গণস্বাস্থ্যের কিট না নেয়ার কারণ সম্পর্কে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যা বলল
-
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান
বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা টেস্ট কিট উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। সরকার শুরু থেকে সহযোগিতা করছে, এখনো করতে প্রস্তুত।”
আজ (সোমবার) দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন তিনি। কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট সংক্রান্ত বিষয়ে অবস্থান সরকারের অবস্থান জানাতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো আবিষ্কারের বিষয়টি পরীক্ষা শেষেই যথাযথ অনুমোদন নিতে হয়। সেটি না করেই হন্তান্তর অনুষ্ঠান করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্যের হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি মূল কিটের ছিল না। সেটি ছিল পরীক্ষামূলক কিটের হস্তান্তর। কিট তৈরির পুরো প্রক্রিয়া শেষেই হস্তান্তরের অনুরোধ করা হয়েছিল।
তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোনো দেশেই করোনাভাইরাস পরীক্ষায় উদ্ভাবিত র্যাপিড কিট অনুমোদন দেয়নি বলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে ঘুষ দেয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ড. জাফরুল্লাহ'র বক্তব্য আপত্তিকর। অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, যদি অযাচিতভাবে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে তথা প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আমি প্রত্যাখ্যান করছি। আমি অনুরোধ করব, এ ধরনের অপপ্রচার যাতে না চালানো হয়।
ব্রিফিং এর শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস লি.-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গতকাল রোববার সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরে জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ কিটস পরীক্ষার বিষয়াদি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসনকে যেভাবে দোষারোপ করেছেন তা মিথ্যা ও উদ্যেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে গণস্বাস্থ্য তাদের দাবির ক্ষেত্রে কোন রকম প্রটোকল মেইনটেইন করেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাঁদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না রেখেই ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করেছেন।
শনিবার বিকেলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ওই সম্মেলনে সরকারের কোনো প্রতিনিধি যায়নি। এই কিট গ্রহণ করেনি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।
ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়া প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, গাইডলাইন না মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য। এ কারণে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি।
এদিকে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা শনাক্তকরণ কিট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে গতকাল পৌঁছে দেওয়া হলেও তা কেউ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট গ্রহণ করেনি সরকার। আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি-না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।"
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে যান। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ওষুধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি।"
ডাক্তার জাফরুল্লাহ দৃঢ়তার সাথে জানান, "মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত 'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র' গত ৪৮ বছরে কাউকে ঘুষ দেয়নি; দেবে না। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট (ব্যবহারযোগ্য হয়ে) আসুক আর না আসুক, কাউকে ঘুষ দেব না। কিন্তু লড়াই করে যাব।“#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।