক তা মুসলমানের জন্য শোভা পায় না। এ ধরনের নম্রতা কাফেরদের আরো দাম্ভিকতা ও স্পর্ধা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ধরনের কাফের-মুশরিকের মোকাবেলায় মুমিনের অহংকার প্রশংসনীয়।

মুমিন নারীদের ক্ষেত্রেও পরপুরুষের মোকাবেলায় অহংকার ও অনমনীয় আচরণ প্রশংসনীয় যাতে পরপুরুষের মধ্যে তার ব্যাপারে কখনও প্রলোভন সৃষ্টি না হয়। তবে পরপুরুষ না থাকলে অন্যদের মধ্যে নারীরও উচিত স্বাভাবিক আচরণ করা। কারণ অহংকার হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাব।

মুমিনের আরেকটি প্রশংসনীয় অহংকার হচ্ছে মহান আল্লাহর নির্দেশের মোকাবেলায় অন্য সব কিছুকে অগ্রাহ্য করা।  যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কথা মনে রেখে যে কোনো ধরনের অন্যায় ও পাপের প্ররোচনায় নতি স্বীকার করে না সে এমন অহংকারে লিপ্ত যে অহংকার মহান আল্লাহ পছন্দ করেন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।