গত তিন আসরে আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে তিনজন শহীদ ইরানি কমান্ডারের খোদাভীরুতা ও পরহেজগারি নিয়ে আলোচনা করেছি। আগ্রাসী ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরানি শিবিরগুলোতে যে আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করত তার উদারহণ দিতে গিয়ে আমরা শহীদ আব্বাস বাবায়ি, শহীদ মোহাম্মাদ বোরুজেরদি ওরফে মাসিহ কুর্দিস্তান এবং শহীদ সাইয়্যেদ হোসেইন আলামুল হুদার জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেছি।
১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়া পর ইরানি জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী হয় এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার প্রসার ঘটে। তবে যুদ্ধের ময়দানে ইরানি যোদ্ধাদের মধ্যে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের যে অভাবনীয় বিকাশ দেখা গিয়েছিল সেটা শুধুমাত্র বিপ্লব পরবর্তী ওই পরিবেশের কারণে হয়নি।
ইরানি জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। ইরানের তরুণ ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস অত্যন্ত গভীর ছিল বলেই তারা স্বৈরাচারী শাহ সরকার উৎখাতের আন্দোলনে একজন আলেমকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর মতো একজন আধ্যাত্মিক নেতার নেতৃত্বে ইরানি জনগণ এদেশের মাটি থেকে আড়াই হাজার বছরের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা উৎখাত করেছিল।
প্রকৃতপক্ষে ইরাক-ইরান যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারণে যে বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে তা ছিল ইরানি যোদ্ধাদের গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস। পরকালকে সামনে রেখে পার্থিব জীবনকে সাজিয়ে নেয়ার নামই ধর্মীয় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী একজন মানুষ পৃথিবীর কোনো ঘটনাকেই পরকালের সঙ্গে সম্পর্কহীন মনে করেন না বরং তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন পৃথিবীতে তিনি যা কিছু করেন তার প্রতিটি কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে।
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুধু যে তৎকালীন পরাশক্তিগুলো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোই ইরাকের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাই নয় সেইসঙ্গে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসি এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যামের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও সাদ্দাম সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল।
গত কয়েক আসরে আমরা ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরানি শিবিরের আধ্যাত্মিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেছি। ইরানি যোদ্ধাদের যদি আধ্যাত্মিক জগতে এত উন্নতি না থাকত এবং আত্মিক দিক দিয়ে তারা যদি শক্তিশালী না হতো তাহলে ওই যুদ্ধের পরিণতি অন্যরকম হতে পারত। কারণ, সেনাসংখ্যা এবং সমরাস্ত্রের দিক দিয়ে ইরাকের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে ইরানের কোনো তুলনা ছিল না।
ইরাকের সাদ্দাম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরানের সেনা শিবিরগুলোতে সব সময় আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করত। এই পরিবেশ থেকে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল তা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী আন্দোলনকারী দেশগুলোর আদর্শে পরিণত হয়েছে।
আজ আমরা যুদ্ধের ময়দানে ইরান শিবিরের আধ্যাত্মিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলব।
কারবালায় শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের চেহলাম-বার্ষিকী সম্প্রতি পালিত হয়েছে। আরবাইন পালন করতে এই পবিত্র শহরে সমবেত হয়েছিলেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ শোকার্ত মুসলমান।
আজ আমরা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে ইমামের সামরিক দক্ষতা ও আধ্যাত্মিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।