অক্টোবর ০৬, ২০২১ ১২:৫১ Asia/Dhaka

মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে জরুরি উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। 

গত সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোকে তাদের প্রচেষ্টাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের ওপর সৃষ্ট নৃশংসতম অপরাধের দায়বদ্ধতা নিরূপণ করা অত্যন্ত জরুরি।’

রাবাব ফাতিমা আরও উল্লেখ করেন- নিজদেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা ক্রমে বেড়েই চলছে।

এদিকে, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা তৈরির জন্য মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র আসছে। অস্ত্র নিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মধ্য সংঘর্ষ হচ্ছে।

পুলিশ প্রশাসন বলছে, পর্যটননগরী কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ। এসব গ্রুপের তৎপরতা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। 

এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, কক্সবাজার ক্যাম্পে হুমকি ও সহিংসতার মুখোমুখি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন যে, সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর কথিত সদস্যরা চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে টার্গেট করছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের।

২০২১ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর, কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে (৪৬) অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে। তার সহযোগীরা জানিয়েছেন, মুহিবুল্লাহ বার বার শিবিরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকি সমন্ধে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাননি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, "মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন এমন রোহিঙ্গা কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সহায়তায় জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”

মুহিবুল্লাহ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা কর্মী এবং মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ নয় জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা বলেছেন যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মুহিবুল্লাহর উদ্বেগগুলি পর্যাপ্তভাবে তদন্ত করেনি বা তাকে এবং অন্যান্য দুর্বল কর্মীদের সুরক্ষা দেয়নি।

সশস্ত্র গোষ্ঠীর নতুন করে হুমকি এবং সহিংসতার অন্যান্য ঝুঁকির কারণে মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে অন্তত এক ডজন কর্মী জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সুরক্ষা চেয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীরা জানান, ক্যাম্পের ভেতরের পরিবেশ রোহিঙ্গা কর্মীদের জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, মুহিবুল্লাহর মৃত্যু শিবিরে নিরাপত্তাহীনতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ এবং মধ্যপন্থী নাগরিক সমাজের কণ্ঠ রোধ করার আপাত প্রচেষ্টা।

ইউএনএইচসিআর মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, "এটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা পরিষেবাগুলিতে সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে পারে তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পগুলিতে তার কর্মীদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে।" তবে মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ কর্মীরা জানান, তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয়া হয়নি।

কিছু শরণার্থী অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী এবং শিবির কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর হুমকির আওতাধীন বলে মনে হচ্ছে। একজন কর্মী বলেন, "যখন আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আরসার অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ করি, তখন তারা কোনো মনোযোগ দেয় না।"

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দেরি করবে, খুনসহ নানা রকম সমস্যা তত বাড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে মিয়ানমার সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করে এ সমস্যার সমাধান করা।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