প্রতারণার কত বিচিত্র ফাঁদ! দেশে বসে লন্ডনে প্রতারণা
প্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ১৮ এপ্রিল রোববারের কথাবার্তার আসরে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতেই ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রধান প্রধান বাংলা দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেফতার-–যুগান্তর
মামুনুলের ঘটনায় সোনারগাঁওয়ের কাউন্সিলর আটক– মানবজমিন
করোনায় দেশে দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে: সিপিডি -ইত্তেফাক
হাজার শয্যার করোনা হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সমকাল
হালুয়া রুটির গণতন্ত্র জনগণ এখন আর চায়না-কাদের–প্রথম আলো
মহানবী (সা.) কে অপমানকারীদের কড়া শাস্তি দাবি করলেন ইমরান খান-কালের কণ্ঠ
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
পাঁচ দফায় ১২২ আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত- আত্মবিশ্বাসী অমিত শাহ-সংবাদ প্রতিদিন
পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব মমতা –আজকাল
ফের তথ্য গোপন সরকারের-গণশক্তি
বাংলায় করোনার ঝড়! স্বাস্থ্যদফতরের নয়া নির্দেশিকা-এইসময়
শ্রোতাবন্ধুরা! এবারে চলুন বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। প্রথমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর।
হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেফতার-ইত্তেফাক/যুগান্তর/প্রথমআলোসহ প্রায় সব দৈনিকের এ খবরে লেখা হয়েছে,হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানা ও ঢাকার মতিঝিল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মানবজমিনের খবরে লেখা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে ঘেরাও ও দলের নেতাকর্মীদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সোনারগাঁও পৌরসভার কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ভবনাথপুর এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ফারুক আহমেদ তপন সোনারগাঁও পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। এদিকে, হেফাজত নেতা-জুনায়েদ- জালালকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা, আসামি ৩৫০০-মানবজমিন
বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে তিন হাজারজনকে। গতকাল শনিবার রাতে বাঁশখালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। গতকাল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন তিন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। গতকাল ঘটনার তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
করোনা নিয়ে মানবজমিনের কয়েকটি খবর: একটি শিরোনাম-মৃত্যুর স্কোর বোর্ড, ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি।
মায়ের জন্য একটি আইসিইউ বেড জোগাড়ে ছেলের আকুতি। যদি নিজের জীবনের বিনিময়েও মাকে বাঁচানো যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাকে বাঁচানো যায়নি। আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষায় বহু মানুষ। কেউ মারা গেলে অথবা সুস্থ হয়ে রিলিজ পেলে একটি সিট মিলছে। কি নিষ্ঠুর অপেক্ষা! অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজের শরীরের বেঁধে মোটরসাইকেলে করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে। বরিশালের এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আহা কি সময়!
শুরুটা এক বছরের বেশি সময় আগে।
অদৃশ্য এক ভাইরাস। পুরো পৃথিবীটাই ওলটপালট করে দিয়েছে। মৃত্যুর স্কোর বোর্ড। প্রতিদিন এই সংখ্যা বড় হচ্ছে। বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ১৪ কোটির বেশি রোগী। বাংলাদেশেও মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি কেবল অফিসিয়াল সংখ্যা মাত্র। বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। গত দুদিনে প্রতিদিনই একশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরো বাড়বে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার তীব্রতা বেড়েছে। আক্রান্ত রোগীরা খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করছে। ২৮শে জানুয়ারি থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত দেখা যায়, রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল ৪৪%। মৃতদের মধ্যে ৫২% উপসর্গ শুরুর ৫ দিনের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। মৃত রোগীদের মধ্যে ৪৮% হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৫ দিনের মধ্যে মারা গেছেন। ১৬% মৃত্যুবরণ করেন ভর্তির ৫-১০ দিনের মধ্যে। গত বছরের চেয়ে নারীরা বেশি মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া এই সময়ে দেশে মানসিক সমস্যাও বেড়ে যাচ্ছে।
