জুন ১৬, ২০২১ ০০:০৬ Asia/Dhaka

শিশুদের মানসিক নিরাপত্তা দেয়া তাদের অন্যতম প্রধান অধিকার ও অন্যতম প্রধান চাহিদা।

বিশেষ করে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে-ওঠার সময়ে তথা শিশুর সাত বছর বয়স পর্যন্ত এ বিষয়টির দিকে নজর রাখা খুবই জরুরি। বাবা-মায়ের আচরণ ও শিশুর মানসিক চাহিদার প্রকৃতি- এ দুই-ই  শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনের ওপর প্রভাব ফেলে।

শিশুরা যখন এটা বুঝতে পারে যে তাদের মা-বাবা বা এমন কেউ আছে যিনি তাদের সব চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম তখন তারা মানসিক দিক থেকে নিরাপত্তা অনুভব করে। শিশুকে তার ভরণ-পোষণ, শিক্ষা ও খেলাধুলার সামগ্রীর জন্য যেন চিন্তিত হতে না হয় সেই ব্যবস্থা বা পরিবেশ গড়ে তোলা অভিভাবকদের দায়িত্ব। তিন বছর বয়স পর্যন্ত  শিশু যেন বুঝতে পারে যে তার পোশাক নোংরা হয়ে গেলেও বিকল্প পোশাক দেয়ার মত কেউ রয়েছে ও তার পোশাক বদলে অন্য পোশাক পরার ক্ষেত্রে সাহায্য করার মত কেউ রয়েছে এবং খিদে পেলে খাওয়ার দেয়ার মত কেউ রয়েছে। এইসব চাহিদা পূরণ হলে সে বুঝতে পারে যে তার জগতটা নিরাপদ ও অনেকেই আছেন যারা তাকে ভালোবাসে। ভরণপোষণের চাহিদা পূরণ হলে এরপর শিশুর ভালাবাসার চাহিদাও পূরণ করতে হবে।  তাকে দিতে হবে যথেষ্ট মাত্রায় আদর-যত্ন ও স্নেহ। শিশুকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেয়াও ঠিক নয় বলে মনে করেন অনেক মনোবিজ্ঞানী। যেমন, খাওয়ার, পড়ার ও খেলাধুলার আলাদা আলাদা সময় ঠিক করে দেয়ার মত বিষয়গুলো শিশুকে এই ধারণা দেয় যে কখন কি করতে হবে এ নিয়ে তার নিজের দুঃশ্চিন্তা করার কিছুই নেই এবং এসব বিষয়ে অভিভাবকরাই তাকে পথ দেখানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এসব বিষয়কে শিশুর ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে টেনশন অনুভব করবে।

শিশুরা যেন ভয় ও নিরাশার মধ্য দিয়ে বড় না হয়। এর ফলে তাদের সৃষ্টিশীলতা লোপ পাবে ও তারা সব সময় নিজ অনুভূতিগুলোকে দমিয়ে রাখবে। শিশুদেরকে সব সময় কঠোর শাসনের মধ্যে রাখলে ও তাদের ভুল-ত্রুটির জন্য বার বার তিরস্কার করা হলে তাদের স্বাধীনতা, মানসিক নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস বিপন্ন হবে। এ অবস্থায় শিশু সব সময় এই আতঙ্কের মধ্যে থাকবে যে কখন জানি ভুল কিছু করছি! আর ভুলের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান আতঙ্ক তাকে মানসিক রোগী করে তুলবে। ফলে নতুন কোনো চিন্তা তুলে ধরার সাহস সে হারিয়ে ফেলবে ও তার সৃষ্টিশীলতার গুণগুলো হবে বাধাগ্রস্ত।  মহানবী (সা) বলেছেন, শিশু তার সাধ্য অনুযায়ী যা করেছে তা গ্রহণ করবে, তাদেরকে কোনো কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ করার আদেশ দিবে না এবং তাকে অবাধ্য ও পাপী হতে বাধ্য করবে না। মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত কথাবার্তা ও আচরণের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের এবং এমনকি নিজ অধীনস্তদেরও মানসিক নিরাপত্তা যোগাতেন। অনেক বাবা-মা শিশু-কিশোর সন্তানের সঙ্গে কর্কশ ও রুক্ষ আচরণ করেন যা মোটেই কাম্য নয়। পারিবারিক পরিবেশসহ শিশু-কিশোরদের পুরো জগতটাই হওয়া উচিত সহানুভূতিপূর্ণ। কঠোর পড়াশুনা ও খেলাধুলাসহ বিপজ্জনক সব পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে শিশু-কিশোরদেরকে।

শিশুদের মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তারা পড়াশুনা ও সামাজিক-সম্পর্কসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই বেশি সফল হবে। আর মানসিক প্রশান্তি ও নিরাপত্তা না থাকলে তারা এইসব ক্ষেত্রে হয়ে পড়বে টেনশন ও হতাশাসহ নানা সমস্যা এবং সাফল্যহীনতার শিকার। শিশুরা যদি পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা হুমকি ও ধমকের শিকার হয় তাহলে তারা মানসিক নিরাপত্তা হারাবে। শিশু-কিশোরদের মানসিক নিরাপত্তার ধরন নানা বয়সে নানা ধরনের হয়। যেমন, ৫-৬ বছর বয়সে শিশুরা ভুত নামক কল্পিত জন্তুকে খুব ভয় পায় এবং তাই তারা খুব অল্প সময়ের জন্যও বাবা-মাকে ছেড়ে একাকি কোথাও থাকতে আগ্রহী হয় না।  আর এভাবে তাদের স্বাধীনতা প্রভাবিত হয় ও স্বনির্ভরতা কমে যায়।

হুমকি ও বলপ্রয়োগ শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ও সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই জোর করে শিশুদের কোনো কিছু শেখানোকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে বলে ইসলামের শিক্ষন-পদ্ধতি। অভিভাবকদের নড়বড়ে আচরণ, উদ্বেগ ও মাত্রাতিরিক্ত নিখুঁত-প্রবণতা বা অপরিপূর্ণতার সন্দেহ লালন শিশুর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অহেতুক ভয় করা বা সন্দেহ মনে লালন করার মত বিষয় থেকে প্রথমে অভিভাবককেই মুক্ত হতে হবে। তা না হলে শিশুরাও সব সময়ে সন্দেহ ও সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে আটকে থাকার অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হবে। পরিবার হচ্ছে শিশুর মানসিক প্রশান্তির প্রধান কেন্দ্র। পরিবারের বড়রা যখন শিশুকে আদর-যত্ন করবে তখন সে মানসিকভাবে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে এবং এই অনুভূতি নিয়েই তার ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠতে থাকবে। ভালবাসা দিয়ে শিশুর মন জয় করে রাখতে হবে তার সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের স্বার্থেই। তাকে স্বাভাবিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে ও স্বাভাবিক বিকাশ চাইলে ভালাবাসা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। তাই মানুষের পূর্ণতার জন্য পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা খুবই জরুরি। শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তার সর্বোচ্চ দূর্গ পরিবারকে মানুষের পরিপূর্ণতা ও সৌভাগ্য অর্জনের কেন্দ্রে পরিণত করা যায় যদি সেখানে থাকে আন্তরিক ভালবাসা এবং স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রীকতামুক্ত পবিত্র মনোভাব। একটি আদর্শ পরিবারের সদস্যদের মনগুলো হবে পরস্পরের সদগুণগুলোর আয়না।  

সঠিক ও সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিবারগুলো হয়ে উঠুক শান্তির নীড় ও শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণের আদর্শ কেন্দ্র।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