ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অগ্রযাত্রার ৪২ বছর 
(last modified Thu, 11 Feb 2021 01:55:49 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১ ০৭:৫৫ Asia/Dhaka

আবারও ফিরে এলো মহান আল্লাহর খোদায়ি নুর ও অনন্য নানা নিদর্শনে ভরপুর ইসলামী বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় বার্ষিকী। এ উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অজস্র শুভেচ্ছা ও মুবারকবাদ। ৪২ বছর পেরিয়ে ৪৩-এ পা-দেয়া এ বিপ্লব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব হিসেবে অজস্র বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে গড়ে দিচ্ছে নতুন ইসলামী সভ্যতার সোনালী সোপান।

যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর এই বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকীর গণ-শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের সর্বত্র মহান এ বিপ্লবের সমর্থক ও অনুরাগীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি বা কমতি দেখা যাচ্ছে না। 

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের অর্থ ছিল বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তিকামী আন্দোলন ও ইসলামী জাগরণ জোরদার হওয়া। এ বিপ্লবের বিজয়ের অর্থ ছিল ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার আওতায় থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা। যেমন, ন্যানো প্রযুক্তি, ক্লোনিং, বুনিয়াদি কোষ বা স্টেমসেল গবেষণা, লেযার প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও মহাকাশ প্রযুক্তির মত খাতগুলোতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম হওয়া। 

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ও প্রকাশনা তৈরিতেও ইরান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। সামরিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতি-সম্পন্ন টর্পেডো নির্মাণ, দূর ও মাঝারি পাল্লার নিখুঁত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ ও সাবমেরিন নির্মাণ ইরানের ইসলামী সরকারের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যগুলোর অন্যতম । ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর ইরান কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে।   

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবের কারণেই লেবানন,  ফিলিস্তিনের গাযা, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে সাম্রাজ্যবাদী মহলগুলোর নানা জটিল ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে গেছে! তাই এমন একটি বিপ্লব যে আসলেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) যখন ঘোষণা দেন যে তিনি শিগগিরই নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে প্যারিস থেকে তেহরানে ফিরবেন। তখন শাহের রেখে-যাওয়া পুতুল সরকার বলেছিল আমরা বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ে বন্ধ রাখবো।  তখন ইমামের লাখ লাখ অনুরাগী বলেছিলেন, হে ইমাম আমাদের হৃদয়গুলো আপনার জন্য রানওয়ে! 

ইসলামী বিপ্লবের সফল নেতা হিসেবে ইমাম খোমেনী (র.)‘র আবির্ভাব আধুনিক বিশ্ব-ইতিহাসে ও  বিশ্ব রাজনীতিতে এক বড় ভূমিকম্প। তিনিই আধুনিক যুগে প্রথমবারের মত ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা সংস্কৃতির কর্তৃত্ব ও আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।  খোদাবিমুখ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কথিত পরাশক্তিগুলোর আধিপত্যকে অবজ্ঞা করে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামকে তুলে ধরেছেন সমসাময়িক যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও চ্যালেঞ্জিং শক্তি হিসেবে। বিশেষ করে তাঁর নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ইরানি জাতির প্রবল চপেটাঘাত বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী শক্তি-বলয় তথা ইবলিসি শক্তিগুলোর একাধিপত্যকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী শক্তির এমন প্রবল উত্থান এবং ইসলামের গৌরবময় পতাকার এত উচ্চতর অবস্থান আর কখনও ঘটেনি। 

" ইসলাম ধর্ম মেনেই স্বাধীনতা অর্জন" ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবের আন্তর্জাতিক বার্তা। অথচ সমাজবাদী ও লিবারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার কর্তৃত্বাধীন আধুনিক বিশ্ব-ব্যবস্থায় ধর্মীয় আইন-ভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থার কথা কেউ কল্পনাও করেনি। 

