এপ্রিল ১৬, ২০২১ ১৮:৪৬ Asia/Dhaka

পবিত্র রমজানের রোজা রাখার প্রধান উদ্দেশ্য হল খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন। রোজা ফরজ করা হয়েছে খোদাভীতি অর্জনের উদ্দেশ্যেই। খোদাভীরুর প্রতি রয়েছে মহান আল্লাহর অনেক উপহার।

যে ব্যক্তি খোদাভীরু বা খোদাসচেতন হন তথা আল্লাহর ব্যাপারে সদা-সচেতন হন তার গোটা মন-মানসিকতা বা মাইন্ডসেট পুরোপুরি বদলে যায়। তিনি তখন সব ধরনের ব্যাথা-বেদনা এবং প্রতিকূলতা বা বিপদ-আপদ সবই সুন্দরভাবে মোকাবেলা করতে পারেন। তার জন্য তখন সবই সহজ হয়ে যায়। মহান আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছুই আসে তার সব কিছুকেই তিনি তখন মঙ্গলময় ও কল্যাণকর বলে মনে করেন এবং দৃশ্যত কোনো কিছু কঠিন ও পীড়াদায়ক মনে হলেও তিনি তাকে মহান আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেন। ফলে তার জন্য সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সহজ হয়ে যায়। 
খোদা-সচেতন ব্যক্তি মনে করেন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব বিপদ-আপদ, রোগ-শোক ও কঠিন দায়িত্ব আসে তা বান্দাহর প্রতি মহান আল্লাহর ভালবাসারই প্রকাশ। মহান আল্লাহ চান যে এইসব প্রতিকূলতা মোকাবেলার মাধ্যমে ও ধৈর্যের মাধ্যমে বান্দাহ শক্তিশালী হয়ে উঠবেন এবং  আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে উঠবেন। 
খোদাসচেতনতা বা তাকওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। মহানবীর হাদিস ও আহলে বাইতের বর্ণনাতেও রয়েছে তাকওয়া অর্জনের নানা দিক।  পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার শুরুতেই বলা হয়েছে: পবিত্র কুরআন এমন এক মহাগ্রন্থ যাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং  যা কেবল খোদাসচেতন বা খোদাভীরুদেরই পথ দেখায়। - অর্থাৎ কুরআন থেকে সুপথ বা দিক-নিদের্শনা পেতে হলে খোদাসচেতন হতে হবে। আমরা কেউ কেউ কুরআনকে নিজের ইচ্ছার আলোকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করি। কিন্তু খোদাসচেতন নিজের ইচ্ছাকে নয় বরং কুরআনের নীতিমালাকেই আদর্শ হিসেবে ধরে নিয়ে নিজের ইচ্ছাগুলোকে এই আদর্শের আলোকেই বিন্যস্ত বা পুনর্বিন্যস্ত করেন। সুরা বাকারায় এর পরের আয়াতেই মুমিন মুত্তাকি তথা খোদাসচেতনদের পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে: মুত্তাকি তারা যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। -
আমরা কেউই মহান আল্লাহকে দেখছি না, কিন্তু বিশ্বাস করি যে মহান আল্লাহ রয়েছেন এবং তিনিই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। আমরা এ যুগের মানুষরা তো মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল তথা মহানবী (সা)কেই তো দেখিনি। কিন্তু তবুও আমরা বিশ্বাস করি যে তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ জন্য শেষ যামানার মুমিনদের জন্য বিশেষ পুরস্কারও রেখেছেন। এমনকি অনেকেই মনে করেন সর্বশেষ খোদায়ি ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি (আ)ও অদৃশ্য হয়ে আছেন। 
কথা হল মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তিনি সর্বশক্তিমান ও তিনিই আমাদের সবার প্রভু -এটা কেবল মুখে উচ্চারণই কি যথেষ্ট? না যথেষ্ট নয়, আমাদের বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন থাকতে হবে। কবরে যখন প্রশ্ন করা হবে কে তোমার প্রভু? তখন বীরদর্পে বললেন যে আল্লাহ। কিন্তু যদি ফেরেশতা বলেন, বাস্তবে তুমি তো ছিলে অর্থের পূজারী, অর্থ অথবা খ্যাতি বা নিজের কামনা বাসনাই ছিল তোমার প্রভু তখন এইসব মৌখিক উত্তর কোনোই কাজে আসবে না। যদি আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস হয় সুদৃঢ় তাহলে আমরা কখনও পাপই করতে পারি না এবং কোনো হারাম কাজ করাই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। 
হযরত ইমাম হাসান (আ) বলেছেন, আমি পাপ কাজ বা হারাম কাজ করি না এ জন্য যে আমার ভয় হয় ওই পাপ বা হারাম কাজ করা অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু ঘটে তবে তা হবে কত বেশি লজ্জাজনক! পাপ কাজটা যে পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারব তারই বা কি গ্যারান্টি আছে? 
তাই পরকালে আল্লাহর বিচার বা হিসেবের মুখোমুখি হওয়ার ভয় থাকলে আমরা কেউই তো পাপ বা হারাম কাজ করতে পারি না। আর আল্লাহ তো সব সময়ই আমাকে দেখছেন ও আমার সব কিছুর খবর রাখছেন!
আমরা পরকাল ও কিয়ামত এবং বিচার দিবসকে এখন দেখছি না। কিন্তু সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে এসবে। আমরা ফেরেশতাদের দেখছি না। আমরা অতীতের নবী-রাসুল এবং তাদের ধর্মগ্রন্থও দেখিনি। কিন্তু এইসবও বিশ্বাস করতে হবে। এইসব বিষয়ে সুদৃঢ় ও বাস্তব ঈমান আনার পর নামাজও কায়েম করতে হবে মুত্তাকী হতে হলে এবং আল্লাহর দেযা রিজক হতে যাকাতও দিতে হবে । #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।