টিকা নিয়ে আশা জেগেছিল একসময়। কিন্তু এখন তৈরি হয়েছে নানা সংশয়। মুক্তবাজার অর্থনীতি আর স্বার্থপর পৃথিবীতে প্রথম টিকার অগ্রাধিকার পাচ্ছে উন্নত দুনিয়ার মানুষেরাই। ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ টিকা নিতে পারলেও অনেক গরিব দেশ এখনো টিকা পায়ইনি। বাংলাদেশ টিকা নিয়ে আশা জাগানিয়া শুরু করলেও এখন তা হোঁচট খেয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট প্রতিশ্রুত টিকা সরবরাহ করছে না। মূলত ভারতীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণেই সেরাম বিভিন্ন দেশকে সময়মতো টিকা পৌঁছাতে পারছে না। তবে টিকা দিয়েও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না করোনার ব্যাপারে। কারণ টিকা কতদিন কাজ করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তারচেয়ে বড় ব্যাপার চরিত্র বদল করা করোনার ক্ষেত্রে টিকা কতটা কাজ করবে তাও বুঝা যাচ্ছে না।
এই অনিশ্চিত অবস্থায় দেশে চলছে লকডাউন। জীবনের পাশাপাশি বহ মানুষ লড়ছে জীবিকার জন্য। অসম সমাজে বেঁচে থাকাই যেন দায়। আবার স্বার্থপরতা আর যেকারণেই হোক না কেন একজনের দুর্ভোগ এখন অন্যকে অতোটা স্পর্শ করে না। স্বাস্থ্যকর্মী ইশান জাহান গণমাধ্যমকে বলছিলেন, আসলে এটা খুবই দুঃখজনক যে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছেন না যে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক। যখন একজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে যান তখন সেই ব্যক্তিটাই বুঝেন যে, হাসপাতালের একটা সিট পাওয়ার জন্য, একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডারের জন্য, একটা আইসিইউ বেডের জন্য কী পরিমাণ হাহাকার চলছে।
এই হাহাকার ও অসহায় সময়ে আসলে বাঁচার চেষ্টা ছাড়া আর কিইবা করার আছে। চারদিকে ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসির ভবনে দেশের সর্ববৃহৎ ১০০০ শয্যার করোনা হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ দুপুরে হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কাল সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি শুরু হবে। হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেড আছে ১১২টি। এইচডিইউ বেড ২৫০টি। এ ছাড়া ১৩৮টি আইসিইউ মানের বেড রয়েছে। এই বেডগুলো কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। হাসপাতালটিতে জরুরি ওয়ার্ডে ৫০টি বেড রাখা হয়েছে।
এই ৫৫০টি বেডের বাইরে আরও ৪৫০টি বেড থাকবে, সেখানে মারাত্মক আক্রান্ত ননÑ এমন রোগীদের রাখা হবে।
করোনায় দেশে দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে: সিপিডি-ইত্তেফাক
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে নতুন করে দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। আর চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন দেশের মোট শ্রমশক্তির তিন শতাংশেরও বেশি মানুষ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। শহর এলাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এমন ১০০ জনের মধ্যে চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে ৬৯ জন।
করোনাকালে শিশুর বেড়ে ওঠা- বিশেষজ্ঞ অভিমত- শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,মনোদৈহিক সংকটে ঘরবন্দি শিশু। প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়া করছে প্রায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী। করোনায় অধিকাংশই ঘরবন্দি। ১৩ মাস ধরে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না।অনেক অভিভাবক সন্তাকে খেলার মাঠেও যেতে দিচ্ছেন না। এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া দারুণভাবে ব্যহত হচ্ছে। পাশাপাশি তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিকসহ বিভিন্নধরনের বিকাশ থমকে যাওয়ার উপক্রম। এর প্রভাবে দেখা দিতে পারে মনোদৈনিক সংকট। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, শারীরিক এবং মানসিক সুস্থ রাখার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অধ্যাপক এম তারিক হাসান বলেছেন,পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষকদের পাঠাতে হবে শিক্ষার্থীদের কাছে-একথা বলেছেন অধ্যক্ষ জহুরা বেগম।
বাংলাদেশে বসে লন্ডন প্রবাসীদের সঙ্গে অভিনব কায়দায় প্রতারণা-মানবজমিন
একটি প্রতারকচক্র বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মোবাইল ফোন হ্যাক করে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তারা প্রথমে প্রবাসীদের মোবাইল ফোন হ্যাক করে কন্টাক্ট লিস্ট থেকে সকল নাম্বার নিয়ে নেয়। এরপর ইমোর মাধ্যমে একটির পর একটি নাম্বারে কল করে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এ ধরনের একাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
