ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ১৬, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর শোক
বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে তিন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে নয়জন ঘটনাস্থলে, সদর হাসপাতালে তিনজন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালে একজন মারা যান।
প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর শোক
ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে আলাদা শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দুর্ঘটনায় আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটে
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যালম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার জামাল বলেন, ‘উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেন দুটির এই স্টেশনে ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের অভিমুখে প্রধান লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে তখন প্রবেশ করছিল। আর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে মন্দবাগ রেলস্টেশনে থামার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। উদয়নের অনেকগুলো বগিই তখন ১ নম্বর লাইনে চলে এসেছিল। এ সময় সিগন্যাল অমান্য করে তূর্ণা নিশীথা স্টেশনে না থেমে প্রধান লাইন বরাবর এগোতে থাকে। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের শেষদিকের কয়েকটি বগির ওপর তূর্ণা নিশীথার কয়েকটি বগি উঠে যায়। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের অন্তত তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়।’
দুর্ঘটনার পর পরই মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ ছুটে আসেন। তাঁরা প্রথমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। যদিও সকালের দিকে স্টেশন এলাকায় হাজার হাজার মানুষের জটলা তৈরি হয়। এতে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। পরে হতাহতদের উদ্ধারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া ও কসবা থেকে ফার্য়ার সাভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন পৌঁছেছে। তারা দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সংঘর্ষের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালকসহ ৩ জন বরখাস্ত
চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেমের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক, সহকারী চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ তথ্য জানান।
নিহতদের প্রত্যেক পরিবার পাবে ১ লাখ টাকা: রেলমন্ত্রী
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এছাড়া আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন মন্ত্রী।এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল সচিব মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ তথ্য জানান। রেল সচিব বলেন, রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি ও জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২