বাংলাদেশে কাল থেকে ৭ দিনের লকডাউন শুরু, প্রজ্ঞাপনে ২১ বিধিনিষেধ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। সাত দিনের এই লকডাউনে কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
আজ (বুধবার) দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা ২১ দফা বিধিনিষেধের এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন) থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং শিল্প কারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। উন্মুক্ত স্থানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্য কেনাবেচা করা যাবে। এ ছাড়া শপিংমল, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেনা ও বিজিবি সদস্য মোতায়েনের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২১ দফা বিধিনিষেধ
১. সকল সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
২. সব ধরনের গণপরিবহন বাস, রেল, নৌ অভ্যন্তরীণ বিমানসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন বন্ধ থাকবে।
৩. শপিং মল/মার্কেটের সকল দোকান-পাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এমন ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে/ওয়ালিমা), জন্মদিন, পার্টি পিকনিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬. আদালতসমুহের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা যেমন কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্য শষ্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রান বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/ জ্বালানি ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমুহের নদী বন্দর, কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট, (সরকারি/বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরী অত্যাবশ্যক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্র্যাক, লড়ি এই সিদ্ধান্তের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
৯. পণ্য পরিবহণে নিয়োজিত ট্রাক/ লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো, ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১০. বন্দরসমুহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমুহ এর আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১১. শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খোলা থাকবে।
১২. কাঁচা বাজার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা স্থানে বসতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা বেচা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটি নিশ্চিত করবে।
১৩. অতি জরুরী প্রয়োজন (ওষুধ, চিকিৎসা, নিত্যপ্রয়োজনীয়, দাফন, সৎকার) ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। না মানলে আইনগত ব্যবস্থা।
১৪. ভ্যাকসিন কার্ড প্রদর্শন করে ভ্যাকসিন গ্রহণে বের হওয়া যাবে।
১৫. খাবারের দোকান হোটেল রেস্তোঁরা সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীরা তাদের বিমানের টিকেট দেখিয়ে গাড়ীতে যাতায়াত করতে পারবেন।
১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয় নির্দেশনা দেবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ অধিদফতর এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।
২০. জনপ্রশসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ নিশ্চিত করবে।
২১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
করোনাভাইরাসের সংকমণ রোধে এ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে তিন দিনের সীমিত বিধিনিষেধ চলমান যা বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকালে শেষ হতেই শুরু হচ্ছে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ। গত শনিবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে ‘সীমিত আকারের লকডাউন’ ও ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সভাপতিত্ব করেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।