প্রখ্যাত ব্রিটিশ সমাজ বিজ্ঞানী এন্টোনি গিডেনস বলেছেন," কার্ল মার্কস, দুরখিইম ও ভেবেরের মত বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানীরা বলতেন, মানব জীবন থেকে ধর্ম আস্তে আস্তে বাদ পড়ে যাচ্ছে এবং সেকুলারিযম বা ধর্মহীনতা ধর্মের যায়গাটি দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু আশির দশকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর আমরা ঐসব চিন্তাবিদের ভবিষ্যদ্বাণীর বিপরীত স্রোতধারা লক্ষ্য করেছি।

দৈনিক লিবারেশন পত্রিকার সাংবাদিক মিসেস ক্লার বেরির বলেন, ইরানের আন্দোলনের নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র যুক্তি আছে। আমি উপলব্ধি করছি যে এই আন্দোলনের একটা লক্ষ্য আছে,যাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগামী একটি মানুষের পদক্ষেপের সাথে তুলনা করা যায়। ইরানীরা একাত্ম হয়ে মিছিল করে। তারা ব্যাপক পরিশ্রমী। তারা ক্লান্তও হয় আবার নতুন করে প্রশ্বাস নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করে। 

রুশ লেখক নিকোলা মিশিন ইমাম খোমেনী (রহ) সম্পর্কে তাঁর বইতে লিখেছেন-ইরানের ইসলামী বিপ্লব মানুষের অন্তর কেড়ে নিয়েছে। ইমাম খোমেনী (রহ) এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের মূল্য ছিল এই যে, তিনি মার্কিন বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদকে উপেক্ষা করে বলেছেন-আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ রয়েছে, সেটা হল কুরআনের মূল্যবোধ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে পশ্চিমা গণতন্ত্রের চেয়ে ইসলামী গণতন্ত্র অনেক বেশি পরিপূর্ণ। বিশ্ববাসীকে তিনি বুঝিয়েছেন,মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হল আল-কুরআন। এই কুরআন যার সাথে থাকে সে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
আসলে বস্তুতন্ত্রের নাগপাশে আবদ্ধ পৃথিবীতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ঔজ্জ্বল্য ছিল বিস্ময়কর একটি ঘটনা। বিপ্লব বিজয়ের ঘটনাকে ইমাম খোমেনী (রহ) মোজেযা বলে অভিহিত করে নিকোলা মিশিন বলেছেন-সমাজে একটা আত্মিক পরিবর্তন এসেছে। আমি এটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মোজেযা ছাড়া অন্য কোনো নামে অভিহিত করতে পারছি না।

বিশ্বব্যাপী বিপ্লব বিষয়ক গবেষক এবং সমাজ বিজ্ঞানী মিসেস স্কচপোল তেদা বলেছেন,বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলন এবং শাহের পতন ছিল একটা আকস্মিক বিস্ময়। শাহের মিত্রদের থেকে শুরু করে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সমাজ বিজ্ঞানী-সবাই বিপ্লবের ঘটনাকে অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার বলে মত দিয়েছেন।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনী (র.) ছিলেন প্রজ্ঞাবান, সাহসী ও অকুতোভয়। এ ছিল এই বিপ্লবের এক বিরল সৌভাগ্য। নবী-বংশের রক্তধারী এই ইমাম ছিলেন সময়ের গতি-প্রকৃতি অনুধাবনে সক্ষম। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা ও আকুতি ইসলামী জাগরণকে করেছে বেগবান। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই ইরানি জাতি পরাশক্তিগুলোর প্রভাব এবং অবসাদ ও হতাশার মত শয়তানী শক্তিগুলোকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। ইমাম ছিলেন দ্বিধাহীন ও নিঃশঙ্ক আত্মত্যাগের  এক প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ইমাম খোমেনী (র.)’র ব্যাপক দূরদৃষ্টি ও ইস্পাত-কঠিন খোদায়ী সংকল্প তাঁকে দিয়েছে কিংবদন্তীতুল্য জনপ্রিয়তা। কেবল তাঁর নামই কিংবা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথায় টগবগ করে উঠত বিপ্লবী জনতার রক্ত এবং হৃদয়।  আর এই সব কিছুরই প্রধান কারণ হল ইমাম তাঁর কর্মতৎপরতা, কর্মকৌশল ও আচার-আচরণে বিশ্বনবী (সা.)'র  প্রকৃত সুন্নাত অনুসরণ করেছেন এবং খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছিলেন ইরানের আলেম সমাজ ও জনগণকে।

