‘অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে তবে, মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়’
-
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত চার দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব এখন বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে বসবাস করতে গিয়ে, অন্যদের সাথে যোগাযোগে, ব্যবসায় এবং তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আমাদের অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। তবে, মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।’
আজ (শুক্রবার) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত চার দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে না পারা তরুণ সমাজের একটি অংশের কঠোর সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যারা বাংলা ভাষা ভুলে গিয়ে বাংলা ভাষার মতো বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজি অ্যাকসেন্টে কথা বলে, তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।”
বাঙালির জীবন থেকে বাংলা বাদ দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি ছিল সমগ্র জাতির অস্তিত্বের ওপর আঘাত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই আন্দোলনের (ভাষা আন্দোলন) ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এটিই বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করতে চান। যেখানে প্রাথমিকভাবে তহবিলের যোগান দেবে সরকার। তিনি বলেন, ‘সরকারের দেয়া তহবিল থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষা শেখার জন্য শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ দেবে।’
ভাষা শেখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এখানে কোন ভাষা শেখানো হবে সে ব্যাপারে ইনস্টিটিউট সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি এ সময় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে সমগ্র জাতির মতো তাঁদের ব্যক্তি জীবনের দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে জানান, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আসতে না পারায় তাঁদের ছেলে-মেয়েদের বিদেশে থেকে বিদেশের স্কুলে পড়তে হলেও তাঁরা দুই বোন ( শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) সবসময় চেষ্টা করেছেন তাঁদের ছেলে মেয়েরা যেন সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা সবসময়ই ছেলে-মেয়েদের বাংলা শেখাবার চেষ্টা করেছি এবং ঘরে বাংলায় কথা বলেছি। কারণ বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে।’
নিজেও ভালভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ভাষা মিলিয়েই কথা বলে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছোটবেলায় ঢাকায় চলে এসেছি সেই ভাষার একটা প্রভাব, আর টুঙ্গীপাড়ায় জন্মেছি তাঁর একটা প্রভাব-সব মিলিয়েই বলি, যার মধ্যে কোন লজ্জা নেই।’
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং মিশন প্রধানসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, একুশে পদক বিজয়ী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।