রোহিঙ্গা গণহত্যা: সেনাবাহিনীর পক্ষে সূ চির সাফাই এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আজ বুধবার নেদারল্যান্ডস-এর রাজধানী দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) হাজির হয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট অং সান সু চি তার দেশের সেনাবাহীনির সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, একদা মিয়ানমারের সেনাবাহীনীর দ্বারা নিগৃহীত শান্তিতে নেবেল বিজয়ী অং সান সু চি আইসিজে আদালতে বলেছেন, তাঁর দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। সূচী যুক্তি দেখান গণহত্যা সংক্রান্ত ১৯৪৮-এর আন্তর্জাতিক সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়।
আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে সু চি সাম্প্রতিক রাখাইনের ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করেন। কয়েক শ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে বক্তব্য দিলেও তিনি বলেন যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচারব্যবস্থা এ নিয়ে কাজ করছে।
এ দিকে, রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের উপরে গণহত্যা চালিয়েছে। যার উদ্দেশ্য ছিল একটি জাতিকে নির্মূল করে দেয়া। তবে এটি ঠেকাতে বা পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে সুচি। তিনি নিজেও সেনাবাহীর হাতে দীর্ঘসময় নিগৃহীত হয়েছেন; এখন তিনি আবার মিয়ানমানের সেবাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন এটা দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতকে নেপথ্যে সহায়তা করছে কিন্তু তারা চায় দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা যাবে।
এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের অপরাধ চিহ্নিত হবে এবং তাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার বিচার হবে। তারপরই তারা ন্যায্য অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে।
অপরদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বাহীনির প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাফিনুল ইসলাম আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মিয়ানমার সংলগ্ন সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ
উল্লেখ্য গতকাল মঙ্গলবার আইসিজেতে ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহীনির বিরুদ্ধে আনীত গনহত্যার অভিযোগের প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উপস্থিতিতে অভিযোগকারী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মানবতাবিরোধী নৃশংসতার অভিযোগগুলোর সারাংশ তুলে ধরেন।
গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী তামবাদু বলেন,‘আমরা চাই আইসিজে মিয়ানমারকে বলুক যে এখনই রোহিঙ্গা শিশুদের হত্যা বন্ধ করতে হবে, নৃশংসতার অবসান ঘটাতে হবে।’ বিশ্ববিবেকের কালিমা মোচনে আর দেরি করা চলে না। একমাত্র এই আদালতই মিয়ানমানরের রাখাইন আঞ্চলে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে
গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে গণহত্যার উদ্দেশ্য, গণহত্যার কার্যক্রম, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পটভূমি, আদালতের এখতিয়ার এবং অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেগুলো তুলে ধরেন আরও সাত আইন বিশেষজ্ঞ।
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ রাখা, গণহত্যার কোনো আলামত নষ্ট না করা, জাতিসংঘের তদন্তকারীসহ অন্যদের আরাকানে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অবাধে প্রবেশাধিকার দেওয়া।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।