সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১ ১৬:৫৯ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হ'ল মুজিব। এ নামের অর্থ হচ্ছে জবাব দানকারী।

অবশ্য মুজিব হচ্ছেন এমন এক জবাবদানকারী যে কেউ কখনও কিছু চাইলে তিনি প্রজ্ঞা ও কল্যাণের আলোকে সসম্মানে জবাব দিয়ে থাকেন এবং তাঁর জবাব হচ্ছে  মহানুভবতাপূর্ণ।

মহান আল্লাহর এই নাম তথা মুজিব নামটি সুরা হুদে এভাবে এসেছে: আর সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছি; তিনি বললেন, হে আমার জাতি। আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নাই। তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন। অতএব; তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে চল। আমার পালনকর্তা নিকটেই বা খুব কাছেই আছেন, নিঃসন্দেহে তিনি প্রার্থনা কবুল করে থাকেন।

সুরা সাফফাতের ৭৫ নম্বর আয়াতে মুজিব শব্দের বহুবচন মুজিবুন এসেছে। এই আয়াতে বলা হয়েছে: আর নূহ আমাকে ডেকেছিল। আর কি চমৎকারভাবে আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম!

আরবি মুজিব শব্দের মূল হচ্ছে 'জুব' যার অর্থ কেটে ফেলা ও শব্দের জবাব দান। শব্দের জবাব আসে হৃদয়ের গভীর থেকে ও তা মুখের মাধ্যমে উচ্চারিত হয়ে শ্রোতার কাছে পৌঁছে। তাই মুজিব শব্দের অন্যতম অর্থ হল জবাব দানকারী তথা সাহায্যপ্রার্থীর আহ্বানে সাড়া দানকারী। মুজিব শব্দের মূল অংশ তথা জুব নানারূপে পবিত্র কুরআনে ১৪ বার এসেছে। মহান আল্লাহ মুজিব হিসেবে সাহায্যপ্রার্থী মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার সমস্যার সমাধান করেন এবং এমনকি আল্লাহর কাছে চাইবার আগেই তিনি মানুষকে অভাবমুক্ত ও পেরেশানি থেকে মুক্ত করেন। 

মহান আল্লাহ মুজিব হিসেবে মানুষের সব প্রার্থনা ও আকুতি এবং চাহিদার খবর রাখেন।  কিন্তু তিনি প্রার্থনাকে করেছেন নিজের ও নিজের দাসদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্কের মাধ্যম। সুরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

আর আমার বান্দারা যখন তামার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত: আমি নিজেই রয়েছি তাদের সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, আমি তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার আহ্বান বা হুকুম মান্য কর এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।

মহান আল্লাহ তাঁর কাছে প্রার্থনাকারীকে এতোই ভালোবাসেন যে এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি দয়ার নিদর্শন হিসেবে নিজের বা আমার শব্দটি সাতবার ব্যবহার করেছেন।

মানুষ যদি আল্লাহর কাছে না চায় বা প্রার্থনা না করে তাহলে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালবাসাপূর্ণ বা প্রেমময় এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।

আমরা মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব ও দুর্বল বলে মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যদি ছিন্ন হয়ে যায় ও মহান আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উদাসীন হন তাহলে আমাদের ধ্বংস হবে অনিবার্য। তাই মহান আল্লাহর সঙ্গে বিশ্বাসীদের সম্পর্কের বন্ধন থাকাটা খুবই জরুরি। সুরা ফুরক্বানের ৭৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, হে নবী! (মুহাম্মাদ সা.) আপনি মানুষকে বলুন, তারা যদি দোয়া না করে আল্লাহর কাছে তাহলে আল্লাহ তাদের প্রতি লক্ষ্য করবেন না।  মহান আল্লাহ যে/ যে কোনো সময় আমাদেরকে তাঁর দরবারে হাত পাতার তথা দোয়ার সুযোগ দিয়েছেন এই মহানেয়ামতের জন্যও অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। দোয়া মানুষের আত্মাকে করে উন্নত ও দোয়ার মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে ও পূর্ণতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যায়। 

