মার্চ ৩১, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম গাফ্‌ফার। পবিত্র কুরআনে ৫ বার এ শব্দটি এসেছে।

এ নামের অর্থ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, আবৃতকারী বা যে ঢেকে রাখেন বা গোপন রাখেন। সব কিছুর স্রস্টা ও রূপদাতা মহান আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে নোংরা ও বিশ্রী বিষয়গুলো ঢেকে রাখেন যাতে ফুটে উঠে সৌন্দর্য। মানুষ যখন পাপ করে এবং এরপরই এর ক্ষতি বুঝতে পেরে তওবা করে ও অনুতপ্ত হয় তখন মহান আল্লাহর এই নামের দর্শন প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ তওবাকারীকে ক্ষমা করে দেন যাতে পাপের বিশাল ক্ষতি মানুষের পূর্ণতা অর্জনের পথে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষ সহজাতভাবেই সৌন্দর্য ভালবাসে ও অসুন্দর কিছু নিজের মধ্যে থাকলে তা ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। মানুষের মন ও আত্মাও সেরকম। মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন সুন্দর আকৃতি। সুরা তাগ্বাবুনের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী করেছেন তোমাদের আকৃতি। ...

মহান আল্লাহ মানুষের বাহ্যিক আকৃতিকে সুন্দর করার পাশাপাশি তার মনের দিকটা ও আত্মিক দিকটাকেও সুন্দর রাখার ব্যবস্থা করেছেন। মানুষ কখনও কখনও উদাসীনতা ও অজ্ঞতার কারণে পাপ করে বসে। কিন্তু সুন্দর মনোবৃত্তি ও বিবেকের প্রভাবে সে পাপের বিষয়টি বুঝতে পারা মাত্রই তওবা করে। মহান আল্লাহই মানুষকে দিয়েছেন ভালো-মন্দের ও পাপ-পুণ্যের এবং সুন্দর-অসুন্দরের ধারণা। তাই তওবাকারীকে মহান আল্লাহ তার গাফ্‌ফার নামের গুণে ক্ষমা করে দেন যাতে মানুষের আত্মাও সুন্দর থাকে। মহান আল্লাহর এই গুণের কারণে মানুষ যে কেবল ক্ষমাই পায় তা নয় একইসঙ্গে তওবাকারী মানুষের মন থেকেও পাপের প্রভাব বিলুপ্ত হয় যাতে পাপের কথা স্মরণ করে সে আর কষ্ট অনুভব না করে।

সুরা ত্বাহার ৮২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।

আমরা অনেক সময় মৌখিক তওবা করি ও পাপ আর করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করি মহান আল্লাহর কাছে। কিন্তু তারপরও আবারও সেই একই পাপ করি যা করেছি আগে। এ ধরনের তওবা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এমন আন্তরিক তওবা করতে হবে যে তার ফলে হৃদয়ে ঈমান জোরদার হবে এবং সৎ কাজের মাধ্যমে তা প্রকাশ হবে। আর এমন তওবাকারীর পাপরাশিই মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন বা ঢেকে রাখেন।

যে সৎকর্ম করে সে সুপথ বা হেদায়েত পেয়েছে। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে পাপকে বাধা হিসেবে দেখতে পায় ও পাপের কারণে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের অবস্থান খুব নিচু পর্যায়ে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে যে এই পাপই তার পূর্ণতার পথে বাধা। তখন সে তওবা করে ও তওবা করে আল্লাহকে ক্ষমাশীল বা গাফফার হিসেবে দেখতে পায়। এ অবস্থায় আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে ও পাপের কারণে আত্মায় যে কালিমা বা আঁধার দেখা দিয়েছে মহান আল্লাহ তওবার পুরস্কার হিসেবে তাও দূর করে দেন।

মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল বলে তা অনেক অনুগ্রহ ও বরকত বা কল্যাণের উৎস।

সুরা নুহের ১০ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে নিজ জাতির পাপীদের প্রতি হযরত নুহের বক্তব্য এসেছে এভাবে: ...অতঃপর বলেছি: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল বা গাফ্‌ফার। যদি তা কর তাহলে তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

