করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উৎপাদনের অনুমতি পেল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট উদ্ভাবন করেছে, তা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটি তৈরি কাঁচামাল ব্রিটেন থেকে আসতে সাতদিনের মতো সময় লাগবে। কাঁচামাল এলেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফরহাদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে দাবি করা হয়, স্বল্পমূল্যের ওই কিট দিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত করা সম্ভব।
একইদিন করোনা শনাক্তে উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতির জন্য উপকরণ (রিএজেন্ট) আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সই করা এক চিঠির মাধ্যমে এ অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে করোনা শনাক্তে গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে অনুমোদন দিল সরকার।
কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে রিএজেন্ট আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- উপকরণগুলো ব্যবহারের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না মর্মে সার্টিফিকেট দিতে হবে; যে ল্যাবে গবেষণা হবে সেখানে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষকে পরিদর্শনে অনুমতি দিতে হবে; রিএজেন্টগুলো শুধুমাত্র প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কাজে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া পদ্ধতিটির কার্যকরিতা প্রমাণের পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দেশের ল্যাব ও ক্লিনিকগুলোতে সরবরাহ করা যাবে।

গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাশেদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম হলো: র্যাপিড ডট ব্লট।
উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ‘ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয় এটা মোটামুটি সে রকমের একটি পদ্ধতি। ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ‘র্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবেলা করে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘মূলত ওটা কিট নয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে কোভিড-১৯ নামে যে রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে- সেটি শনাক্ত করার জন্য আমরা একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। এটি কিট নয়।’
তিনি বলেন, ‘কিট তো অনেক বড় ব্যাপার। একটা কিটের খরচ ৯/১০ হাজার টাকা। আর আমরা যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি, সেটার খরচ পড়বে ২০০ টাকা। যেকোনো প্যাথোলজিক্যাল ল্যাব বা হাসপাতালে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩০০ টাকা খরচে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা যাবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যে কিটের মাধ্যমে আইইডিসিআর কোভিড-১৯ শনাক্ত করছে, সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা চীনের সরবরাহ করা কিট। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং তা দিয়ে পরীক্ষার জন্যও প্রয়োজন উন্নত ল্যাবরেটরি। কিন্তু আমাদের এই পদ্ধতি অত্যন্ত সুলভ ও সহজলভ্য। এই পদ্ধতিতে দেশের যেকোনো হাসপাতালে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা যাবে। একটা জায়গায় ভিড় করতে হবে না। মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, সেটি দূর হবে।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন মিললে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ শনাক্ত করার কাজ শুরু করতে পারবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমাদের এই পদ্ধতি অন্যরাও ব্যবহার করতে পারবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এই কিটে ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। এর জন্য স্পুটাম নেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে সন্দেহজনক ব্যক্তির রক্তের নমুনা নেওয়া হবে। সেই রক্ত থেকে ‘সিরাম’ আলাদা করতে হবে। কিটে সেই সিরাম রেখে তার ওপর এন্টিজেনের বিক্রিয়া ঘটানো হবে। যদি বিক্রিয়া হয় তাহলে সন্দেহজনক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের প্রাথমিক উপস্থিতি রয়েছে বলে প্রমাণ হবে। বিক্রিয়া না করলে তিনি আক্রান্ত নন বলে বিবেচিত হবে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।