মরহুম ইমাম খোমেনী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক চিন্তাধারা বা মতাদর্শের মোকাবেলায় ইরানের মুসলিম সমাজে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র আদর্শকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। ইমামের খোদাভীতি ও একনিষ্ঠতাও ছিল বিশ্বনবী (সা.)’র নুরানি আদর্শের প্রতিফলন।  ফলে তাঁর দিক-নির্দেশনার সুবাদে ঈমান ও আধ্যাত্মিকতার প্রেরণায় ইরানি জাতি এতটা উজ্জীবিত হয়েছিল যে তাদের সব স্তরে, বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে জিহাদ ও শাহাদতের সংস্কৃতির বিস্ময়কর প্রভাব বিশ্ববাসীকে অভিভূত করে। 

ইরানের ঐতিহ্যবাহী আলেমরা সুপ্রাচীন কাল থেকেই জনগণের বাস্তব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতেন ও জনগণকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতেন। 

 অবশ্য ইমাম খোমেনী (র.) যোগ্যতা ও অবদানের দিক থেকে সমসাময়িক যুগের সব মুজতাহিদকে ছাড়িয়ে গেছেন, যদিও অতীতের মুজতাহিদদের সংগ্রাম বা আন্দোলনগুলো চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ইমামের নেতৃত্বে। এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হামিদ আলগার বলেছেন:
"আয়াতুল্লাহ খোমেনী (র.)'র কাছে যাওয়ার সুযোগ যাদের হয়েছে তারা জানেন যে তিনি মানবাদর্শের এক মূর্ত প্রতীক। তিনি কেবল নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতার এক অপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানে এরূপ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি প্রচলিত মারজা-ই-তাকলিদের তথা অনুসরণযোগ্য ধর্মীয় নেতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। .....একজন মুসলমানকে দেখতে হবে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বের ধরণের প্রতি যার মাধ্যমে তিনি বিপ্লবে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গতি দান করেছেন। ….. …এটা এখন উল্লেখযোগ্য এক দৃষ্টান্ত যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিপ্লব পরিচালনায় তিনি যে অবদান রেখেছেন তা সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে অতুলনীয় এবং সে ভূমিকা পণ্ডিত, দার্শনিক ও আধ্যাত্মবাদী হিসেবে তার পরিচিতিকে ছাড়িয়ে গেছে। 

'আধুনিক যুগে অনেকে মনে করেন, দর্শন ও আধ্যাত্মবাদ বাস্তবতা-বহির্ভূত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকায় অপ্রযোজ্য এবং তা এমনি এক অবাস্তব জিনিস যার সাথে মুসলিম ও ইসলামী বিশ্বের বিরাজমান সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। আয়াতুল্লাহ খোমেনী এ ধারণার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত উদাহরণ। তাঁর কাজ এ দুটি ধারণার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছে। তিনি যে বিপ্লব করেছেন তা শুধু যে রাজনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাপার ছিল তা নয়, আধ্যাত্মবাদের এক অন্তর্নিহিত শক্তির মাধ্যমেও তা নিখুঁতভাবে পরিচালিত হয়েছে। ...  .... ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরে আসলেন। কিন্তু তিনি সাথে করে কোনো সম্পদ নিয়ে এলেন না। কোনো রাজনৈতিক দলও তিনি গঠন করেননি। কোনো গেরিলা যুদ্ধও পরিচালনা করেননি। কোনো বিদেশী শক্তির সাহায্যও তিনি নিলেন না। অথচ এর মধ্যেই তিনি ইসলামী আন্দোলনের তর্কাতীত নেতৃত্বে সমাসীন হন। " হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র নেতৃত্বে সংঘটিত মহান কারবালা বিপ্লবের অনন্য আত্মত্যাগের দর্শন ও শিক্ষার পুনরুজ্জীবন ইমাম খোমেনীর সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ফলে পাশ্চাত্যের শিক্ষিত মহলে ও যুব সমাজের মধ্যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে। ফলে পশ্চিমা ও ইহুদিবাদী মহল ঘটায় ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা যাতে ইসলামকে সহিংসতার ধর্ম বলে তুলে ধরা যায়। এ ছাড়াও  একই উদ্দেশ্যে পশ্চিমাদের মদদে গড়ে তোলা হয় ইসলামের নামে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। কিন্তু ইসলামের প্রতি পশ্চিমা যুব সমাজের আকর্ষণ দিনকে দিন বাড়ছেই। এক্ষেত্রে পশ্চিমা যুব সমাজকে চিন্তার সঠিক নির্দেশনা দিতে গিয়ে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন: 

