আবরার দেশপ্রেমের প্রতীক, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এখন ‘সান্তনা ভবন’: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আধিপত্যবাদী অপশক্তি ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের আন্দোলনের মূর্তপ্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদ। আবরার বর্তমান দুরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরই নয়, শহীদ আবরার এখন দেশপ্রেমের প্রতীক।
আজ (শুক্রবার) নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়, আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা-চেতনায় যে পচন ধরেছে, আবরার হত্যা তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই ছিল আবরার ফাহাদের অপরাধ। আবরার বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বলায়, এ দেশীয় তাঁবেদাররা তাকে সহ্য করতে পারেননি। আর পারেননি বলেই আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করে আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের বিরোধী গোষ্ঠীকে তারা একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, আবরারের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। তবে তার মৃত্যু দেশপ্রেমিক জনগণকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, আর তা হলো- সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান আওয়ামী জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। আর এই বার্তা থেকেই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ আবরার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।’
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এখন সান্তনা ভবন। তিনি প্রায়শই তার নিজের স্বজন হারানোর কথা বলে কাঁদেন। স্বজন হারানোর সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এই অবৈধ সরকারের লোকজনের দ্বারা কোনো হত্যাকাণ্ডের পর যখন আর সামাল দিতে পারে না, তখন তারা নাটক তৈরি করে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার অনুগত প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালায়। হত্যার শিকার হতভাগ্যের পিতা-মাতা বা স্বজনদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনার নামে প্রহসনের নাটক তৈরি করা হয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শান্তির গ্যারান্টি দেন বটে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবিরের কর্মী সন্দেহে হত্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে। একইভাবে শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য তার পিতা-মাতাকে ডেকে নেয়া হয় গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ইতোপূর্বে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদেরও গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনা দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও ইলিয়াস আলীর পরিবার তার সন্ধান পায়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মা-বাবাও গণভবনের আশ্বাস পেয়েছিলেন। বিশ্বজিৎ এর মা-বাবা, নুসরাতের মা-বাবা, তনুর বাবাকেও গণভবনে ডেকে নিয়ে বিচারের গ্যারান্টি ও সান্তনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সব মামলার কি পরিণতি হয়েছে দেশবাসী তা জানেন। এদেশের জনগণ এই গণভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘সান্তনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। ডাক্তারের ‘সরি’ শব্দটি যেমন রোগীর স্বজনের কাছে চরম ভয়ংকর, গণভবনের ‘সান্তনা’ শব্দটিও স্বজনহারাদের কাছে তেমনই ভয়ংকর! সান্তনার নামে গণভবনের এই প্রহসন যেন দেশবাসীকে আর দেখতে না হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় একটি বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন রুহুল কবির রিজভী। আর পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আবদুর রহিম।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।