সাবেক গভর্নর ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে ঘুমিয়ে আছেন: অর্থ উপদেষ্টা
(last modified Sat, 16 Nov 2024 12:43:04 GMT )
নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ১৮:৪৩ Asia/Dhaka
  • ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
    ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, "সাবেক গভর্নর ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন। কারণ ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনোই কাজ হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন মহানন্দে ঘুমিয়ে আছেন।"

আজ (শনিবার) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সদ্য সাবেক গভর্নরের ওপর শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেন, "উইথ ডিউ রেসপেক্ট আমি বলতে চাই, সাবেক গভর্নর ৪২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে আসলেন। কারণ ছিল, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। কিন্তু কোনোই কাজ হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন মহানন্দে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানি না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পলিসিগত লিগ্যাসি বা নীতিগত দীর্ঘসূত্রিতা পেয়েছি। যার কারণে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেই দ্রুত করা যায় না।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে সালেহ উদ্দিন বলেন, "গত ১৫ বছরে যত কিছু হয়েছে তা তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জানত। গভর্নর যা কিছু করেছে তার সবকিছু সমর্থন করে না এমন কেউ কি ছিল না প্রতিবাদ করার মতো? সাহসের সাথে সত্য কথা বললে চাকরি যায় না। কারণ আমিও সরকারের চাপ থাকা সত্ত্বেও গভর্নর থাকাকালীন অবস্থায় ব্যাংকের অনুমোদন দেইনি। কিছু সমস্যাতে পড়তে হয়েছে। কিন্তু চাকরি যায়নি। তাই তোমাদের উদ্দেশে বলতে চাই সাহসের সাথে কাজ করবে।"

অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আরো বলেন, "সবাই বলছে এত কিছু করার পরও মূল্যস্ফীতি কেন কমছে না। এর প্রধান কারণ, আগের সরকারের ভুল নীতি। গত ১৫ বছরে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার স্বল্প মেয়াদি সংস্কার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রায় কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত পুরো অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আমরা একটি নতুন রাস্তা তৈরি করছি। পরবর্তীতে যারা আসবে তাদেরকে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হবে। তাহলেই শান্তি ফিরে আসবে। আর যদি পুনরায় দুর্নীতি শুরু করেন তাহলে জনগণ আবারো ফুঁসে উঠতে পারে।"

তথ্যগত বিশ্বস্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, "এতদিন বিবিএসসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য দিয়ে এসেছে সেগুলোতে প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তথ্য প্রবাহ সঠিক রাখতে। সঠিক তথ্য না আসলে অন্যান্য তথ্যগুলো ভুল আসবে। নীতিমালা প্রণয়ন ঠিক হবে না। এতদিন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না বলে এই সমস্যাগুলো হয়েছে। কোনো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেই সে বলে এই দুর্নীতি আমার আমলে ঘটেনি। আবার সে চলে গেলে পরের কর্মকর্তা এসেও একই উত্তর দেয়। এসব কারণেই একের পর এক দুর্নীতি ও অন্যায় হয়েছে, যার মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ।"

ফিজিবিলিটি টেস্ট না করেই অনেক প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "একটি প্রজেক্ট থেকে কত টাকা আয় হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, কত দিন সময় লাগবে এবং এসব প্রজেক্টে বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদের হার কী হবে, এসব বিষয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরই একটি সংস্থা আমাদেরকে উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চেয়েছিল। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ উচ্চ সুদের ঋণ নিলে আমরা পরিশোধ করতে পারব না।"

অর্থনীতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি অর্থনৈতিক ক্রাইসিস বা সংকট বলতে চাই না। ২০০৬ বা ২০০৭ সালে যেমনটা (অর্থনৈতিক সংকট) ছিল। এই পরিস্থিতিকে আমি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বলতে চাই। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভুলের কারণে এখন এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। এখান থেকে উত্তরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৬ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।