মে ১২, ২০২১ ১৮:৫৭ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম সামিয়্‌ (বা সামিই্)। এর অর্থ শ্রবণকারী। মহান আল্লাহ সর্বশ্রোতা।

তিনি গোপন-কথা, প্রকাশ্যে উচ্চারিত কথা, নীরবে ও মনে মনে বলা কথা - সবই সমানভাবে শোনেন। কুরআনে আল্লাহর এই নাম ৪৭ বার এসেছে। কথা শোনা বলতে আমরা আনুগত্য করা ও উপলব্ধি করাকেও রূপক অর্থে বুঝিয়ে থাকি অনেক সময়। সুরা আরাফের ১৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: তাদের কান থাকলেও তা দিয়ে তারা শুনত পায় না। -এখানে শোনা বলতে বাহ্যিক শোনাকে বোঝানো হয়নি। বরং বলা হচ্ছে যে তারা যা শুনছে তা তাদের মনের চিত্রপটে আনছে না ও তা নিয়ে ভাবছে না যাতে তা থেকে তারা কল্যাণ পেতে পারে। কারণ তারা যা শুনছে তা থেকে কোনো কল্যাণ অর্জন করতে পারছে না। আর এরকম শোনা ও না শোনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সুরা ফোরক্বানের ৪৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত।

মহান আল্লাহ শ্রবণকারী হলেও তাঁর শোনার সঙ্গে সৃষ্টিকুলের শোনার কোনো মিলই নেই। একই সময়ে বিশ্বের সব সৃষ্টিও যদি কিছু বলে মহান আল্লাহ তা শুনতে পারেন। কারো চিৎকারের কারণে অন্যের ফরিয়াদ আল্লাহ শুনতে ব্যর্থ হন বা একজনের কথা শুনতে গিয়ে অন্য জন কি বলেছিল তা ভুলে যান- এমনটি কখনও হয় না। যে কোনো শব্দ যেখান থেকেই  আসুক না কেন ও তা যে কোনো মাত্রার যেমন অতি দুর্বল বা তীব্র মাত্রার ও যে কোনো ভাষারই হোক না কেন মহান আল্লাহ তা শুনতে পান। মহান আল্লাহ সব শব্দ, বাক্য, অক্ষর এবং সেসবের অর্থ ও সেসবের উৎপত্তি-স্থল, বাহ্যিক ও সুপ্ত অর্থ -এসবই জানেন ও বোঝেন এবং শোনেন। এমনকি যা কল্পনায় ভাবা হয় বিনা উচ্চারণে তাও মহান আল্লাহ জানেন।

মানুষ যা গোপনে ও প্রকাশ্যে বলে এবং যা অন্তরে গোপন রাখে ও এমনকি যা কল্পনা করতে চেয়ে কল্পনাও করতে পারছে না তাও জানেন মহান আল্লাহ! মানুষ কোনো শব্দ শুনতে চাইলে তা বাতাসে ভেসে আসতে হয়। কিন্তু মহান আল্লাহর জন্য কোনো মাধ্যম বা যন্ত্রও লাগে না কোনো কিছু শুনতে!

সুরা মুজাদিলার সপ্তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:  আপনি কি ভেবে দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা ভালো ও মন্দ যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।-

মহান আল্লাহ'র সামিয়্ হওয়া বলতে কখনও কখনও প্রার্থনা কবুল হওয়ার বিষয়টিকেও বোঝায়। যেমন, বলা হয় মহান আল্লাহ দোয়া শুনেন। অর্থাৎ যে প্রার্থনা করে সে প্রার্থনার কিছু ফল দেখতে পায়। মুসলমানরা নামাজের রুকুর পর পড় দাঁড়িয়ে বলেন: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্। অর্থাৎ যে নামাজি মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার প্রশংসা শোনেন তথা গ্রহণ করেন।

কথিত আছে এক ব্যক্তি কাবা ঘর তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করার সময় মহান আল্লাহকে উদ্দেশ করে বলেন: হে প্রতিপালক! আপনি তো দেখছেন যে আমি একজন দরিদ্র ব্যক্তি! আপনি তো সেই সত্ত্বা যিনি দেখেন, আর আমি তো দেখতে পাই না! আমার অবস্থা উপলব্ধি করুন! -তার তাওয়াফ শেষ না হতেই তার কাছে খবর আসে যে তিনি কোনো এক আত্মীয়ের সম্পদের উত্তরসূরি হয়েছেন । তখন উপস্থিত এক ব্যক্তি বলে উঠল: এত দ্রুত যে দোয়া কবুল হয় তা জীবনে এই প্রথম দেখলাম। দোয়াকারী তখন বললেন: তুমি কি দেখছো না যে আমি এমন একজনের কাছে ফরিয়াদ করে চেয়েছি যিনি শোনেন ও দোয়া কবুল করেন।

শোনার ক্ষমতার দিক থেকে কোনো কোনো প্রাণীর শোনার ক্ষমতা বেশ দুর্বল ও কোনো কোনো প্রাণীর এই ক্ষমতা বেশী উচ্চ মানের। আসলে যে প্রাণীর শোনার ক্ষমতা যতটা দরকার আল্লাহ তাকে ততটাই দিয়েছেন।

হযরত সোলায়মান (আ) পাখিসহ নানা প্রাণীর ভাষা বুঝতেন মহান আল্লাহর অনুগ্রহে। পিপড়াদের কথাও তিনি শুনতে পেতেন ও বুঝতে পারতেন। সুরা নাম‌্ল্-এর ১৮ ও ১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে:  যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।

বর্তমান যুগে বিজ্ঞানীরা পিপড়ার ভাষা বা তাদের সৃষ্ট বার্তা বা শব্দগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করছেন। তারা বহু বছরের গবেষণার পর বুঝতে পেরেছেন যে পিপড়ারা তাদের মাথার শিং বা অ্যান্টেনার মত অঙ্গ দিয়ে অডিও বার্তা দূরে পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারে! হ্যাঁ, মহান আল্লাহ পিপড়ার পায়ের সামান্য শব্দও শুনতে পারেন। মহান আল্লাহ জিহ্বা বা কোনো মাধ্যম ছাড়াই কথা বলতে ও কান ছাড়াই শুনতে পারেন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।