প্রতারণার শিকার একজন হলেন পূর্ব লন্ডনের ডেগেনহ্যাম ইস্টের মদিনা ফাউন্ডেশন মসজিদের ট্রেজারার সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দরপুরের অধিবাসী মো. সাদ উদ্দিন (৮২)। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে তাঁর প্রতারিত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, গত ১০ই এপ্রিল শনিবার দুপুরে জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে যান। নামাজে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ফোনে বারবার কল আসতে থাকে। তিনি তখন মোবাইল ফোনটি সাইলেন্টে রেখে দেন।
এরপর নামাজ শেষে ঘরে ফিরে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখতে পান অনবরত কল আসছে। ‘শামসুল’ নামক তাঁর এক বন্ধুর নাম থেকে ইমোতে কল আসছে। তিনি কলটি রিসিভ করেন। তখন ওপাশ থেকে ভেসে আসে মহিলা কণ্ঠ। কলদাতা ব্যক্তি নিজেকে শামসুলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে তাঁদের এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে ৪শ’ পাউন্ড বিকাশ করে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।
সাদ উদ্দিন শামসুলের স্ত্রীর কণ্ঠের সাথে পরিচিত না হলেও যেহেতু বন্ধুর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করেছেন তাই টাকা পাঠাতে মনস্থ করেন। কিন্তু কলদাতা ব্যক্তির আরো কিছু কথাবার্তা ও তাড়াহুড়ো ভাব দেখে তাঁর কিছু সন্দেহ হয়। তাই তিনি শামসুলের সাথে কথা বলতে চান। মহিলা ফোনটি একজন পুরুষের হাতে দেন। ওপাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠে শামসুল পরিচয়ে সাদ উদ্দিনের সাথে একজন কথা বলেন। দুই একটি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সাদউদ্দিন বুঝতে পারেন এই কণ্ঠ শামসুলের নয়। তখনই তিনি বুঝতে পারেন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। এরপর লাইন কেটে দেন।
এদিকে সাদ উদ্দিন প্রতারণা থেকে বাঁচলেও প্রতারিত হোন তাঁর বন্ধু লন্ডনের আক্সব্রিজের বাসিন্দা আব্দুল মুমিন (৫৮)। বাংলাদেশ থেকে ওই প্রতারক আব্দুল মুমিনের মোবাইলে কল করে নিজেকে সাদ উদ্দিনের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কিভাবে ৪০০ পাউন্ড হাতিয়ে নেয় তার বর্ণনা দিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।
তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল শনিবার তিনটার দিকে আমার ফোনে একজন মহিলা ফোন করে জানান (সিলেটি ভাষায়), তিনি আমার বন্ধু সাদ উদ্দিন সাহেবের স্ত্রী। তাদের এক আত্মীয় সিলেটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপারেশন হবে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় ডাক্তার অপারেশন করছে না। তাই জরুরী ভিত্তিতে বিকাশ নাম্বারে ৪শ’ পাউন্ড পাঠাতে অনুরোধ করেন।
আব্দুল মুমিন সরল বিশ্বাসে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেন্ডওয়েব এর মাধ্যমে ৪শ’ পাউন্ড প্রেরণ করেন। বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ হাজার ৭০০ টাকা হয়। তিনি যে বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠান তা হচ্ছে ০০৮৮ ০১৭৯৮ ২৩৩ ৯৯৬। নাম রুনা বেগম। পাঠানোর পর ফোন করে জানতে চান টাকা পেয়েছেন কিনা। জবাবে মহিলা বলেন, বললাম ৮০০ পাউন্ড পাঠানোর জন্য, আপনি ৪০০ পাউন্ড পাঠালেন কেন? তখন আব্দুল মুমিনের কিছুটা সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাদ উদ্দিনের নাম্বারে কল করেন। কথা বলে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু যেহেতু তিনি ততক্ষণে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন তখন আর করার কিছু নেই।
আব্দুল মুমিনের দেশের বাড়ি বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিয়নের নরসিংপুর গ্রামে। তিনি তাঁর ভাতিজা সুমনকে ফোন করে প্রতারণার ঘটনা বর্ণনা করেন এবং বিশ্বনাথ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে বলেন। তিনি বিশ্বনাথ থানায় গিয়ে ঘটনা বললে, পুলিশ বিকাশ নাম্বারটি অনুসন্ধান করে জানায় রুনা বেগমের ঠিকানা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায়। তার ন্যাশনাল আইডি নাম্বার ৫৮১৫৬ ৭৬৮৯ ৬১৯৬। কিন্তু এই প্রতারণার সাথে ঢাকার বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তারা হয়তো রুনা বেগমকে ব্যবহার করেছে। প্রতারণাটি যেহেতু লন্ডনে সংঘটিত হয়েছে তাই সেখানে অভিযোগ করতে হবে।