 মহান আল্লাহ দোয়ার উত্তর বা জবাবদানকারী। তাই কোনো দোয়াই বিফলে যায় না। অনেকে দোয়া করার সুযোগই পায় না। তাই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আগে দোয়া করার তৌফিক অর্জন করতে হবে। দোয়া মহান আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের ও মুনের দুয়ার খুলে দেয়ার মাধ্যম। 

মানুষ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যা চায় তার চেয়েও ভাল কিছু আল্লাহ দান করেন। ঠিক যে ইচ্ছে বা আশা করা হয়, তা যদি বান্দার জন্য মঙ্গলজনক বা কল্যাণকর না হয় আল্লাহ তা তাকে দেন না। এভাবে বলা যায় আল্লাহ মানুষের দোয়া ঠিকই গ্রহণ করেন- এমনকি তা হুবহু বান্দার ইচ্ছানুরূপ কবুল না হলেও। মহান আল্লাহ বলেছেন, একমাত্র কাফেররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়।

দয়াময় আল্লাহ সুরা গ্বাফিরের ৬০ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমাকে ডাকো বা আমার কাছে চাও আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।

ইমাম জাইনুল আবেদিন বলেছেন, মুমিন যখন দোয়া করে তখন তার তিন রকম ফল হতে পারে। প্রথমত হয় এই দোয়ার ফল সে পরকালে পাবে অথবা দ্বিতীয়ত এই দুনিয়াতেই তার ফল পাবে অথবা তৃতীয়ত ওই দোয়ার সুবাদে নানা বিপদ আপদ কেটে যাবে।

দোয়া যদি দেরিতে কবুল হয় তাহলে বেশি সাওয়াব বা কল্যাণ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, মহান আল্লাহ কখনও দেরিতে দোয়া কবুল করেন যাতে তাকে তার আশার তুলনায় আরও বড় কিছু ও অনেক বেশি দেয়া যায়।

অনেক সময় দোয়া দেরিতে কবুল করা হয় এ জন্য যাতে দোয়ার মাধ্যমে বান্দাহ যেসব উন্নত আধ্যাত্মিক অবস্থা অর্জন করে তা থেকে বেশি ফায়দা নিতে পারে। ইমাম সাদিক্ব আ. থেকে বর্ণিত: কোনো মুমিন যখন আল্লাহর কাছে কোনো সমস্যার বিষয়ে সাহায্য চায় বা অভাব পূরণের দোয়া করে তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, দেরিতে তার আশা পূরণ কর। কারণ আমি আমার বান্দার দোয়া ও কথা পছন্দ করি। আর যখন কিয়ামত বা পুনরুত্থান ঘটবে তখন আল্লাহ বলবেন : হে আমার বান্দা! তুমি আমাকে ডেকেছিলে কোনো কিছুর জন্য কিন্তু আমি তোমার জবাব দেরিতে দিলাম। এখন এর পুরস্কার বা সাওয়াব দেখো। তা এত বেশি যে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।... মুমিন যখন পুরস্কারের ব্যাপকতা ও সৌন্দর্য দেখবে তখন আফসোস করে বলবে: হায়! দুনিয়াতে যদি আমার কোনো দোয়াই কবুল না হত!  

অনেক সময় কোনো কোনো দোয়া কখনও কবুল করা হয় না। কারণ ওই দোয়ার মধ্যে বান্দার কোনো কল্যাণ ছিল না,  বরং ছিল ক্ষতিকর। কখনও আন্তরিক চিত্তে না চাওয়ার কারণে দোয়া কবুল হয় না। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে দোয়া করার পাশাপাশি অন্যদের সাহায্যের প্রতি আশা-ভরসা রাখছিল ও তাদের কাছেও সাহায্য চাচ্ছিল বলে সেই দোয়া কবুল হয়নি। মানুষ যখন দুনিয়ার কারো প্রতি বিন্দুমাত্র আশা না রেখে তথা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের প্রতি পুরোপুরি হতাশ হয়ে কিছু চায় তখন তার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।  অর্থাৎ দোয়াকারীকে হতে হবে পুরোপুরি মহান আল্লাহর ওপর ভরসাকারী ও আল্লাহর শক্তির প্রতি পরিপূর্ণ আশাবাদী। আর দোয়া কেবল আল্লাহর কাছেই করতে হবে একনিষ্ঠ চিত্তে।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।