বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমছে, কমছে না বনার্তদের দুর্ভোগ
সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
বন্যার পানি কমায় জেলা ও উপজেলা শহরের বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও গ্রামের মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রামীণ সড়কগুলি এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রামে বাড়িঘর থেকে পানি না কমায় নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরতে পারছে না অনেকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজন বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। রোববার সকাল পর্যন্ত মহানগর এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করেছিল।
আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র খাবার, বিশুদ্ধ পানি, আসবাবপত্র, ঘর মেরামতের সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার সংকটের পাশাপাশি অনেকেই ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। জেলার ১১ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়ে ২৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। ঘর-বাড়িতে পানি উঠায় জেলার ৪৫৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। এক সপ্তাহ পরও বেশির ভাগ বসতঘরে এখন পানি রয়ে গেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ দেয়ার কথা বলা হলেও বেসরকারি এবং বিভিন্ন সংগঠনের ত্রাণ ও সহযোগিতা বেশি পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বন্যায় মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, বন্যাদুর্গতরা কেউ না খেয়ে নেই। প্রতিদিন ৪৪ হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬৭৫ টন চাল ও ১২ হাজার বস্তা শুকনো খাবার এবং নগদ ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যার কারণে হবিগঞ্জে ছয়টি উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রামে আট দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের মুক্তাহার গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাত হলে অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। বর্ষার সময় নৌকায় করে ডাকাত হানা দেয়। ডাকাতির আশঙ্কায় রাতে গ্রামবাসীকে পালাক্রমে পাহারা দিতে হয়।
নেত্রকোনা জেলায় বন্যায় ১০টি উপজেলায় বন্যায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলা। এ পাঁচটি উপজেলায় এখনো পানিবন্দী তিন লক্ষাধিক মানুষ। পানি কমায় এরই মধ্যে কোনো কোনো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরেছে। তবে বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি না নামায় ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক পরিবার বাড়িতে ফিরতে পারছে না। নেত্রকোনায় ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় সোয়া লাখ মানুষ অবস্থান করছেন।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার সকাল থেকে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, ‘নদ-নদীর পানি কমছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে নদীর কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করছি, অন্য নদীগুলোতেও বিপদসীমার নিচে পানি নেমে আসবে।’
নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।