পাকিস্তান পক্ষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে: তালেবান
'বেলুচিস্তান সীমান্তে হামলা প্রতিহত করেছে পাকিস্তান, ১৫–২০ আফগান তালেবান নিহত'
-
চামান সেক্টরে আফগান তালেবানদের পোস্ট ধ্বংস করার ছবি প্রকাশ করে পিটিভি
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে, বেলুচিস্তান সীমান্তে আফগান তালেবানের এক হামলা প্রতিহত করেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ১৫ থেকে ২০ জন আফগান তালেবান নিহত হয়েছে।
আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, "আফগান তালেবান আজ (বুধবার) ভোরে স্পিন বোলদাক এলাকার চারটি স্থানে কাপুরুষোচিত হামলার চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানি বাহিনী কার্যকরভাবে হামলাটি প্রতিহত করেছে।”
আইএসপিআর জানায়, হামলা প্রতিহতের সময় ১৫ থেকে ২০ জন আফগান তালেবান নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তনশীল। 'ফিতনা-আল-খারেজ' (নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপির রাষ্ট্রীয় উপাধি) এবং আফগান তালেবানের অবস্থানে আরও সমাবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে।”
আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আফগান দিক থেকে হামলাটি দুই ভাগে বিভক্ত গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তার প্রতি কোনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি।”
আইএসপিআর জানায়, আফগান তালেবান তাদের দিকের পাক-আফগান ফ্রেন্ডশিপ গেট ধ্বংস করেছে, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে তারা পারস্পরিক বাণিজ্য ও সীমান্তের উপজাতিদের চলাচল সম্পর্কিত অধিকার সম্পর্কে কী মনোভাব পোষণ করে।
বেলুচিস্তানের ঘটনাটি 'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা' দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “১৪ ও ১৫ অক্টোবর রাতের মধ্যে আফগান তালেবান ও ফিতনা-আল-খারেজ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররম সেক্টরে পাকিস্তানি সীমান্ত চৌকিগুলোতে হামলার চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানি সেনারা এই হামলাও সফলভাবে প্রতিহত করে, ফলে আফগান পোস্টগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। আটটি পোস্ট, যার মধ্যে ছয়টি ট্যাঙ্কও ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর সুনির্দিষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পাল্টা আঘাতে ধ্বংস হয়। এতে ২৫ থেকে ৩০ জন আফগান তালেবান ও ফিতনা-আল-খারেজ যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
আইএসপিআর আরও জানায়, “হামলাটি পাকিস্তান শুরু করেছে- এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর- যেমন মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে পাকিস্তানি পোস্ট ও সরঞ্জাম দখলের ব্যাপারে। তালেবান সরকারের প্রচারণা সহজ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমেই ভেঙে দেওয়া যায়।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনের জবাব পূর্ণ শক্তিতে দেওয়া হবে।”
আফগান তালেবানের দাবি
আইএসপিআরের বিবৃতির আগে, "আফগান তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট দিয়ে জানান, বেলুচিস্তানের সীমান্তে সংঘর্ষে আফগান বাহিনী পাকিস্তানের হামলার জবাবে বাধ্য হয়ে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনীর 'হালকা ও ভারী অস্ত্র' ব্যবহারে ১২ জনের বেশি বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তান পক্ষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে পোস্ট দখল, অস্ত্র লুট ও হতাহত অন্তর্ভুক্ত।
নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
বেলুচিস্তানের ঘটনার পর, পিপিপির এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি আফগানিস্তান থেকে হওয়া সীমান্ত অতিক্রমকারী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আফগানিস্তান থেকে হওয়া হামলা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।” বিবৃতিতে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর 'সাহস ও পেশাদার দক্ষতা'র প্রশংসা করেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে আফগান তালেবান, ফিতনা-আল-খারেজ ও ফিতনা-আল-হিন্দুস্তানের (বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর রাষ্ট্রীয় নাম) উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কুররম সেক্টরে আফগান তালেবানের 'অযৌক্তিক আগ্রাসন' প্রতিহত করতে পাকিস্তান সেনারা 'দৃঢ় জবাব' দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতীয় অখণ্ডতা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা হবে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আফগান মাটির ব্যবহার নিন্দনীয়।”
আজকের বেলুচিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তৃতীয় বড় সংঘর্ষ। এর আগে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত, এবং সোমবার কুররম এলাকায় অনুরূপ সংঘর্ষ হয়েছিল। আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, আফগান তালেবানের হামলায় ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৫