বৃষ্টি খোদায়ি রহমত। এই অনন্য নেয়ামতের চাবিকাঠি মহান আল্লাহর হাতে। আল্লাহ না চাইলে কোনো ভূখণ্ডে বৃষ্টি আসে না। আর মানুষেরা যখন পাপ করে তখন রহমতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তাই মানুষ যখন পাপ করে তখন সে আসলে নিজেই নিজের ওপর জুলুম করে। কিন্তু মানুষ যখন পাপ করার পর অনুতপ্ত হয় তখন সে এটা বুঝতে পারে যে মহান আল্লাহ তো সবই জানেন। তিনি মানুষের প্রতি ও সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল তাই তিনি নিজ অনুগ্রহে তওবা কবুল করে ক্ষমা করে দেন। ফলে আত্মায় জমে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা ও অন্ধকারের কালিমা দূর হয়ে যায়।

মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ) থেকে বর্ণিত: বান্দাহ যখন সত্যিকার অর্থে তওবা করে ও অনুতপ্ত হয় তখন আল্লাহ তার গোনাহকে দুনিয়া ও আখিরাতে ঢেকে রাখতে বা মুছে ফেলতে পছন্দ করেন। আর এ জন্য মহান আল্লাহ  পাপ লিপিবদ্ধকারী দুই ফেরেশতাদের মন থেকে এই বান্দার পাপের রেকর্ড ভুলিয়ে দেন এবং বান্দাহ'র অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও তার পাপ ঢেকে রাখতে তথা মুছে ফেলতে বলেন। আল্লাহ জমিনকেও নির্দেশ দেন যে তার ওপর যে পাপ করেছিল ওই ব্যক্তি তা যেন গোপন করা হয়। ফলে সেই ব্যক্তি এমনভাবে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যে কোনো কিছুই তার পাপের সাক্ষ্য দেয় না।

নিজ উদাসীনতা ও ভুলের কথা স্বীকার করে যে পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং তার পাপ ঢেকে দেন। খোদায়ি আলোকমালা তাকে ঘিরে ফেলে। তবে তওবা কবুল হওয়ার শর্ত হল নিজের অতীতকে সংশোধন করা তথা সৎকর্ম করা । সুরা মায়েদার ৩৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে এসেছে:

অতঃপর যে তওবা করে নিজ জুলুমের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

আল্লাহর গাফ্‌ফার হওয়া বা খোদায়ি ক্ষমার বিষয়টি কেবল তওবার পরই আসে এমন নয়। গাফ্‌ফার পাপের মোকাবেলায় সুরক্ষাকারী বা ঢাল হিসেবেও কাজ করে নবী-রাসুল, পবিত্র ইমাম ও মহান আল্লাহর ওলিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাই বলে মানুষ যেন আল্লাহকে গাফ্‌ফার জেনে বেপরোয়া না হয়ে পড়ে, বরং আল্লাহকে গাফ্‌ফার জেনে তদের উচিত যত বেশি সম্ভব পাপ ও এমনকি পাপের আশপাশ বা পাপের সম্ভাবনাময় পথকেও এড়িয়ে চলা।

পবিত্র কুরআনে তিন বার গাফ্‌ফার শব্দটি এসেছে আযিয শব্দের সঙ্গে। সুরা গ্বাফির-এর ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, .. আমি তোমাদেরকে দাওয়াত দেই পরাক্রমশালী বা অপরাজেয়, ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। সুরা সোয়াদ-এর ৬৬ নম্বর আয়াতে এসেছে:

তিনি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, পরাক্রমশালী, মার্জনাকারী।

মহান আল্লাহ একদিকে যেমন আযিয বা অপরাজেয় ও পরাক্রমশালী তেমনি তিনি গাফ্‌ফার বলেই আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করা জরুরি। কারণ ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও আল্লাহ থেকে দূরে থাকা ঠেকাতে পারে। কারো কারো মতে খোদ্‌ এ বিষয়টিই হল মাগফিরাত। তাই গাফ্‌ফার একমাত্র আল্লাহরই গুণ।

মহান আল্লাহ গফফার। তাই আমাদেরও উচিত অন্যদের ভুল-ত্রুটি অগ্রাহ্য করা ও পাপ গোপন রাখা। এমনটি করলে অন্যরাও আমাদের ভুল-ত্রুটি অগ্রাহ্য করবে ও পাপ গোপন রেখে সম্মানজনকভাবে জীবন যাপনের সুযোগ দেবে। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ তারাই যারা অন্যদের ভুল ক্ষমা করে না এবং দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে না। -হে আল্লাহ আপনার গফফার নামের ওসিলায় প্রার্থনা করছি, সহায় হোন, সহায় হোন,  আমাদের দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।