"সাম্রাজ্যবাদীদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদেরকে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে দিও না, ..... তোমরা কি কখনো নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছো, দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক সভ্যতাকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছে কোন্ আদর্শের উপর ভিত্তি করে? কিভাবে ‌এই মহান ধর্ম বিশিষ্ট সব বৈজ্ঞানিক ও চিন্তাবিদের উত্থান ঘটিয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে?" 

সামরিক শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রেও ইসলামী ইরান আজ আলোচনার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। ইরান নিজের তৈরি একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে মহাকাশে। মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় ইরাকে ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সুলায়মানির হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান যে নিখুঁত মানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তাতে ভবিষ্যতে  বিশ্বের কোনো পরাশক্তিই ইরানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ানোর কথা হয়ত চিন্তাও করতে চাইবে না। ইরান আজ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের শহরগুলোতে একজন যুবতীও গভীর রাতে চলাফেরা করতে পারেন নিরাপদে। ইরানের আশপাশের নানা রাষ্ট্রে বিদেশী মদদে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস এবং জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়মিত বিষয় হয়ে থাকলেও ইসলামী এই রাষ্ট্রে এসব নেই বললেই চলে।

বিশ্বের সবচেয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির অধিকারী হল ইরান। যখনই কোনো মুসলিম বা অমুসলিম দেশ সাম্রাজ্যবাদের হামলার শিকার হয়েছে তখনই ইসলামী ইরান তার প্রতিবাদ করেছে।

ইরানই বিশ্বের একমাত্র ইসলামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও এর স্থপতি মরহুম ইমাম খোমেনী দেশটির শাসন ব্যবস্থা ইসলামী প্রজাতন্ত্র-ভিত্তিক হবে কিনা এবং নতুন সংবিধানের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে কিনা তা গণভোটের মাধ্যমে যাচাই করে নিয়েছিলেন। ইরানের ভোটারদের ৯৮ শতাংশই ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ও সংবিধানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।  এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থা বা ইসলামী শাসনও জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না জনগণের ওপর। 

১৯৮৭ সালেই ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একটি দীর্ঘ-মেয়াদি প্রস্তাব দিয়েছিল। ইরান বিশ্ব-শান্তির জন্য জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি প্রস্তাব দিয়েছে: প্রথমতঃ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য গড়া ও দ্বিতীয়তঃ বিশ্ব থেকে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূল করা। এ ছাড়াও ইরান প্রকৃত ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণে একটি গণভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল গায়ের জোরে ফিলিস্তিনকে দখলে রাখতে চায় বলেই ইরান প্রতিরোধ সংগ্রামীদের সহায়তা দিতে বাধ্য হচ্ছে। 

ইসলামী বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে আবারও অজস্র শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই বিশেষ আলোচনা। #

পার্সটুডে/এমএএএইচ/১১