মে ০৬, ২০২৩ ১৭:১৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে আবারো বেড়েছে শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা। গেল কয়েক মাসে চট্টগ্রামে একের পর এক শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইপিজেড এলাকায় শিশু আয়াতকে হত্যার পর ছয় টুকরো করে খালে ফেলে দেওয়া এবং জামালখান এলাকায় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই পাহাড়তলীতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

২১ মার্চের ঐ ঘটনার দেড় মাসের মাথায় নগরীর চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা এলাকার নির্মাণাধীন ভবন থেকে রহিম নামে ১১ বছর বয়সি এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল।

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায়ও বেড়েছে শিশু অপহরণের ঘটনা। সংঘব্ধ বেশ কয়েকটি চক্র ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের টার্গেট করে অপহরণ করছে। এমনই একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল। ডিএমপির উত্তরা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম জানান, এই অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সামনে ঘোরাফেরা করে। তাদের টার্গেট আট থেকে ১৬ বছরের শিশু। যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তবে বাবা কিংবা মায়ের মোবাইল নাম্বার মুখস্থ। কিছু সময় শিশুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে ওই শিশুর পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়। এভাবে গত ৫/৬ বছরে অন্তত আড়াই থেকে তিনশ’ শিশুকে অপহরণ করে কৌশলে মুক্তিপণ আদায়ের পর আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

কোমলমতি শিশুদের টার্গেট করে এই অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষনে দেখা গেছে বড়রা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিষ্পাপ শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। অনেক সময় মুক্তিপণ না পেলে এসব শিশু হত্যার শিকার হচ্ছে। শুধু হত্যা নয় নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাও অহরহ। এভাবে বড়দের লোভ-দ্বন্দ্ব, স্বার্থ ও জেদের কারণে জন্মের পরপরই অনেক শিশুদের জীবনের গতি থেমে যাচ্ছে। অঙ্কুরেই নিভে যাচ্ছে তাদের জীবন প্রদীপ। শেষ হচ্ছে একটি স্বপ্নের।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদকতা, নৈতিক অবক্ষয়, পরকীয়া, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি ও পারিবারিক বিশৃঙ্খল জীবনে শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধবিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, সামাজিক, পারিবারিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে শিশুর প্রতি নৃশংসতার মাত্রা বাড়ছে। শিশুদের প্রতি প্রতিহিংসার জন্য আকাশ সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া সমাজ ও পরিবারের মধ্যে স্বার্থপরতা বাড়ছে। অনৈতিক ও আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। এসবের কারণে শিশুরা অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের নৈতিকতার জায়গাও দুর্বল হয়েছে। পরিবারে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার বন্ধন নড়বড়ে। দায়িত্ববান হওয়ার চেয়ে দায়িত্বহীন হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তিনি বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় যে আইন আছে তার প্রয়োগও কম। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। #

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৬

ট্যাগ