আব্দুল মুমিন লন্ডনে মানি ট্রান্সফার কোম্পানি সেন্ডওয়েবকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা বলে রুনা বেগম ইতোমধ্যে টাকা তুলে নিয়ে গেছে। তাই এখন আর করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, এই প্রতারকচক্র নিশ্চয় এভাবে লন্ডন প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের নাম, মোবাইল ও এনআইডি নাম্বার আছে। তাই বাংলাদেশ পুলিশ চাইলে তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করতে পারে। তিনি তাঁর সাথে সংঘটিত প্রতারণার ঘটনাটি তদন্ত করতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানান।
এদিকে সাদ উদ্দিন আরো জানান, ওই প্রতারক মহিলা তাঁর মোবাইল ফোন হ্যাক করে একের পর এক আত্মীয় স্বজনের নাম্বারে কল করতে থাকে। দুবাইয়ে বসবাসরত তাঁর জামাতা ফোন করে বলেন, তাঁর কাছেও এক মহিলা ফোন দিয়ে নিজেকে তাঁর শাশুড়ি পরিচয় দিয়ে বলেন, তোমার শশুর অসুস্থ। জরুরি ভিত্তিতে বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠানোর দরকার। এরপর কুয়েত থেকে কল করেন তার ভাতিজা মাখন। তিনিও একই কথা বলেন। পূর্ব লন্ডনের চ্যাডওয়েলহিথ থেকে কল করেন তার এক ভাগিনা। প্রতারকচক্রের কাছ থেকে তিনিও এ ধরনের কল পেয়েছেন বলে জানান। তবে তারা কেউ টাকা পাঠান নি।
এদিকে অনুরূপ আরো একটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে ৮ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে। একই কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায় ডেগেনহ্যাম মদীনা ফাউন্ডেশন মসজিদের সাবেক ডেপুটি ইমাম সামসু মিয়ার কাছ থেকে। তিনি জানান, ৮ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার জোহরের জামাতের পূর্ব মুহূর্তে আমার মোবাইলে একটি কল আসে। ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে একজন বলেন, তিনি মুফতি আব্দুল মালিক সাহেবের স্ত্রী। বাংলাদেশে তাদের এক আত্মীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডাক্তার তাকে ডিসচার্জ করেছে, কিন্তু টাকা না থাকায় বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৪শ’ পাউন্ড পাঠাতে হবে। মুফতি আব্দুল মালিক সাহেব মসজিদে যাওয়ার পথে আছেন। তিনি সাড়ে ৪শ’ টাকা পকেটে নিয়ে গেছেন। মসজিদে পৌঁছেই তিনি দিয়ে দেবেন। যেহেতু জরুরী তাই তিনি যেন নামাজে দাঁড়ানোর আগেই সাড়ে ৪০০ পাউন্ড পাঠিয়ে দেন। সামসু মিয়া বলেন, নামাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন কিছু করা যাবে না। নামাজ পরে দেখবো।
নামাজ শেষ করার পর মেবাইল হাতে নিয়ে দেখতে পান তখনও একটার পর একটা কল আসতেই আছে। তখন তিনি ফোন রিসিভ করলে ওপাশ থেকে মহিলা বলেন, আপনি কি এখনও টাকা পাঠাননি? তাড়াতাড়ি পাঠান। তখন সামসু মিয়ার সন্দেহ হয় এবং তিনি মুফতি আব্দুল মালিককে ফোন করে জানতে চান তাঁর স্ত্রী কি তাঁকে ফোন দিয়েছেন। তখন আবদুল মালিক নিশ্চিত করেন, তাঁর স্ত্রী কাউকে কল করেন নি। তিনি তাঁকে সতর্ক করে বলেন, এসব প্রতারণা। তিনি জানান, দুইদিন আগে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকেও ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে এক প্রতারক।
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
পাঁচ দফায় ১২২ আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত-অমিত শাহ-আজকাল
রাজ্যে পাঁচ দফা নির্বাচন শেষ। এখনও বাকি তিন দফা ভোট। তার আগেই শতাধিক আসনে জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে বিজেপি! রোবার উত্তর পূর্বস্থলীর জামালপুর ময়দান থেকে এমনই দাবি করলেন বিজেপির হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ । সভার শুরু থেকে আক্রমনাত্মক মেজাজেই ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজ্যের শাসকদলের সমালোচনা করে শাহ বলেন, “বাংলার সরকার নতুন মডেল চালু করেছে। বোমা, গুলি, বন্দুকের জোরে সরকার চলছে। কিন্তু এই মডেল চলবে না। বিজেপি ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন হবে। আর দিলীপ ঘোষের মন্তব্য-যে রকম চেয়েছি, সেই ভাবেই ভোট হচ্ছে, ২০০ আসন পেয়ে যাব।
পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব মমতা-সংবাদ প্রতিদিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, কোনও বিশেষ পরিবার নয়, সবসময় সমস্ত মতুয়াদের জন্যই কাজ করবেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য দোষারোপ করলেন প্রধানমন্ত্রীকে। মোদি-শাহকে উদ্দেশ করে মমতা বললেন “প্রতিদিন দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের মানুষের কথা না ভেবে ওঁরা বাংলা দখল করতে ব্যস্ত। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, “বড়মা আমাকে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর অবর্তমানে মতুয়াদের দেখে রাখার কথা বলেছিলেন। সেই কথা আমি রাখব।”#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।