আটক ২, গঠন করা হয়েছে চারটি স্পেশাল টিম
মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক আততায়ীর গুলিতে নিহত
ভারতের রাজনৈতিক দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক (৬৬) দশেরার বাজি ফাটানোর সময় আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গুলি করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে।
মুম্বাই পুলিশ কমিশনার বিবেক ফাঁসালকারের বরাতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, ‘অভিযুক্ত দুই বন্দুকধারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটকদের একজন উত্তর প্রদেশ ও দ্বিতীয়জন হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। তৃতীয় ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।’
এখনও পর্যন্ত কোনও দলই এই হত্যার দায়স্বীকার করেনি। কিন্তু অভিযুক্তদের দাবি- তারা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। পুলিশ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপির প্রধান অজিত পাওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় উল্লেখ বলে করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এমন এক ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে আমি হতবাক। আমি একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা এমন একজন নেতাকে হারিয়েছি, যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। এ হামলা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে।’
সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রায় পাঁচ দশক যুক্ত ছিলেন। যুব কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে মত নির্বিশেষে ভারতের প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিরোধী দলের নেতারা মহারাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এনসিপির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফুল প্যাটেল বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
কংগ্রেস ত্যাগী বিজেপি নেতা অশোক চ্যাভান বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুর খবর আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পুরোনো দলে (কংগ্রেস) থাকাকালে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।’
কংগ্রেসের নেতা রমেশ চেন্নিথালা এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। যুব কংগ্রেস করার সময় থেকেই আমরা বন্ধু।’
এনসিপির (এসপি) নেতা শারদ পাওয়ার বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্রে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা উদ্বেগজনক।’
মহারাষ্ট্রের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনসিপি (এসপি) নেতা অনিল দেশমুখের পাশাপাশি রাজ্যটির বর্তমান বিধানসভার কংগ্রেসের বিরোধী দলীয় নেতা বিজয় ওয়াডেত্তিওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের জন্য একনাথ শিন্ডে সরকারের নিন্দা করেছেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাওয়া একজন নেতাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করাটা ভয়ংকর।
৬৬ বছরের বাবা সিদ্দিকি গত ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস ছেড়ে অজিত পওয়ারের এনসিপি শিবিরের হাত ধরেন। শুধু রাজনৈতিক প্রভাবই নয়, প্রাক্তন এই কংগ্রেস নেতার ছিল বলিউড যোগও। বিনোদন জগতের মানুষদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিত্য ওঠাবসা। একসময় নিজেও ছিলেন অভিনয়ের দুনিয়ায়। বিভিন্ন সময়ে তাঁর দেওয়া জমকালো পার্টিতে অনেক তারকাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তাঁর পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমান খানের মধ্যে। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তাঁর ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।
কেন এভাবে বর্ষীয়ান নেতাকে খুন করা হল তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। গঠন করা হয়েছে চারটি স্পেশাল টিম। দুই ধৃতের অন্যতম কর্নেল সিং হরিয়ানার বাসিন্দা। অন্যজন ধরমরাজ কাশ্যপ উত্তরপ্রদেশে থাকেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৩